দেলওয়ার হোসেন সেলিম,প্যারিস
(ফ্রান্স): প্যারিসের অদূরেই বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থিত গুড
প্ল্যানেট ফাউন্ডেশন । সবুজে ঘেরা, ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা, স্নিগ্ধ পরিবেশ ।
সারি সারি নানান
জাতের গাছের সমারোহ । বনজ, ফলজ, ঔষধি,
শোভা বর্ধনকারী - কিছুই যেনো বাদ নেই। এমনি চমৎকার
পরিবেশে অনুষ্টিত হলো গুড প্ল্যানেট
ফাউন্ডেশন এবং ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশ - এর যৌথ উদ্যোগে 'বাংলা ডে'
অনুষ্ঠান । গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর
২০১৭) দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক ফরাসী তথা ইউরোপীয়ান লোকজনের পাশাপাশি
এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে । ফ্রান্স ও বাংলাদেশের
' সেতু বন্ধন ' হিসেবে পরিণত হয় সমগ্র
অনুষ্ঠানটি । আইফেল টাওয়ার হতে বাংলাদেশের দুরত্ব প্রায় ৮ হাজার কিলো মিটার ।
কিন্তু ফ্রান্সে 'বাংলা ডে' অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে হয়েছিল যেনো এই
অনুষ্ঠান স্বদেশের মাটিতেই উদযাপন করছেন । একদিনের জন্যে সবাই চলে গিয়ে ছিলেন
প্রিয় মা, মাটি মানুষের সন্নিকটে ! এটাই ছিলো চমৎকার
অনুভুতি ।
মনোরম পরিবেশে দেশের কৃষ্টি
কালচার তুলে ধরার কোনো কমতি ছিল না দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালায় । বাংলাদেশের গান , পুঁথি
সাহিত্য, শিশুদের. চিত্রাঙ্কন, ভয়েস
অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা , সোনালী আঁশ অর্থাৎ পাটের তৈরী পণ্য, বেতের
তৈরি জিনিসপত্র, পুুরাতন জামদানি ও মসলিন কাপড়,
আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকার ছোট ছোট মডেল , ভ্যান গাড়ি , রিকশা , পুঁথি সাহিত্য, আলোকচিত্র , পোস্ট কার্ড, ফ্যাসটুন সকলের বিশেষ
দৃষ্টি কেড়েছে । এদিন মনে হচ্ছিলো, এ
যেনো ফ্রান্সের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ ।
প্রথমবারের মতো, ফ্রান্সের
এমন স্বনামধন্য এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন
ফ্রান্সে (বিসিএফ) - এর সকল সদস্য উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে অংশ নিযেছিলেন । তাঁরা
সেখানে রকমারি মিষ্টি যেমন : রসগোল্লা , চমচম , কাঁচা গোল্লা , রসমলাই সহ আরো অনেক খাবার, পানীয় এবং
স্নাক্স পরিবেশন করেছিলেন । ফরাসীরা অনেকটা লাইন
ধরেই বাংলা খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন । সৈয়দ মুজতবা আলীর 'রসগোল্লা ' গল্পে যেমন ইতালির চুঙ্গিঘররের
সবাই রসগোল্লার স্বাদে মজেছিলেন ঠিক তেমনি 'বাংলা ডে' ইভেন্টে ফরাসীরাও
সকলেই বাংলাদেশীয় সুস্বাধু খাবার বিশেষ করে মিষ্টি খেয়ে
মুগ্দ্ধ হয়েছেন ।
প্রবাসী অনেক বাংলাদেশী অবাক
হয়েছেন ফরাসি ছেলেদের লুঙ্গি পড়া দেখে । একজন ফরাসী বেশ আনন্দের সাথে রিকশা
ভ্যানে করে বাংলাদেশী প্রবাসীদের নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন । বিদেশের মাটিতে ভিনদেশি
যুবকেদের আমাদের দেশের এই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা দেখে অনেকেই সেলফি তুলেছেন ।
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকে লাইভ করেছেন । এই প্রোগ্রামে প্রায় ১০০০ জন
আমন্ত্রিত অতিথি এসেছিলেন যাঁর অধিকাংশই ছিলেন ফরাসি । বিশেষ এপ্রোগ্রামের
ইভেন্টের মধ্যে ছিলো : বাংলা দেশের ঐতিহ্যবাহী নাচ , গান, আল্পনা , বস্র
শিল্পের প্রদর্শনী , বাংলাদেশ কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের
ঝুঁকি গুলি মোকাবেলা করছে তার উপর ইয়ান আর্খথুস-বার্খথোন (Yann Arthus-Bertrand), আনাস্তাসিয়া মিকোভা কর্তৃক নির্মিত বিশেষ ডকুমেন্টারী প্রদর্শনী
ইত্যাদি ।
ফ্রেন্ডশীপ ফ্রান্সের সেক্রেটারি জেনারেল নিকোলাস দোপোখতে - এর সঞ্চালনায় কনফারেন্স একসেপসিওনে দ্যু রোনা খান ইভেন্টে বক্তব্য রাখেন গুড প্ল্যানেট ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়ান আর্খথুস-বার্খথোন (Yann Arthus-Bertrand) , ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম , ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশের পরিচালক, ফ্রান্সে 'বাংলাদেশ ডে' আয়োজনের অন্যতম রূপকার রুনা খান, বি সি এফ এম, ডি নুর প্রমুখ । ম্যাডাম রোনা খান তাঁর বক্তব্যে ফ্রেন্ডশীপ'র পরিচালিত আর্ত মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পের বিবরণ তোলে ধরেন। মুহুরমুহুর করতালির মাধ্যমে তিনিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে । ফুলের তোড়া দিয়ে ফ্রান্সে বরণ করা হয় প্রিয় এই আপনজনকে । এসময় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিদেশের মাটিতে দেশকে উপস্থাপনে প্রবাসীদের ভুমিকা অনেক ।
ফ্রেন্ডশীপ ফ্রান্সের সেক্রেটারি জেনারেল নিকোলাস দোপোখতে - এর সঞ্চালনায় কনফারেন্স একসেপসিওনে দ্যু রোনা খান ইভেন্টে বক্তব্য রাখেন গুড প্ল্যানেট ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ইয়ান আর্খথুস-বার্খথোন (Yann Arthus-Bertrand) , ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম , ফ্রেন্ডশীপ বাংলাদেশের পরিচালক, ফ্রান্সে 'বাংলাদেশ ডে' আয়োজনের অন্যতম রূপকার রুনা খান, বি সি এফ এম, ডি নুর প্রমুখ । ম্যাডাম রোনা খান তাঁর বক্তব্যে ফ্রেন্ডশীপ'র পরিচালিত আর্ত মানবতার কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পের বিবরণ তোলে ধরেন। মুহুরমুহুর করতালির মাধ্যমে তিনিকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে । ফুলের তোড়া দিয়ে ফ্রান্সে বরণ করা হয় প্রিয় এই আপনজনকে । এসময় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিদেশের মাটিতে দেশকে উপস্থাপনে প্রবাসীদের ভুমিকা অনেক ।
উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব
পরবর্তীতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বলেন, এই ধরনের আয়োজনে খুব আনন্দিত
হয়েছি । আমাদের দেশের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতিকে ফরাসিদের সামনে তুলে ধরতে এই ধরণের
আয়োজন দরকার বলে তাঁরা মতামত ব্যাক্ত করেন । সিলেট টু লন্ডন ফেইসবুক পেইজের
এডমিনরা কয়েকজনের অনুভূতি জানার জন্য সাক্ষাৎকার ভিত্তিক লাইভ প্রচার করেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন
বাংলাদেশ দূতাবাস প্যারিসের কাউন্সিলর এন্ড হেড অফ চ্যান্সারি হযরত আলী খান , বাংলাদেশ
দূতাবাসের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ম্যাডাম আনিসা আমিন ।
ফ্রান্স প্রবাসীদের পাশাপাশি বি সি এফ এর পক্ষ থেকে
অনেক মেম্বার উপস্থিত ছিলেন। যাঁদের মধ্যে অন্যতম বি সি এফ এর উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য
মোজাম্মেল , রিয়াজ , আল
মাহিন , আকাশ মোহামেদ হেলাল
, শাহ জাহান , শাহেদ ভূইয়াঁ ,
রাকিব , হিরণ , ফটো সাংবাদিক ফরিদ আহমেদ রনি , এস এম আহসানুল
করিম , আব্দুল আহাদ , আব্দুর
রহমান শিপন , হোসাইন মোহাম্মদ মনির , কাব্য কামরুল , সিনিয়র সাংবাদিক দেলওয়ার
হোসেন সেলিম, আব্দুল হাই ইমরান, হোসাইন
মোহাম্মদ মনির , আবুল কালাম আজাদ , দেলোয়ার হোসাইন , মিয়া ফয়সাল , সোহেল , শিপন, শাহ
জাহান চৌধুরীসহ ফ্রান্সে বসবাসরত অনেক গুণী শিল্পী এবং মানুষ জন উপস্থিত ছিলেন ।
এছাড়া, ফরাসী
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আর্টিস্ট,
সমাজ বিজ্ঞানীদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠান আরো জমজমাট
হয়ে ওঠে । প্রবাসে বেড়ে উঠা শিশুদের মধ্যে ছিলো অন্য রকমের একটি আমেজ পরিলক্ষিত হয়
। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য পুঁথি সাহিত্যের গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন পুঁথি
কাব্য সাহিত্যিক কাব্য কামরুল । আর্টিস্ট প্লাস্টিসিয়েন টেক্সটাইল ডিজাইনার
নিলুফার জাহান তাঁর লোকজ নকশা দিয়ে তৈরি কাপড়ের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে ছিলো
উপছে পড়া ভীড় । এসোসিয়েশন ইমপুল্স প্রজেক্টের পরিচালক মনের আনন্দে বাংলাদেশী
প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক দেলওয়ার হোসেন সেলিমকে নিয়ে রিকশা চালানোর দৃশ্য ছিলো
খুবই উপভোগ্য । পসকা কলোরিংয়ের চিত্রকলা, ভালোট ই ইউ,
লে ক্রিয়েটিফ দ্যু লন্ডাখ, সিফাত
আর্টিস্ট প্লাস্টিসিয়েন এর আকর্ষণীয় প্রদর্শনীগুলো ছিলো খুবই আকর্ষণীয় । আরো
ইভেন্টের আকর্ষণ ছিলো লেখক ও কবি শেজার দজার কার্যক্রম এবং শিল্পী কাকলী সেন
গুপ্তার কনসার্ট । কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হান্নান দেশে ফ্রেন্ডশীপ এর
সেবামুলক বিভিন্ন কার্যক্রমের ভুঁয়শী প্রসংশা করে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদেরকে
বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতার অনুরোধ জানান । বিসিএফ এর পরিচালক
এমডি নূর বলেন, ফ্রান্সের মাটিতে ফরাসিদের সহযোগিতায় এমন
বিশাল আয়োজনে অংশ নিতে পেরে তাঁরা আনন্দে অভিভূত
এবং গর্ববোধ করছি । তিনি প্রতি বছর অন্তত
একটা দিন ফ্রান্সের মাটিতে বাংলা ডে আয়োজন করার জন্য বিসিএফ - এর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানান ।
বিশ্বের অন্যতম শিল্পকলা, সাহিত্য,
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্যারিসে প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে 'বাংলা ডে' উদযাপন করা হবে । সেই
প্রত্যাশা করছেনা অংশ গ্রহণকারীরা ।
Post A Comment:
0 comments: