সুফিয়ান
আহমদ, বিয়ানীবাজার প্রতিনিধিঃ শিবির থেকে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ
করার পর থেকে দুর্ধর্ষ ক্যাডারে পরিণত হয়েছে বখাটে নাঈম। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সে
কোন না কোনভাবে কারো সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। মানুষের সাথে মারামারি এখন তাঁর জন্য
নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে তার উপর ক্ষুদ্ধ ও
ক্ষীপ্ত তার এলাকার জনসাধারণও। অনেকে তার এই আচরণকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলছেন।
আবার অনেকে বলছেন,
এর জন্য তারাই দায়ী; যারা তাকে ছাত্রলীগে টাই দিয়েছে।
অনুসন্ধানে
জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের কোনাগ্রামের বাসিন্দা নাঈম আহমদ (২০)
বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের একাদশ ২য় বর্ষের ছাত্র। দক্ষিণ মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে
থাকাকালীন অবস্থায়ই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে সে। শিবিরের সাথে জড়িত
হওয়ার পর থেকেই প্রায় প্রতিটি সভা সমাবেশে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো। একপর্যায়ে সে
মাধ্যমিক স্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হলে বর্তমান পরিস্থিতি আঁচ করে সে উপজেলা
ছাত্রলীগের পল্লব গ্রুপে যোগদান করে। আর এই গ্রুপে যোগদানের পরই বেপরোয়া হয়ে উঠে
সে। তুচ্ছ বিষয় নিয়েই সে ঝগড়া লাগিয়ে দিত যে কারো সাথে। এরপর শুরু করত মারামারি।
প্রতিপক্ষ গ্রুপের অনেক কর্মীকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে সে। তার এমন কান্ডে
অনেক সময় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাঁর গ্রুপকেও।
একের পর এক মারামারিতে তাকে নিয়ে
অতিষ্ট তাঁর গ্রুপের নেতারাও। কারো কথাই যেন শোনার তাঁর সময় নেই। সম্প্রতি নাঈম
পৌরশহরের একটি দোকানে তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে হামলার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীদের
ধাওয়ায় তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তিতে এটা নিষ্পত্তিও হয় এবং ভবিষ্যতে এভাবে আর
মারামারি করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তাঁর পরিবারকে। কিন্তু তা বেশিদিন না গড়াতেই
আবারো প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় সে। যদিও সোমবার সংঠিত সংঘর্ষটি ছিলো
দু’গ্রুপের মধ্যে কিন্তু এতে সে ছিলো অগ্রভাগে। যার জন্য পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত
সন্দেহে ৩ জনকে তাৎক্ষণিক আটক করে নিয়ে যায়। আটকৃতদের মধ্যে নাঈমও রয়েছে।
বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ কার্যবিধির ১৫১ ধারায় তাদের আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে
বুধবার আদালত তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ
দেন।
এদিকে
নাঈমের মত উঠতি বয়সী ক্যাডারদের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছেন পৌরশহরসহ আশপাশ এলাকার
ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। তারা এখন নিজেদের নিরাপত্তা ও ব্যবসায় পরিচালনা নিয়ে
চিন্তিত। এসব উঠতি বয়সী ক্যাডাররা কখন কার উপর হামলা করে তাঁর কোন ঠিক নেই। গত
সোমবার রাতে সাড়ে ৮ার দিকে এরকমই কয়েকজন উঠতি বয়সী ক্যাডারদের চোঁরাগুপ্তা হামলায়
গুরুত্বর আহত হয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের পল্লব গ্রুপের সমর্থক বাহারুল আলম
রমজান। যদিও বর্তমানে “রমজান” রাজনীতির
সাথে যুক্ত নয় কিন্তু পৌরশহরের ব্যস্ততম ব্যবসায়ীক এলাকা ইনার কলেজ রোডস্থ রাধুনী
হোটেলের সামনে তার উপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
চোঁরাগুপ্তা হামলায় নিজের প্রাণ বাঁচাতে পাশর্^বর্তী একটি কসমেটিক দোকানে গিয়ে
আশ্রয় নিয়ে এযাত্রায় প্রাণ রক্ষা পায় তাঁর। এসময় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
গুরুত্বর আহত অবস্থায় রমজানকে সিলেট
প্রেরণ করা হলে সেখান থেকে মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সে
স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এব্যাপারে
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা
পৌরশহরসহ আশপাশ এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছি। ব্যবসায়ীরা যাতে
নিরাপদে ব্যবসায় করতে পারেন সেজন্য আমরা তাদের যথাযথ সহযোগীতা করছে। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজারের
শান্তিশৃংখলা বিনষ্টে যেসকল উঠতি বয়সী ক্যাডাররা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে, আমরা
তাদের তালিকা তৈরী করছি। তারা যে দলের, যে গ্রুপেরই হোক না কেন তাদের ছাড়
দেয়া হবে না।
Post A Comment:
0 comments: