মোঃ কামরুজ্জামান, ফ্রান্স : কয়েক মাস যাবত ফ্রান্সের বাংলাদেশী কমিউনিটি এবং
সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে « ফ্রান্সে ভুয়া বাংলাদেশী পরিচয়ে কত শতাংশ ভারতীয় রয়েছে »
তা গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হচ্ছে । একই সাথে এই সকল ভারতীয়দের শনাক্ত করার সম্ভাব্য
উপায় এবং OFPRA & CNDA কিভাবে এই সকল
ভুয়া বাংলাদেশীদের সহজেই শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে তার বিভিন্ন উপায়
তুলে ধরছেন । বলা বাহুল্য, ফ্রান্সে অসংখ্য ভারতীয় ভুয়া বাংলাদেশী মিথ্যা পরিচয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা
করে থাকে।
২০০১-১৬, ১৬ বছরে ২৭,৩২৬ জন বাংলাদেশী প্রথম রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন করে, জনমনে এখন প্রশ্ন এর মধ্যে কত শতাংশ ভারতীয় ?
ফ্রান্সে ভারতীয়রা অনেক আগে থেকেই
বাংলাদেশী সেজে সংখ্যালঘু হিসেবে আশ্রয় আবেদন করতো রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করার জন্য। প্রকৃত পক্ষে, তারা ভারতীয় সংখ্যাগুরু, বাংলাদেশী সংখ্যালঘু নয়, তারা ভুয়া বাংলাদেশী
। OFPRA ৩০শে জুন ২০০৫ তারিখ
হইতে ভারতকে
নিরাপদ
দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর হইতে এর সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন ফ্রান্স
প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ভারতীয়রা বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়
সেজে বাংলাদেশী
পরিচয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করে থাকে, আর এই ভুয়া বাংলাদেশী ভারতীয়রা সহজেই প্রমাণ
করতে পারে যে তারা সংখ্যালঘু, যেহেতু তারা হিন্দু প্রধান দেশের নাগরিক। অপরদিকে এক
শ্রেণীর কুলাংকার, অসাধু বাংলাদেশী দালাল চক্র অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম সনদ
সহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ভারতীয়দের সরবরাহ করে থাকে। এই সকল চক্রের কোন সন্ধান পেলে সরাসরি
OFPRA & CNDA কে ফোনে বা ইমেইলে বা সরাসরি
গিয়ে বা পুলিশকে অবহিত করার অনুরোধ করেছেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
অপরদিকে ফ্রান্স প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশীদের দাবি, OFPRA & CNDA একটু সক্রিয় হলেই যে সব ভারতীয়রা ভুয়া
বাংলাদেশী সেজে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছে, তাদের শনাক্ত করতে পারবে। বাংলাদেশীরা এই
বিষয়ে OFPRA
& CNDA কে কিছু পদ্ধতি
অনুসরণ করা অনুরোধ করেছেন :
১। বাংলাদেশী পরিচয়ে রাজনৈতিক
আশ্রয় লাভকারীদের দেশে টাকা পাঠানোর তথ্য অনুসন্ধান বা যাচাই করলেই OFPRA &
CNDA সহজেই শনাক্ত করতে পারে, কে বাংলাদেশী
আর কে ভুয়া বাংলাদেশী পরিচয়ে ভারতীয়। কারণ
ভারতীয়রা
কোন দিন ১ টাকাও বাংলাদেশে প্রেরণ করে না, এরা ফ্রান্সের প্রধান প্রধান মানি ট্রান্সফার
( WESTERN
UNION + RIA + MONEY GRAM ) সহ লোকাল ব্যাঙ্ক এর মাধ্যমে ভারতে এদের পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা
প্রেরণ করে থাকে।
২। ভারতীয় নাগরিকরা সাধারণত
ভারতে BANK
ACCOUNT এ
টাকা প্রেরণ করে,
তাই BANK থেকেও ফ্রান্স প্রশাসন প্রয়োজনে তথ্য নিতে পারবেন। আবার ভুয়া বাংলাদেশী
পরিচয়ে ভারতীয়রা ভারতে নিজের নামে একটা ব্যাংক ACCOUNT ও রাখে, যা তাদের ভারতীয় পরিচয় পত্র দিয়া খোলা।
৩। Titre
de Voyage নিয়ে কাহারা বেশী ভারতে ঘুরতে
গেছে, এই ভাবেও এই সকল ভারতীয়দের ফ্রান্স প্রশাসন
শনাক্ত করতে পারবেন ।
৪। ভারতে টাকা ট্র্যান্সফারের
সাথে ভারতে ভিজিটের ক্রস চেকিং করলেও সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব এই সকল
ভুয়া বাংলাদেশীদের।
৫। OFPRA & CNDA এর বিচারক বাংলা ভাষার উচ্চারণগত দিক থেকেও শনাক্ত
করতে পারবেন যে, সে ভারতের নাকি বাংলাদেশের ! কারণ ভারতীয়দের বাংলার উচ্চারনের
সূর ও টান বাংলাদেশীদের চেয়ে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আবার এরা ইন্টার্ভিউ এর সময় অনুবাদকের
কথা বুঝতেছেনা, এই রকম ভান করে ইংরেজিতে উত্তর দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে থাকে। অনেকে
আবার ইন্টার্ভিউয়ে অসুস্থতার ভান করে থাকে।
৬।
ভুয়া বাংলাদেশী পরিচয়ের ভারতীয়রা তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনেই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বলে যে, তার পরিবারের ৪/৫ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে, তাই
তার পুরো পরিবার ভারতে চলে এসেছে, বাংলাদেশে তার আর কেউ নাই। এই কথা লিখার উদ্দেশ্য
হচ্ছে, রিফিউজি স্ট্যাটাস পেলে পরিবারের সদস্যদেরকে তার উছিলায় ফ্রান্সে আনার পথ খোলা
রাখা এবং ভারত কেন্দ্রিক সব কিছু চালু করা।
এছাড়া বাংলাদেশীরা
একটু সচেতন হলেই অনেক ভুয়া বাংলাদেশীদের শনাক্ত করা সম্ভব, যেমন যদি কেউ ভুয়া বাংলাদেশী পরিচয়ধারী ভারতীয়ের অফ্রার
ফাইল নম্বর এবং তার অরিজিনাল ভারতীয় আইডির তথ্য জানেন,তাহলে অফ্রাতে বিষয়টি জানাইলে
ভুয়া বাংলাদেশীর রিফিউজি স্ট্যাটাস বাতিল করে দিবে ফরাসী কতৃপক্ষ, কিন্তু এইক্ষেত্রে
ভুয়া বাংলাদেশী ভারতীয়ের জন্ম সনদ বা ভারতীয় আইডির যথাযথ প্রমাণ দিতে হবে। একই সাথে
তার ফরাসী আইডি বা রিসিপিসি নাম্বারও জানা থাকতে হবে, তবে এই ক্ষেত্রে অফ্রার ফাইল
নাম্বারটা গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক তথ্য হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে,
এই সকল ভুয়া বাংলাদেশীরা
ফ্রান্স সহ ইউরোপে বিভিন্ন
দেশে অপরাধ করলে তার দায়ও
পড়ছে বাংলাদেশীদের উপর ।
কারণ বাংলাদেশী পরিচয়ে এই সকল ভারতীয়রা মিথ্যা
রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেই, তাদেরকেও
সরকারী হিসাব মতে বাংলাদেশী
হিসেবেই গণ্য করা হয়।বিষয়টি
খুবই স্পর্শকাতর বিধায়, বিষয়টি
নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশী
কমিউনিতে ক্ষোভ
বিরাজ করছে ।
তাই ভুয়া
বাংলাদেশী পরিচয়ে ফ্রান্সে যে সকল ভারতীয়রা
মিথ্যা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা বা রাজনৈতিক
আশ্রয় লাভ করেছে,
তাদের শনাক্তে বাংলাদেশীদের মতামত
ও সাজেশন অনুসারে ফ্রান্স প্রশাসন
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন
এই প্রত্যাশা সকল বাংলাদেশীদের।
Post A Comment:
0 comments: