জনপ্রিয় অনলাইন : দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে রাজপথে কার্যকর কর্মসূচিতে ব্যর্থ হলেও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নিতে চায় বিএনপি। দলটির নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে ‘রাজপথে প্রতিবাদ-কর্মসূচি’ গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নয়। এ কারণে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টিকে সামনে রেখে সরকারের কাছে তার মুক্তির আবেদন করার পক্ষে তাদের অব্স্থান। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আগে ‘সরকারের মনোভাব বুঝতে’ চান তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামী শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) তার কারাবন্দি জীবনের দুই বছর পূর্ণ হবে। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন-প্রতীকী অনশন আর ঝটিকা বিক্ষোভের বাইরে কার্যকর কোনও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, 
দলটির স্থায়ী কমিটির খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি রাজপথে ফায়সালা করা এই মুহূর্তে অসম্ভব বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে দুটি পথ খোলা আছে। একটি হচ্ছে, আপিল বিভাগের নামঞ্জুর হওয়া খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি নিয়ে রিভিউ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী তার জীবন রক্ষার্থে সরকারের কাছে আবেদন করা।
দলটির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বলছেন, সুযোগ থাকলেও পুরো বিষয়টি সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে। তারা মনে করেন, বিশেষ করে আদালতের ওপর ক্ষমতাসীনদের প্রভাবের বিষয়টি তাদের কাছে পরিষ্কার। এ কারণে আপিল রিভিউ কিংবা বিশেষ আবেদন—উভয় ক্ষেত্রেই সরকারের মনোভাব আগে বুঝতে চান তারা। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বিশেষ আবেদনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সরকারের দুই-একজন মন্ত্রীর ইতিবাচক অবস্থানকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতৃত্বে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। সুচিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে ইতোমধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে যে অবস্থান জানানো হয়েছে ।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার  বলেন, ‘সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আইনে যা আছে তা-ই হবে। খালেদা জিয়া অনেক অসুস্থ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী জীবন রক্ষার্থে  দণ্ডাদেশ সাময়িক স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আছে।’
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা আবেদন করলাম কিন্তু সরকার গ্রহণ করলো না, তাহলে তো এটা লজ্জাজনক হবে।’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘সরকারের মনোভাবটা কী, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। সরকার যদি ইতিবাচক ইচ্ছা পোষণ করে, তাহলে তো আদালতে জামিনের বিরোধিতা নাও করতে পারে।’
নীতি-নির্ধারণী ফোরামের অন্যতম একজন সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার ব্যাপার  আছে বলে এমন কোনও ইঙ্গিত পেলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় দরখাস্ত করতে পারতাম। আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে পারে সরকার।’

বিএনপির প্রভাবশালী একজন দায়িত্বশীল জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দলীয়ভাবে টিকে থাকার সংগ্রামই বিএনপিকে করতে হচ্ছে। আর চেয়ারপারসন কী পদ্ধতিতে মুক্তি নেবেন, এটা এখনও তার ওপরই নির্ভর করছে। পরিবার বা দল হয়তো অবস্থান ব্যক্ত করতে পারে, কিন্তু মূল সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়াই। তবে, প্রকাশ্যে দল এমন কোনও উদ্যোগ নেবে না, যার মাধ্যমে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘পরিবারের মাধ্যমেই তার সম্মতি নেওয়া যেতে পারে।’
দলের সিনিয়র একনেতা বলেন, ‘বিশেষ আবেদনের প্রক্রিয়াটি সামনে নিতে হলে খালেদা জিয়া রাজি না হলেও তাকে বোঝাতে হবে। খালেদা জিয়াকে বিশেষ করে বোঝাতে হবে—এই সরকার তাকে কারাগারে রেখেই শেষ করে দিতে চায়। এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির পরের বৈঠকে আলোচনা হবে।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘তার কারামুক্তির জন্য দুটি পথ আছে। একটি  আন্দোলনের দিকে  যাওয়া অন্যটি আইনি পথ।  প্রয়োজনে উভয় পথেই চেষ্টা করতে হবে।’
বিশেষ আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা তার পরিবার বলতে পারবে। আমরা এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি।’
বিএনপির ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করছেন, ‘খালেদা জিয়া বিশেষ আবেদনে বিদেশে যেতে রাজি হবেন না। এটা কেউ চাইতে পারে সমঝোতা করে তাকে বাইরে পাঠাতে। কিন্তু এখনও আপিল রিভিউ বাকি আছে। ড. কামাল হোসেন ও মঈনুল হোসেনকে নিয়ে এই রিভিউ করতে হবে। কামাল হোসেন রাজি আছেন। এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে হবে।’
রিভিউ আপিলের কবে নাগাদ করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিশেষ আবেদনের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি নেই। ৮ ফেব্রুয়ারির পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। রিভিউ করার সময় এখনও আছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেন আদালত। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা চলছে। দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত বছরের ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়ার কারাবন্দির দুই বছর পূর্ণ উপলক্ষে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) তার রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনায় দেশব্যাপী জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। এছাড়া পরদিন শনিবার  বেলা ২টায় নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও সারাদেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ঢাকায় সমাবেশ নিয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলি পুলিশ (ডিএমপি)-এর সঙ্গে দলের দায়িত্বশীলরা যোগাযোগ করেছেন।’ সমাবেশের অনুমতি শেষ মুহূর্তে মিলবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Axact

Jonoprio

জনপ্রিয়২৪ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বিশ্বজুড়ে রেমিডেন্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। স্পেনে বাংলাভাষী প্রবাসীদের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল।.

Post A Comment:

0 comments: