জনপ্রিয় অনলাইন : জার্মানদের বাংলাদেশের শাক-সবজির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বেশ বড়সড় এক খামার গড়েছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। জার্মানির অফেনবাখ শহরে মাইন নদীর তীরে অবস্থিত এই খামারে কচু, লাউ, কুমড়া, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ অনেকরকম শাক-সবজি পাওয়া যায়। তবে, খামারটিতে চাষ করতে হয় একটু ভিন্নভাবে, পরিবেশবান্ধব উপায়ে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
জার্মানির অফেনবাখ শহরের এক কোণায় গড়ে উঠেছে একটি সবুজ খামার। মাইন নদীর তীরে
অবস্থিত এই খামারে বাংলাদেশের শাক-সবজি চাষ করছেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি। খামারটি
কয়েক হাজার বর্গমিটার এলাকায় বিস্তৃত।
বাংলাদেশের শরিয়তপুরের বাসিন্দা শাহজাহান ভূঁইয়া জার্মানিতে পাড়ি জমান ১৯৯১
সালে। তিনি একজন শখের খামারি। নিজের দেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই
এখানে ফলান তিনি। ভূঁইয়া বলেন, ‘২০১৩ সালে আমি এই খামার শুরু করি। আমাদের কাছে সব ধরনের বাংলাদেশি শাক-সবজি
পাওয়া যায়। আমার খামারে ১৯ জাতের কাঁচামরিচ আছে, বোম্বাই মরিচ আছে, বেগুন আছে,
লাউ আছে, আছে ধুন্দল, বরবটি, লালশাক- এক কথায় বাংলাদেশে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যায়,
তার সবই আমার এখানে আছে।’
মূলত শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অফেনবাখের এই খামারটি গড়ে উঠেছে, নাম হাফেনগার্টেন।
স্থানীয় বাংলাদেশিরা শহর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখানে জমি ইজারা নিয়েছেন। শহরের
সৌন্দর্য বাড়াতে এখানে খামার গড়ার অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে শহরটিকে আরও
পরিচ্ছন্ন এবং সবুজ মনে হবে বলে আশা তাদের। তবে, এখানকার মাটিতে সরাসরি চাষাবাদ
করা যায় না।
শাহজাহান ভূঁইয়া এই বিষয়ে বলেন, ‘অফেনবাখ শহর কর্তৃপক্ষ আমাদের যখন চাষ করার জন্য জায়গা
দেয়, তখন বলে যে, এখানে সরাসরি এখানকার মাটিতে চাষাবাদ করা যাবে না। কেননা, এটা
শিল্পাঞ্চল ছিল, ফলে মাটি বিষাক্ত হতে পারে। তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা অন্য
স্থান থেকে মাটি এনে টবে করে এখানে চাষাবাদ করি। আগে বেশিরভাগই টবে লাগাতাম।
কিন্তু খেয়াল করলাম, কম মাটিতে গাছ ভালোভাবে বাড়ে না। এ কারণে এখন বড় টবের
পাশাপাশি কাঠ দিয়ে বড় বেডের মতো করে সেখানে গাছ লাগাচ্ছি। কারণ, মাটি বেশি হলে
ফলনও ভালো হয়।’
শীতপ্রধান দেশ জার্মানিতে সারা বছর চাষাবাদ করা ভূঁইয়ার পক্ষে সম্ভব হয় না।
তাই এই খামারে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি চাষাবাদ করেন। আবহাওয়া অনুকূলে
থাকলে বেশ দ্রুতই বিভিন্ন শাকসবজি ফলানো সম্ভব হয়। এজন্য বিভিন্ন রকম মাচাও তৈরি
করেছেন তিনি, যেখানে উদ্ভিদগুলো সহজে বাড়তে পারে। আর শাকসবজির বীজ অনেক
ক্ষেত্রে তিনি এই খামার থেকেই সংগ্রহ করেন।
অফেনবাখের এই খামারে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব উপায়ে চাষাবাদ করেন ভূঁইয়া। কোনও
ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেন না তিনি। কেননা, এখানে উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকারক কোনও
কীটপতঙ্গ নেই। আর জমিতে যে সার ব্যবহার করা হয়, তা তৈরি করা হয় জৈব উপায়ে। ভূঁইয়া
বলেন, ‘এই গামলায় আমি নিজেই সার
তৈরি করি। এখানে বিভিন্ন গাছের পাতা, লাউয়ের ছোলা, শাকসবজির যত রকম উচ্ছিষ্ট আছে,
সব পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখি। এভাবে পনেরো দিন ঢেকে রাখলেই তা সারে পরিণত হয়। এটা
জৈব সার এবং উদ্ভিদ ও পরিবেশের জন্য উপকারী।’
ভূঁইয়ার এই খামারে যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন। এজন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয়
না। তবে, কোনও সবজি কেউ নিতে চাইলে তার অনুমতি প্রয়োজন হয়। এই প্রবাসী বাংলাদেশি
চান জার্মানরা তার দেশের শাকসবজির সঙ্গে পরিচিত হোক, তার দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে
জানুক। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাগানে মাসে
দু-একবার দেশি শাকসবজি রান্না করে জার্মানদের দাওয়াত দেই। আমি এভাবে আমাদের সবজি
সম্পর্কে ওদের ধারণা দেই, পরিচিত করি। আর বাংলাদেশিরা তো এখান থেকে শাকসবজি নিয়ে
যায়ই। বিকেলে অনেকেই এখানে ঘুরতে, দেখতে আসেন।’
জার্মানির বিভিন্ন শহরে ‘অ্যালটমেন্ট’ ব্যবস্থার মাধ্যমে ছোট
ছোট বাগানের সাময়িক মালিক হওয়া যায়। দেশটিতে বসবাসরত অনেকের মধ্যে বাগান করার এই
প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। তবে, চাহিদা অনুযায়ী জায়গার জোগান না থাকায় অনেককে বছরের পর
বছর অপেক্ষা করতে হয়।
স্ত্রী ফাহিমা ভূঁইয়াকে
সঙ্গে নিয়ে শাকসবজি চাষ করতে বেশ বড় একটি জায়গা পেয়েছেন শাহজাহান ভূঁইয়া।
বাংলাদেশের শাকসবজির এরকম বড় খামার জার্মানিতে সচরাচর দেখা যায় না।
ভবিষ্যতে খামারের পরিধি
আরও বড় করতে চান ভূঁইয়া দম্পতি। তবে, সেজন্য আরও জমি প্রয়োজন, যা শিগগিরই পাওয়া
যাবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তারা।
Post A Comment:
0 comments: