জনপ্রিয় অনলাইন : যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিতে
পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। জিব্রাল্টার উপত্যকার
মর্যাদা নিয়ে ভবিষ্যত আলোচনা বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলে চুক্তি মানবেন না বলে
জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
১৭১৩ সালের ইউট্রেট চুক্তি অনুযায়ী ভূখণ্ডটি যুক্তরাজ্যের
কাছে হস্তান্তর করে স্পেন। তারপরও তারা এখনও ভূখণ্ডটির মালিকানা দাবি করে থাকে। যুক্তরাজ্যের
সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ’র
আলোচনায় মধ্যে জিব্রাল্টার থাকবে না- এমন নিশ্চয়তা চায় স্পেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী
পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আজ
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যদি জিব্রাল্টার বিষয়ে কোনও পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে স্পেন
ব্রেক্সিট চুক্তিতে না ভোট দেবে’।
ব্রেক্সিট আলোচনার সময় স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও সাইপ্রাস নিজেদের
সীমান্ত বিষয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনা করেছে। সোমবার স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জোসেপ বোরেল বলেছেন, ব্রেক্সিটের খসড়া চুক্তিতে জিব্রাল্টার বিষয়ে ‘আলাদা আলোচনা’র বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। এটা
ইইউ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ভবিষ্যত আলোচনার বিষয় নয়।
প্রধানমন্ত্রী সানচেজ মঙ্গলবার মাদ্রিদে এক সভায় নিজের বক্তব্যে
এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। তিনি জিব্রাল্টার বিষয়ে ভবিষ্যতে কোনও আলোচনা
দ্বিপাক্ষিক হতে হবে বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি দেশ হিসেবে আমরা এটা মেনে নিতে পারি না যে, জিব্রাল্টার
বিষয়ে ভবিষ্যতে সব আলোচনা যুক্তরাজ্য ও ইইউ’র মধ্যে
হবে। এটা স্পেন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হতে হবে।
ব্রেক্সিটের খসড়া চুক্তির ১৮৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ২০১৯
সালের ২৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার দিন থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর
পর্যন্ত ট্রানজিট সময় চলাকালীন ইইউ এবং যুক্তরাজ্য তাদের ভবিষ্যত সম্পর্ক বিষয়ে চুক্তি
নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করে যাবে।
কিন্তু স্পেন মনে করে, এই ধারায় প্রশ্নটি অস্পষ্ট থেকে গেছে।
এটা ভবিষ্যতে জিব্রাল্টারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না- এমন নিশ্চয়তা চায় দেশটি। তারা
উপত্যকাটির মর্যাদা বিষয়ে ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করার অধিকার
চায়। আর খসড়া চুক্তিতে এটা করার এখতিয়ারের কথা থাকতে হবে।
জিব্রাল্টারের মুখ্যমন্ত্রী ফাবিয়ান পিকার্দো স্পেনের বিরুদ্ধে
শেষ মুহূর্তে বিষয়টি উত্থাপন করার ‘খুবই
পরিচিত কৌশল’ অবলম্বন করার অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘পারস্পারিক ভরসা ও বিশ্বাসকে এগিয়ে
নেওয়ার ক্ষেত্রে স্পেনের এই অবস্থান তেমন কোনও কাজে আসবে না’।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, জিব্রাল্টারসহ অন্যান্য বিদেশি
রাজ্য ও ব্রিটিশ রাজের অধীনস্ত এলাকায় এই খসড়া চুক্তির আওতায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি চুক্তি করছি যা পুরো যুক্তরাজ্য পরিবারের
জন্য কাজ করবে’।
জিব্রাল্টার উপত্যকাটি ১৭১৩ সালের চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যকে
দিয়ে দিলেও স্পেন বেশ কয়েকবার এর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৬৭ সালের এক
গণভোটে জিব্রাল্টারের ৯৯.৬ শতাংশ মানুষ যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
এছাড়া ২০০২ সালের ভোটে জিব্রাল্টারে যৌথ সার্বভৌমত্ব বিষয়ক একটি প্রস্তাবও সেখানকার
বাসিন্দারা ব্যাপক হারে প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৬৭ সালের গণভোটের পর স্পেন তার জিব্রাল্টার
সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৮৫ সালে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটিতে যোগ দেওয়ার পর তারা
ওই সীমান্ত খুলে দেয়।
Post A Comment:
0 comments: