জনপ্রিয় অনলাইন: এ বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এই সুযোগ পাবেন।  তবে এরপর নির্বাহী আদেশ বাতিল হলে কারাগারেই ফিরে যেতে হবে, নাকি তিনি এই আদেশের সময়সীমা আরও বাড়ানোর আবেদন করবেন— এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বিএনপির প্রধান নিজেই। ইতোমধ্যে দলের একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন আইনি দিকটি পর্যালোচনা করতে। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি হওয়ায় আবারও এই পদ্ধতিতেই যেতে হবে তার পরিবারকে। সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তির সময়সীমা বাড়ানো হবে কিনা, তাও  আবেদনের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। করোনাভাইরাসের এই বিশেষ পরিস্থিতি যদি আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিশ্চিতই থাকে, সেক্ষেত্রে আবেদন বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারি উদ্যোগেই করতে পারবে, এমনটি মনে করছে সূত্র। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি হলেও তার চিকিৎসার বিষয়ে খুব একটা উন্নতি নেই— এ কথা জানিয়ে ওই  সূত্রের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন থাকায় এখনও কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয়নি তার। সে কারণে এখনও চিকিৎসার বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সেদিক থেকে ছয় মাস সময় পার হলেও  প্রথমত তার সুচিকিৎসার কাজটিই অগ্রগণ্য থাকবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যে কারণে ম্যাডামকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সে কারণ এখনও রয়েছে। করোনার কারণে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। তার চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়নি। স্বাভাবিক কারণে প্রয়োজনেবোধে আবারও সরকার সময় বৃদ্ধি করতে পারে মানবিক কারণে। তবে এটার জন্য আবেদন করতে হবে। যেহেতু তার মুক্তির প্রক্রিয়াটি নির্বাহী আদেশে হয়েছে, সে কারণে আবারও আবেদন করার মধ্য দিয়ে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করতে হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ২৫ মে ঈদের দিন খালেদা জিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় দেড়ঘণ্টা প্রত্যেকের সঙ্গে আন্তরিক পরিবেশে কথা বলেন তিনি। নিজের শারীরিক সমস্যা, একা কিছুই করতে না পারা, খাবার-দাবারের সমস্যাসহ স্বাস্থ্যগত বিষয়ে তাদেরকে জানান খালেদা জিয়া।  ঈদের পরদিন (২৬ মে) রাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সেই সাক্ষাতেও খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়টিই মুখ্য ছিলো। একই  রাতে সাক্ষাৎ করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, দুই বছর পর কারাগার থেকে বেরোনোর পর দলীয় প্রধানের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আলোচনাই বেশি হয়। তবে এরইমধ্যে সময় দুই মাস পার হয়েছে। এ কারণে নিজেও পরবর্তী ধাপ বা পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন তিনি। এর আগে, ১১ মে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই আলাপেও তার আইনি বিষয়টি উঠে আসে, এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপির সিনিয়র এই নেতা।
২৬ মে রাতে প্রায় এক ঘন্টা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ম্যাডামের প্রায় একঘণ্টা সময় কথা হয়। সৌজন্যমূলক কথাবার্তা। তিনি করোনাভাইরাস নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আর তাই আইনি বিষয়ে যেটি হচ্ছে, তিনি মুক্তি পেয়েছেন মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কারণে তো সবই বন্ধ। তার যে পরীক্ষাগুলো দরকার সেগুলোও আমরা করাতে পারছি না। এ কারণে ট্রিটমেন্টই গুরুত্বপূর্ণ।  কয়েকটি আঙুল বাঁকা হয়েছে আছে, কোমরে ব্যথা, হাঁটতে পারছেন না। যখনই সম্ভব হবে আগে তার উন্নত চিকিৎসা করানো হবে।’

গত ২৪ মার্চ খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হবে।’ আইনের ওই ধারা অনুসারে সরকার খালেদা জিয়াকেও দুটি শর্ত বেঁধে দেয়। শর্ত দুটির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) যেতে পারবেন। এছাড়া, দণ্ড স্থগিত থাকাকালীন খালেদা জিয়া চিকিৎসা বা অন্য কোনও প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।’
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়া বাসাতেই থাকছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রকোপ কমা-বাড়ার ওপর নির্ভর করছে তার পরবর্তী চিকিৎসার ধাপ।  তবে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করছেন, ঈদের দিন (২৫ মে) থেকে খালেদা জিয়া তার চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানান দিচ্ছেন। আরও ইঙ্গিতবাহী হলো,  ঈদের দিন তার বার্তা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে মিডিয়ায় প্রচার করার বিষয়টিও। ২৬ মে সাক্ষাৎ তিনি দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মাহবুব উদ্দিন খোকনকে। একইদিন খালেদা জিয়ার তরফ থেকে ফুল ও ফল পাঠানো হয় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে। আগামী কয়েকদিনে জোটের বা ফ্রন্টের অন্য কোনও নেতাকে তার সাক্ষাৎ দেওয়ার বিষয়টিও রাজনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় বলে জানান কোনও কোনও নেতা।
খালেদা জিয়ার সম্পর্কে কনসার্ন একাধিক রাজনীতিক মনে করছেন, করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বিশ্ব ব্যবস্থা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে মহামারি উত্তর পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবয়ব পর্যালোচনা করছেন খালেদা জিয়া। আর এর ইঙ্গিত মিলছে গত পাঁচ দিনে। বিশেষ করে মুক্তির দুই মাস একেবারে নীরব থাকার পর নেতাদের সাক্ষাৎ প্রদানের মধ্য দিয়ে তিনি পলিটিক্যালি অ্যাক্টিভ এবং তার মধ্যে  বিশেষ পরিকল্পনা কাজ করছে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ম্যাডামের শর্তসাপেক্ষ মুক্তির সময়সীমা এখনও আরও অনেক বাকি। আর এ বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে আমরা এখনও আলোচনা করিনি। তবে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি বেরিয়ে এসেছেন, সেটিই হবে মনে হয়। কারণ, সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকেই করতে হবে বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিকভাবে কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, রাজপথের মধ্য দিয়ে আসা নেত্রী, তিনি নিজেই তো ‘রাজনীতি’।’
শুক্রবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার মেঝো বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনও এ বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে আলোচনা শুরু করিনি। কয়েকদিন ধরে আমি যেতে পারছি না তার বাসার। সময় আছে, এরমধ্যে আলাপ হবে নিশ্চয়ই।’

Axact

Jonoprio

জনপ্রিয়২৪ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বিশ্বজুড়ে রেমিডেন্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। স্পেনে বাংলাভাষী প্রবাসীদের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল।.

Post A Comment:

0 comments: