জনপ্রিয় অনলাইন : করোনা ভাইরাস এখন বিশ্ব মহামারী।
দিন দিন বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। একইসঙ্গে মানুষের ভেতরও ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে চার হাজার
৬০০ জন মারা গেছে। আর বিশ্বের ১১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। আক্রান্তের সংখ্যা
পৌঁছেছে প্রায় সোয়া লাখে।
এমন অবস্থায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা এর ব্যাখ্যা দিতে শুরু
করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
ইসলাম ধর্মের অনেক অনুসারী ব্যাখ্যা তুলে ধরে বলেছেন। তারা
হাদিসে বর্ণিত একটি অসুখের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পৃথিবী শেষ হওয়ার আগে একটি রোগ সারাবিশ্বে
ছড়িয়ে পড়বে।
আবার অনেকে বলছেন, কেয়ামতের আগে কাবায় ‘তাওয়াফ’ বন্ধ হবে।
এই ঘটনার সঙ্গে চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কাবায় ওমরাহ বন্ধের তুলনা করেছেন তারা।
আবার অনেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শকে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার আগে ওযু করার সঙ্গে মিলিয়েছেন।
অপরদিকে হিন্দু ধর্মের অনেক অনুসারীও করোনা নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা
দিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার সভাপতি স্বামী চক্রপাণি এই ভাইরাসকে একটি ‘রাগী
দেবতা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা এটা ভাইরাস নয়। এটা নিরীহ প্রাণীকে রক্ষার
অবতার। যারা এদের ভক্ষণ করেন, তাদের মৃত্যু ও সাজার শাস্তি শোনাবার জন্য এরা এসেছে।’
আবার কেউ বাইবেলের উক্তি তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
লিখেছেন, ‘এমন একটি সময় আসবে যখন একটি রোগে অনেক মানুষ মারা যাবে।’
মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে একেক ধর্মের অনুসারীরা নানাভাবে
ব্যাখ্যা করছেন। তবে এ নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন।
প্লেগ থেকে গুজব, এরপর করোনা :
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। কারো জানা ছিল না কোথা
থেকে এর উৎপত্তি। একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে।
প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু
হয়। কিন্তু এর প্রমাণ দেখাতে পারেনি কেউ।
ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: ডয়েচে ভেলে
সবশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, নভেল করোনা
ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকেই তা সারা বিশ্বে
ছড়িয়েছে। কেউ আবার দাবি করছেন, যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে। যদিও
এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
বিজ্ঞান কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রাণী ও মানুষের মধ্য দিয়ে
ছড়াতে পারে। এটি ভাইরাসের একটি বিশাল পরিবার, যা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে
শ্বাসকষ্টজনিত জটিল রোগ মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স-কোভ) ও সিভিয়ার অ্যাক্যুট
রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স-কোভ)-এর কারণ হতে পারে।
এই পরিবারের নতুন সদস্য করোনা ভাইরাস, যা কোভিড-১৯ নামের
নিউমোনিয়া সদৃশ রোগের কারণ হতে পারে। এই রোগে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
সার্স ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল সিভেট নামের এক রকমের প্রাণী থেকে।
মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে। তবে নতুন করোনা ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে তা এখনো নিশ্চিত
নন বিশেষজ্ঞরা।
তবে এর আগেও পৃথিবীতে প্রাণঘাতী আরো রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছিলো।
যেমন চতুর্দশ শতকে প্লেগে ইউরেশিয়া অঞ্চলের কমপক্ষে সাড়ে সাত কোটি থেকে ২০ কোটি মানুষ
মারা যায়। এই প্লেগকে বলা হতো ‘ব্ল্যাক ডেথ’। এটি ইঁদুর থেকে ছড়িয়েছিলো।
১৯১৮ সালে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নামে পরিচিত ইনফ্লুয়েঞ্জা ৫০
কোটি মানুষকে আক্রান্ত করে। যাতে ১.৭ কোটি থেকে ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। সূত্র: ডয়েচে
ভেলে
Post A Comment:
0 comments: