জনপ্রিয় অনলাইন : স্প্যানিশ এক গবেষণায় করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার উপায় হিসেবে হার্ড ইমিউনিটির সম্ভাবনা নিয়ে সন্দে প্রকাশ করা হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত স্পেনের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০ হাজারের বেশি মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে- মাত্র ৫ শতাংশ স্প্যানিশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
যেকোনও ভাইরাসের বিস্তার বন্ধের জন্য যখন কোনও জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত
সংখ্যক মানুষ ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। অনাক্রান্তদের
সুরক্ষার জন্য ওই জনগোষ্ঠীর ৭০ থেকে ৯০ শতাংশের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার
দরকার হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্পেনের উপকূলীয়
অঞ্চলে তিন শতাংশেরও কম মানুষের শরীরে কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। কিন্তু
দেশটির যেসব অঞ্চলে করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ছিল; সেসব
অঞ্চলের মানুষের দেহে অ্যান্টিবডির পরিমাণ উপকূলীয় অঞ্চলের তুলনায় বেশি।
গবেষকরা বলেছেন, স্পেনে করোনাভাইরাসের প্রভাব বেশি
হওয়া সত্ত্বেও বিস্তার ছিল কম এবং হার্ড ইমিউনিটির ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার
জন্য যা পর্যাপ্ত নয়। সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর অনেক মৃত্যুর সমান্তরাল ক্ষতি এবং
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অত্যধিক চাপ তৈরি হওয়া ছাড়া এই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা
সম্ভব নয়।
তারা বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্বের
ব্যবস্থা, নতুন আক্রান্ত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা
ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং পৃথক করার প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য
জরুরি।
ইউরোপে করোনাভাইরাসে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের ব্যাপারে জানতে
স্প্যানিশ বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ল্যানসেটের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং
চীনেও করোনাভাইরাসে হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে একই ধরনের বেশ কিছু গবেষণা করা হয়েছে।
যদিও মার্কিন এবং চীনা গবেষণা যখন পরিচালনা করা হয়, তখন
দেশ দুটির খুব সামান্য মানুষই ভাইরাসটির সংস্পর্শে এসেছিলেন।
স্পেনের বর্তমান অবস্থা কি?
ইউরোপের এই দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লাখের
বেশি। এছাড়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মারা গেছেন আরও ২৮ হাজার ৩৮৫ জন। তবে গত তিন
সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা এক অংকের ঘরে নেমে এসেছে।
তবে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গালিসিয়া অঞ্চলে নতুন করে
প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় সেখানকার কর্মকর্তারা ৭০ হাজার মানুষের একটি এলাকায় ফের
করোনার বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। ওই এলাকার একটি বার থেকে স্থানীয়ভাবে করোনার
সংক্রমণের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ ঘটনার পর গালিসিয়ার বার এবং রেস্টুরেন্টের ধারণক্ষমতা ৫০ শতাংশ
কমিয়ে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। এই অঞ্চলে বর্তমানে ২৫৮ জন কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় উপযুক্ত কৌশলের
খোঁজ
হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছানো তখনই সম্ভব হয়; যখন ব্যাপক পরিসরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অথবা কোনও জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত
সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেন। কোনও রোগ প্রতিরোধের
জন্য যখন পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষের দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তখন ব্যক্তি
থেকে ব্যক্তিতে সেটি আর ছড়াতে পারে না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলতে দিতে থাকলে অনেক মানুষ গুরুতর অসুস্থ
হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে; যা অনেকের জীবনকে বিপদাপন্ন করে তুলতে পারে। যে
কারণে করোনা মোকাবিলায় এটি কোনও উপায় হতে পারে না।
এছাড়া এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়নি; যদিও শতাধিক ভ্যাকসিন তৈরির বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষাধীন রয়েছে। কার্যকর
ভ্যাকসিন তৈরি করে মানুষকে সুরক্ষিত রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে ভ্যাকসিন
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি মনে করিয়ে দেবে
কীভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে হবে।
তবে রোগটির ধরন বিবেচনা করে শরীরে অ্যান্টিবডি ঠিক কতদিন বা কত সময়
পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বিজ্ঞানীরা সেটি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। কারণ ইতোমধ্যে যারা
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি কতদিন
কার্যকর থাকতে পারে সেব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা এখনও জানতে পারেননি।
সূত্র: বিবিসি।
Post A Comment:
0 comments: