খায়রুল আলম : ‘…আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির
দূরে থেকে আমি ঘর-সংসার করছিলাম। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর
নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে
আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।
বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবনদান করতে চাই।
আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই ছোট্ট রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে
এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত
পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক
তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
‘বাংলার জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি এসেছি এবং মুক্তির সংগ্রামে
অংশগ্রহণের জন্য এসেছি…আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য
আসিনি। আমি আপনাদের বোন হিসেবে, কন্যা হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী
লীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
এটি ছিল দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ
সন্তান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম ভাষণ। আর সেই দিনটি ছিল ১৯৮১ সালের
১৭ মে। কালবৈশাখীর জ্যৈষ্ঠ মাসের রোববারের সেই দিনটির প্রথমভাগে ছিল কড়া রৌদ্রালোকিত
ও প্রচণ্ড দাবদাহসমৃদ্ধ এবং পরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি।
প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে লাখো বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বাংলার মানুষ অপেক্ষা
করছিল তার জন্য। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
দৈনিক বাংলা পত্রিকায় এর পরদিন লেখা হয়েছিল, ‘ঐদিন কালবোশেখির
ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে
এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।’
বিপুল জনগণের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনাকে বহনকারী
বিমানটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকেল ৩.৩০ মিনিটে অবতরণ করে। বিমান থেকে নেমেই
তিনি দেশের মাটিতে চুমু খান। এ সময় জনতা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল।
একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছিল। দেশবাসী তাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছিল।
তিনি তখন চোখের জলে ভাসছিলেন। এভাবে ১৯৮১ সালের সেই দিন বাংলাদেশে একটি নতুন যুগের
সূচনা হয়েছিল।
সেদিনের গগনবিদারী মেঘগর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বদলা নেয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর
অবিরাম মুষলধারে ভারী বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃহত্যার জমাটবাঁধা
পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাজার হাজার
মানুষ। বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সব সদস্যের রক্তে ভেজা বাংলার মাটি স্পর্শ করে তিনি
কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এই সময় উন্মত্ত জনতা সামরিক শাসক জিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য
করে বিভিন্ন স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। ঝড়-বৃষ্টির আকাশ কাঁপিয়ে শেখ
হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকের চার পাশে স্লোগান ওঠে, পিতৃ হত্যার বদলা নিতে/লক্ষ ভাই বেঁচে
আছে; শেখ হাসিনার ভয় নাই/রাজপথ ছাড়ি নাই। তিল ধারণের জায়গা ছিল না সেদিন কুর্মিটোলা
থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত।
সংবর্ধনার পর শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের রক্তে রঞ্জিত
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে জিয়ার বাহিনী তাকে তার
পৈত্রিক বাসায় প্রবেশ করতে দেয়নি। তখন তিনি বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে কোরআন তেলাওয়াত
করেন। জিয়া বেঁচে থাকা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন তিনি বাসার সামনে বসে কোরআন তেলাওয়াত করতেন;
তাতেও বিন্দুমাত্র দয়া হয়নি খুনি শাসকের।
১৯৭৫ সালের ভয়াল ১৫ আগস্টের রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান সপরিবারে কুচক্রীদের হাতে নিহত হওয়ার পর, তার দুইকন্যা শেখ হাসিনা ও
শেখ রেহানা জার্মানিতে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান। জার্মানিও তাদের জন্য নিরাপদ
না হওয়ার কারণে সেখান থেকে পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় দিল্লিতে আসেন।
সেখানেই দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসজীবন অতিবাহিত করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চরম এক প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত
জীবন কাটাতে হয় আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তার বিদেশ থাকাকালে ১৯৮১
সালের ১৪, ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনার
অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
তৎকালীন সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফেরেন
শেখ হাসিনা। সেদিনের শাসকগোষ্ঠী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টিকে কতটা গভীরভাবে উপলব্ধি
করতে পেরেছিল জানি না। আমাদের দেশের নানা মহলও কতটা শেখ হাসিনাকে নিয়ে আশাবাদী হতে
পেরেছিল সেটিও জানা নাই। কেননা তখনও পর্যন্ত অনেকেই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মিশন-ভিশন
সম্পর্কে সচেতন ছিল না। জিয়াউর রহমান এবং ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের হোতাদের একটা ধারণা
ছিল যে, শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সমর্থনশক্তি কিছুটা জেগে উঠবে হয়তো।
কিন্তু সেটি তাদের রাজনীতির জন্যে হুমকি হয়ে পড়বে তা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ধারণা ছিল
বলে মনে হয় না।
আওয়ামীবিরোধী সকল শক্তির ধারণা ছিল যে, আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে
কোনোভাবেই আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা ভেবেছিল বাংলাদেশের জনগণকে এরইমধ্যে আওয়ামীবিরোধী
ভাবাদর্শে গড়ে তোলা গেছে, সাম্প্রদায়িক এবং ভারতবিরোধী করা গেছে সফলভাবে এমনটিই ভাবা
হতো। আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগের মতো হয়তো দুর্বল হতে পারে, নতুবা এটি চিরকালই বিরোধী
দলের আসনে বসে চেঁচামেচি করে কাটাবে এমনটিই তাদের ধারণা ছিল। রাষ্ট্রক্ষমতায় এমন সব
শক্তিকে বসানো হয়েছে যারা আওয়ামী উত্থানকে প্রতিহত করতে যা যা করা দরকার ছিল- তা তারা
করতে মোটেও দেরি করেনি। সুতরাং জিয়াকেন্দ্রিক শক্তি কিছু অতিআত্মবিশ্বাসী ছিল। এর কারণে
১৯৮১ সালের দিকে বাংলাদেশের রাজনীতি এতটাই বিভ্রান্ত এবং পথহারা ছিল, আওয়ামী লীগ তো
অনেকটাই নেতৃত্বশূন্যই ছিল। তার ওপর এই দলটির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা এতটাই তীব্র
ছিল যে, এসবকে প্রতিহত করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে দাঁড়ানো মোটেও সহজ কাজ ছিল না। এরমধ্যে
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জিয়াউর রহমান নিহত হলে পর্দার
অন্তরালে এসব কিসের দ্বন্দ্ব বা কিসের আলামত- তাও বোঝা যাচ্ছিল না।
তেমন একটি ঘোলাটে সামরিকশক্তি নতুনভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠার
সময়ে শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলেন, নতুন করে সবকিছু গোছাতে লাগলেন, অভিজ্ঞতার অবস্থানটিও
তখন তার ছিল যৎসামান্য, দলের রণনীতি, রণকৌশল নির্ধারণ, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে
সামরিক শাসন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালকে ছিন্ন করে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তখন পর্যন্ত বেশ
জটিল এবং দুরূহ কাজ ছিল। অধিকন্তু পিতার মতো বরাবরই তিনিও ছিলেন ঘাতকের ষড়যন্ত্রের
টার্গেট। তাকে হত্যা করার যড়য়ন্ত্র শুরু হয়েছে তখন থেকেই।
একবার নয়, দুইবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা
চালানো হয়েছিল। কখনও নিজ বাসভবনে, কখনও জনসভায় আবার কখনও তার গাড়ির বহরে। ক্ষমতায় যাতে
শেখ হাসিনা কোনোভাবে যেতে না পারেন এবং ষড়যন্ত্রের গোপনজাল বিছিয়ে রেখেছিল রাষ্ট্রক্ষমতার
ভেতরে মুখ লুকিয়ে যারা বেচেছিল। গোটা আশির দশক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে। কিন্তু আন্দোলনের কোনো ফসলই তাকে ঘরে তুলতে দেয়নি নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী
মহল। যার ফলশ্রুতিতে ’৯১ এর নির্বাচনে পরাজয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ
নেতৃত্ব সর্বাধিক ত্যাগ স্বীকার করার পরও এ পরাজয় অপ্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে বিএনপিবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু করেন
শেখ হাসিনা। তার আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১২ জুন ১৯৯৬
সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২৩ জুন
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
রাজনীতির কোনো বাধাধরা তত্ত্বেই শেখ হাসিনা নিজেকে আটকিয়ে
রাখেননি। ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।
প্রথম থেকেই তিনি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু কখনও লক্ষ্যচ্যুত হননি। কোন পথে অগ্রসর
হলে বাংলাদেশের মুক্তি আসবে শেখ হাসিনা তা নিজের মেধা, প্রজ্ঞা, শ্রম ও অভিজ্ঞতা দিয়ে
অনুধাবন করেছেন। সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন বলেই তিনি জাতিকে সফল নেতৃত্ব দিতে
পারছেন। আজ দেশে-বিদেশের পর্যবেক্ষক মহল শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে মন্তব্য
করেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশকে জাতিসংঘের উন্নয়ন মডেলে পরিণত করেছে। একই সঙ্গে
এটিও লক্ষণীয় যে তার নেতৃত্বের কারণে দেশের উন্নয়ন সাধিত হলেও, এ জন্য তাকে অনেক বাধার
সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা।
বাংলাদেশ পেয়েছে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ
আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক
খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য
সাফল্যগুলো ছিল: ভারতের সঙ্গে সাথে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম
শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা
অর্জন।
এছাড়া তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং
ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হলো: দুস্থ মহিলা ও বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের
জন্য শান্তিনিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।
২০০৯-২০১৩ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর
মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩,২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি
প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক
জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায়
পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড
এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার
জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন,
দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস, জাতিসংঘ কর্তৃক
শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ ইত্যাদি।
২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে
রয়েছে: বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থলসীমানা
চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন, (এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা
বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় ১,৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার
২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন
শুরু ইত্যাদি।
শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং
প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে।যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন
ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা
বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা
বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক
বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব
পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।
এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান
করে। সামাজিক কর্মকাণ্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ
হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের
গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাঁকে
‘‘হুপে-বোয়ানি’’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাস্ট্রের রানডলপ ম্যাকন
উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক “পার্ল এস বাক ’৯৯’’ পুরস্কারে ভূষিত
করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ
শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে
১৯৯৮ সালে ‘‘মাদার টেরেসা’’ পদক প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন
তাকে পল হ্যারিস ফেলোশিপ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে তাকে
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক প্রদান করে। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭
সালে তিনি ‘‘মেডেল অব ডিসটিঙ্কশন” পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে “হেড অব স্টেট” পদক লাভ করেন।
২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি
ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে
ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বৃটেনের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং দুইবার সাউথ সাউথ পুরস্কারে
ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাকে ‘শান্তিরবৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস
গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল
সাউথ-সাউথ ডেভলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে।
বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউকেশন ইউনিয়ন শেখ হাসিনাকে সাসটটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৫ প্রদান করে।
বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউকেশন ইউনিয়ন শেখ হাসিনাকে সাসটটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৫ প্রদান করে।
শেখ হাসিনা এক অনন্য রাজনীতিক। অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং অপ্রতিরোধ্য
নেতা। দেশের রাজনীতি তো বটেই; বিশ্বের রাজনীতিতেও তার মতো রেকর্ডের নজির খুঁজে পাওয়া
দুস্কর। তিনি বাংলাদেশের চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি
হিসেবে ৯ বার নির্বাচিত হন। এটা রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে কোনো নেত্রী চারবার প্রধানমন্ত্রী
এবং ৯ বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এমন নজির নেই। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয় নেতা শেখ
হাসিনা দেশ বিদেশে সমান জনপ্রিয়। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে তুলে তিনি দেশকে আন্তর্জাতিক
পরিমণ্ডলে সন্মানিত করে তুলেছেন; আবার মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের
আশ্রয় দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথের সদস্য
অনেক দেশে তার নাম ‘উদাহরণ’ হিসেবে আলোচিত হয়ে থাকে।
প্রখর দূরদৃষ্টি এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই তাকে এই অবস্থায়
নিয়ে এসেছে। তার বিভিন্ন চিন্তাশীল বক্তব্য-কথাবার্তা এখন বিশ্বের সেরা দার্শনিক, সমাজবিদ,
ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞজনের ‘বাণীর’ মতোই উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অথচ রাজনীতিতে
আসা এবং দীর্ঘ চলার পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে
হত্যার পর খাদের কিনারে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ’৮১ সালে এসে তিনি দলকে পুনর্জীবিত
করেন। এই ৩৯ বছরে তিনি আওয়ামী লীগকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন; পাশাপাশি
জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে
এ পর্যন্ত টানা ৩৯ বছর উপমহাদেশের প্রচীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন
তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, রাষ্ট্র
পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসীম সাহস ও দৃঢ়চেতা মনোবলের কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু
হত্যার রায় কার্যকর এবং জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে। একমাত্র শেখ হাসিনা নেতৃত্বে
রয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। দেশ বেরিয়ে এসেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে। সর্বশেষ
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স প্রদর্শন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের
কাছেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনার
বিকল্প আজ কেউ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিন শুরু হয় ফজরের নামাজ, কোরআন
তেলাওয়াত ও সংবাদপত্র পড়ে এবং তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে দিন শেষ হয়। খাওয়া-দাওয়ায় একেবারেই
সাদামাটা। তিনি নিজে রান্না করতে যেমন পছন্দ করেন, তার চেয়ে বেশি আতিথেয়তার সঙ্গে খাওয়াতে
পছন্দ করেন। বিশ্বে এমন কজন রাষ্ট্রনায়ক আছেন, যারা নিজ হাতে রান্না করে কর্মী ও সন্তানদের
খাওয়ান? সাধারণের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত আমাদের মহান নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের
গৌরব। একজন সম্ভ্রান্ত পরহেজগার মুমিন মুসলমান হলেও তার চিন্তা ও চেতনাজুড়েই অসাম্প্রদায়িক
গণতান্ত্রিক রাজনীতি জায়গা নিয়েছে। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে তিনি দ্বিধা করেন
না। খোলা বইয়ের মতো তার রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন।
তার সরলতা শিশুর মতো।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তার হাতের কাছেই শোভা পায়। তিনি নিজে
যেমন পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন, তেমন আমাদেরও পড়াশোনার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায়
শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব,
পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও
সুশিক্ষিত করে তুলেছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন।
মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়
ইতোমধ্যেই সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচিয়তা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হচ্ছে: ‘‘শেখ মুজিব আমার পিতা’’, ওরা টোকাই কেন?, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’’,
দারিদ্র্য বিমোচন, কিছু ভাবনা’’, ‘‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’’, আমরা জনগণের কথা বলতে
এসেছি’’, ‘‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’’, ‘‘সাদা কালো’’, ‘‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’’, Miles
to Go, The Quest for Vision-2021 (two volumes)।
শেখ হাসিনা ‘‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’’
এর সভাপতি। তিনি গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী
এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই
আজ সকল স্বৈরশাসনের স্মৃতি পেছনে ফেলে দেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে।
আজ বাঙালির শেষ আশ্রয়ের নাম- শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেখ
হাসিনা দেশকে আত্মনির্ভরশীল, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ
গড়ে তুলতে নিরলসভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন; যুগ্ম সম্পাদক,
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ( ডিইউজে)।
Post A Comment:
0 comments: