সুফিয়ান আহমদ : বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপিতে শুরু
হয়েছে বহিষ্কার-বহিষ্কার খেলা। এই বহিষ্কার খেলায় একপক্ষে রয়েছেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল ও আরেক
পক্ষে রয়েছেন উপজেলা বিএনপি’র
সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল হোসেন । তাদের এই বহিষ্কার খেলায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন নেতাকর্মীরা।
বিশেষ করে জেলা পরিষদের নির্বাচনে “সদস্য” পদে
জয়ী হওয়ার পর আকস্মিকভাবে দলের সিনিয়র সহ সভাপতি
নজরুল হোসেনকে বহিষ্কারের ফলে ক্ষুদ্ধ তাঁর বিপুল পরিমাণ কর্মী সমর্থক। হতাশ
তৃণমুল নেতাকর্মীরাও। তারা দলের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ এই নেতাদের এমন বহিষ্কার খেলায়
শুধু হতাশ আর ক্ষুদ্ধ নয়, ব্যক্ত করেছেন তীব্র প্রতিক্রিয়াও। তারা নেতাদের এমন খেলা
থেকে বের হয়ে এসে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার ও তাগিদ দিয়েছেন।
জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২ নং ওয়ার্ডে
“সদস্য” পদে নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির
কাউন্সিলে সমান সংখ্যক ভোট পেয়ে পরবর্তীতে লটারীর মাধ্যমে পরাজিত হওয়া দলের প্রভাবশালী
নেতা ও সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল হোসেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ গ্রামের সন্তান
হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা
জানানোর এই দৃশ্য পরবর্তীতে ফেইসবুকে দিলে তা দেখে নড়ে চড়ে বসেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি
নজমুল হোসেন পুতুল। এরপর তিনি আহবান করেন জরুরী সভার। গতকাল বুধবার বিয়ানীবাজার উপজেলা
বিএনপি’র জরুরী সভায় সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল ইসলামকে দলের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
জরুরী সভা শেষে মেইলের মাধ্যমে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে
অবহিত করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ।
তারা বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের
বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা
জাননোসহ সংগঠনের আদর্শের পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকায় তাঁকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত
নেয়া হয়েছে। উক্ত সভায় নজরুল হোসেনকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে বিয়ানীবাজার উপজেলা
বিএনপি’র সহ সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এদিকে নজরুল হোসেনকে বহিষ্কারের ২৪ ঘন্টার মাথায় বহিষ্কার
করা হয়েছে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক জরুরী সভায়
সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সহ সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন’র পরিচালনায়
সভায় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমদকে বহিস্কারেরর
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিয়ানীবাজার বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল হোসেন প্রেরিত
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বহিস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি
ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের আদর্শের পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায়
তাদের বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবং বহিষ্কারের বিষয়টি দলের চেয়ারপার্সনকেও
অবহিত করা হয়েছে। তারা দুইজন দলের নীতি নৈতিকতার বিরুদ্ধে গিয়ে অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকারের
নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছেন । এসমকি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
দায়িত্ব গ্রহণের পর বিয়ানীবাজারে সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনে তাদের মাঠে দেখা যায়নি।
অপরদিকে, উপজেলা বিএনপি’র শীর্ষ পদধারী এই নেতাদের এমন কাজকারবারে
ক্ষুদ্ধ ও হতাশ দলের তৃণমুলসহ উপজেলা পর্যায়ের সকল নেতাকর্মী। তারা নেতাদের এহেন কারবারে
ব্যক্ত করেছেন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের উপজেলা পর্যায়ের দু’নেতা বলেন,
বর্তমান অবৈধ সরকারের দমনপীড়নে দল আজ কঠিন সময় পার করছে। এই সময়ে ঐক্যবদ্ধ াকা আমাদের
জন্য জরুরী। কিন্তু আমাদের নেতারা যেভাবে নিজেদের মধ্যে রেশারেশী আরম্ভ করেছেন, তাতে
বিয়ানীবাজারে বিএনপি’র কি হাল হয় আল্লাহই জানে। তারা দলের শীর্ষ এই নেতাদের বহিষ্কার-বহিষ্কার
খেলা থেকে বের হয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে তোলার জন্য আহবান জানান।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি নজরুল
হোসেন জানান, আমি দলের পরিপন্থি কোন কাজ কখনো করি নাই। দলকে ভালোবেসে শহীদ জিয়াউর রহমানের
আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাঁতকে শক্তিশালী করার জন্য বিগত
সময়ে যেভাবে কাজ করেছি, এখনো সেভাবেই কাজ করছি। তিনি বলেন, আমি আমার গ্রামের বৃহৎ একটি
সংগঠনের দায়িত্বশীল হিসেবে এবং নিজের গ্রামের সন্তান হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী যদি আমাকে
শুভেচ্ছা জানিয়েও থাকেন তাহলে তো এটা দোষের কিছু নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে
আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র এরকম ইতিহাস অনেক আছে। কিন্তু নজমুল হোসেন পুতুল সেটা নিয়ে নোংরা
রাজনীতি করে গোলাপানিতে মাছ শিকারের যে আশা করছেন, তাঁর সেই আশা কখনো পূরণ হবে না।
বিয়ানীবাজার উপজেলা ও তৃণমুল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা তাঁর সেই আশা কখনো পূরণ হতে দেবে
না। তাছাড়া আমাকে বহিষ্কার করার মত এখতিয়ার তাঁর নেই।
এরপর বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুলের
সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি আমাকে ও দলের সাধারণ সম্পাদককে না কি কে
বা কারা বহিষ্কার করেছে। তাদের এই বহিষ্কারে আমার কোন মাথা ব্যাথ্যা নেই। তিনি বলেন,
দলের কে কাকে বহিষ্কার করতে পারবে তা দলের গঠনতন্ত্রেই বলা আছে, সুতরাং কারো বহিষ্কারে
আমার কোন কিছু আসে যায় না। আমি দলকে সংগঠিত
করার জন্য কাজ করছি, কাজ করে যাবো। কারো হুংকারে আমি ভীত নই। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব
পাওয়ার পর বিয়ানীবাজারে বিএনপি যেভাবে শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে তা বিগত অনেক সময়ের
চেয়ে এখন ভালো। যার স্বাক্ষী উপজেলার সর্বস্থরের নেতাকর্মী।
Post A Comment:
0 comments: