মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লা : কোনো প্রাণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে কঠিন কবীরা গুনাহ ও হারাম । মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তির বেচাকেনা ইত্যাদি সকল বিষয় কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।
মূর্তিপূজার কথা তো বলাই বাহুল্য, মূর্তি নির্মাণেরও কিছু
কিছু পর্যায় এমন রয়েছে যা কুফরী। কেউ কেউ মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে বিধানগত পার্থক্য
দেখাতে চান। এটা চরম ভুল। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই পরিত্যাজ্য। কোরআন
মজীদ ও হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে যে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো মূর্তি ও ভাস্কর্য
দুটোকেই নির্দেশ করে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মাজীদের স্পষ্ট নির্দেশ : তোমরা পরিহার করো
অপবিত্র বস্তু অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন।’ (সূরা হজ্জ : ৩০)।
এই আয়াতে পরিষ্কারভাবে সব ধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করার এবং
মূর্তিকেন্দ্রিক সকল কর্মকান্ড বর্জন করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আরো লক্ষণীয় বিষয় এই যে,
উপরের আয়াতে সকল ধরনের মূর্তিকে রিজস শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে। রিজ্স অর্থ নোংরা ও অপবিত্র
বস্তু। বোঝা যাচ্ছে যে, মূর্তির সংশ্রব পরিহার করা পরিচ্ছন্ন ও পরিশীলিত রুচিবোধের
পরিচায়ক।
অন্য আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে এভাবে
: এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ
করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। (সূরা নূহ : ২৩)।
এখানে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে
: ১. মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা। ২. মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিহার না করা। তাহলে
মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কোরআন মাজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে
চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য।
উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তিগুলো সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে
আববাস রা. বলেন, এগুলো হচ্ছে নূহ আ.-এর সম্প্রদায়ের কিছু পুণ্যবান লোকের নাম। তারা
যখন মৃত্যুবরণ করেছে তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে এই কুমন্ত্রণা দিয়েছে যে, তাদের স্মৃতি
বিজড়িত স্থানগুলোতে মূর্তি স্থাপন করা হোক এবং তাদের নামে সেগুলোকে নামকরণ করা হোক।
লোকেরা এমনই করল। ওই প্রজন্ম যদিও এই সব মূর্তির পূজা করেনি কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকৃত
বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেল এবং পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পূজায় লিপ্ত হলো। (সহীহ বুখারী হাদীস
: ৪৯২০)।
কোরআন মাজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে: ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে
পথভ্রষ্ট করেছে! (সূরা ইবরাহীম : ৩৬)। অন্য আয়াতে এসেছে : আর তারা বলেছিল, তোমরা পরিত্যাগ
করো না তোমাদের উপাস্যদের এবং পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ সুওয়াকে, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে।
অথচ এগুলো অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। (সূরা নূহ : ২৩-২৪)।
কোরআন মাজীদে একটি বস্তুকে ভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত
করা হবে এরপর ইসলামী শরীয়তে তা বৈধ ও গ্রহণযোগ্য থাকবে-এর চেয়ে হাস্যকর কথা আর কী হতে
পারে। কোরআনের ভাষায় মূর্তি ও ভাস্কর্য হলো বহুবিধ মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা
তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর মিথ্যা। (সূরা
আনকাবুত : ১৭)। মূর্তি ও ভাস্কর্য যেহেতু অসংখ্য মিথ্যার উদ্ভব ও বিকাশের উৎস তাই উপরের
আয়াতে একে মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে,
মূর্তি ও ভাস্কর্য দুটোই সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য।
Post A Comment:
0 comments: