জনপ্রিয় ডেস্ক :  বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্পেনে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদেরকে মানবিক সহায়তা সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্পেনে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাসের পক্ষ থেকে দুই পর্যায়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবার সমন্বয়ে প্রাপ্ত পঁচিশ লক্ষ টাকার সাহায্য বিতরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  স্পেনের বিভিন্ন শহরে  প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। লকডাউনের কারণে তাদের জীবন এবং আয় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।  
বাংলাদেশ দুতাবাস ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সুত্র অনুসারে এই পর্যন্ত স্পেনে ১৫০জন  বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩ জন মারা গেছেন।  স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের বেশিরভাগই পর্যটননির্ভর ছোট ব্যবসা, দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সাম্প্রতিক লকডাউনের ফলে এদের অধিকাংশই আয় রোজগার বঞ্চিত হয়ে সপরিবারে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনযাপন করছে। স্থানীয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংস্থা প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার অসহায় ব্যক্তিকে শনাক্ত করে চাল, ডাল, তেল সহ অতি প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে আসছে ।  বাংলাদেশ দুতাবাস প্রবাসীদের মধ্যে যারা বর্তমানে লকডাইনের কারণে আয় করতে পারছেন না এবং খাদ্য সংকটে আছেন তাদেরকে এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে।  মাদ্রিদে অবস্হিত বাংলাদেশ দুতাবাস ২৭শে মার্চ ২০২০ তারিখে নোটিশ জারি করে করোনাভাইরাস কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত স্পেন প্রবাসি বাংলাদেশিদের দশ লক্ষ টাকা ত্রাণ সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরে । দুতাবাস তার হটলাইন ৬৭১১৯৬৯৯২, নম্বরে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা জন্য বিবেচিত হওয়ার বিষয়ে আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অনুরোধ জানায় । পরবর্তিতে দেখা যায় যে, বরাদ্দকৃত অর্থ আবেদনকারীদের তুলনায় অপ্রতুল । তাই দুতাবাস অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায় এবং পরবর্তীতে আরও পনেরো লক্ষ টাকার বরাদ্দ পায় । 
দুতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দীর্ঘ প্রায় একমাস ধরে আবেদনকারিদের তালিকা সম্পূর্নকরণসহ যাচাইবাছাই করে । এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর ২২শে এপ্রিল ২০২০ নীতিমালাটি নোটিশ আকারে প্রদান করা হয় । মাদ্রিদের বাংলাদেশ দুতাবাস এবং বার্সেলোনায় বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল জনাব রামন পেদ্রো করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই প্রবাসি ভাইবোনদের সহযোগিতার বিষয়ে কাজ করে চলেছে ।  উক্ত নোটিশ প্রদানের পর স্পেন প্রবাসিরা অনেকগুলো বিষয় বিভিন্ন মাধ্যমে দুতাবাসের নিকট তুলে ধরেছেন ।  অনেকে খাদ্য সাহায্যের পরিবর্তে নগদ অর্থ সহায়তা চেয়েছেন ।  অনেকে খাদ্য সহযোগিতার গুনগত মান এবং মূল্য নির্ধারন ইত্যাদি প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁদের অনাস্হা প্রকাশ করেছেন । এক শহরের থেকে অন্য শহরের খাদ্যের মূল্যের যে তফার হবে সেই অর্থ থেকেই বঞ্চিত হতে চান না বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন ।  অনেকে যে চাল দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা তাঁরা খান না , ইত্যাদি মত দিয়েছেন ।   দুতাবাস ধৈর্য ধরে সকলের মতামত শুনেছে ।  তবে দুতাবাসের কাছে মুলত তিনটি বিবেচ্য বিষয় রয়েছে ১, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নিকট সহায়তা পৌছানো ।  ২, সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ।  ৩, যাঁরা এই ক্ষুদ্র সহযোগিতাটুকু গ্রহন করবেন,তাঁদের মর্যাদা নিশ্চত করা ।
উক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিতকল্পে দুতাবাস খাদ্যসহায়তা প্রদান না করে নগদ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে ।  ইতিমধ্যে দুতাবাস মাদ্রিদ থেকে ৪৭৭ এবং বার্সেলোনা (তথা সমগ্র কাতালোনিয়া) থেকে ৩৯৮ জনের আবেদন পেয়েছে ।  এ ছাড়া দুতাবাস টেনেরিফে ৫০জন, মাইয়র্কাতে ৪০জন,মালাগাতে ৩০জন, এবং মাদ্রিদ,বার্সেলোনা,টেনেরিফ, মাইয়র্কা,মালাগা ছাড়া আরও অন্যান্য শহরের জন্য ২০জন আবেদন গ্রহন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে ।
সরকার থেকে যে পঁচিশ হাজার টাকা পাওয়া গেছে তার বিনিময় মূল্য হিসাবে দুতাবাসের ব্যাংক থেকে সাতাশ হাজার  সাতচল্লিশ ইউরো (২৭০৪৭.০০ ইউরো) মূল্যমান নির্ধারিত হয়েছে ।  দুতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ তাঁদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে নয়শ তিপ্পান্ন ইউরো (৯৫৩) এই তহবিলে প্রদান করে সর্বমোট আটাশ হাজার ইউরো (২৮০০০.০০ ইউরো) আবেদনকারিগণের নিকট সমান হারে বিতরন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত করা হয়েছে ।   মাদ্রিদের বাংলাদেশ দুতাবাসের কনস্যুলার শাখায় মাদ্রিদের সংশ্লিষ্ট আবেদনকারিদের অর্থ প্রদান করা হবে । বার্সেলোনায় নিয়োজিত কনসাল জেনারেল রামন পেদ্রো বার্সেলোনার (তথা সমগ্র কাতালোনিয়ার)আবেদনকারিদের এই অর্থ প্রদান করবেন ।  প্রত্যেক আবেদনকারিকে তাৎক্ষণিকভাবে পূনরায় যাচাই করা হবে এবং প্রত্যেক দাবিদারকে আবশ্যকভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কপি জমা দিয়ে সাহায্য গ্রহন করতে হবে ।  প্রদানকৃত অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে পাসপোর্ট কপি জমা দেয়া আবশ্যক ।  অর্থ প্রদানের দিন তারিখ নিয়ে দুতাবাস কাজ করছে । এ ক্ষেত্রে স্হানীয় লকডাউন আইন, পুলিশের অনুমোদনসহ সার্বিক বিষয়ের সুরাহা হওয়ার পর সহায়তা প্রদানের দিন তারিখ উল্লেখ করে যথাসময়ে আর একটি নোটিশ জারি করা হবে ।

২২ এপ্রিল ২০২০ এর পর মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা (তথা সমগ্র কাতালোনিয়া) থেকে আর কোনও আবেদন গ্রহন করা হবে না ।  এ দুটি শহর ছাড়া অন্য শহরগুলো থেকে উপরের ৪নং অনুচ্ছেদের আলোকে আবেদন গ্রহন করা হবে ।  টেনেরিফে,মাইয়র্কা,মালাগা বা অন্যান্য শহর থেকে (মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা (তথা সমগ্র কাতালোনিয়া) ব্যতীত) প্রত্যেক আবেদনকারিকে হটলাইনে নাম ,পার্সপোর্ট নম্বর এবং মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হবে । তাঁরা ৬৬৬০৪৩৮২২ হোয়াটসআপ নম্বরেও আবেদন করতে পারেন ।
আবেদনকারিদের সংখ্যার আটাশ হাজার ইউরো ২৮০০০.০০ ইউরো অতি সামান্য অর্থ ।  তারপরও  এই অর্থ যাতে যথাযথভাবে আবেদনকারিদের নিকট পৌছে ,সে জন্য দুতাবাস সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে ।  দুতাবাস এই সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সার্বিক স্বচ্ছতা রক্ষা করতে বন্ধপরিকর ।
দুতাবাস নোটিশে আরও উল্লেখ করে  বিভিন্ন সামাজিক,রাজনৈতিক,দাতব্য সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করছেন ।  দুতাবাস তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে ।  স্পেনে বাংলাদেশ কম্যুনিটির যে-.সব সাংবাদিকরা মহামারি চলাকালীন বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার করে জনসচেনতা বৃদ্ধিতে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, দুতাবাস তাঁদেরকে ও আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে । 

Axact

Jonoprio

জনপ্রিয়২৪ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বিশ্বজুড়ে রেমিডেন্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। স্পেনে বাংলাভাষী প্রবাসীদের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল।.

Post A Comment:

0 comments: