বিশেষ প্রতিনিধি : আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি সোমবার জামালপুরের
ইসলামপুর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই
কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। জানা যায়,যাচাই বাছাই কার্যক্রমকে
কেন্দ্র করে এক ধরনের অসাধু ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ের
উদ্দেশ্যে বা ব্যক্তিগত আক্রোশের দরুন বা কারোর
সাথে পূর্ব শত্রুতার জেড় ধরে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে প্র্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে মুক্তিযোদ্ধা
যাচাই বাছাই কমিটিতে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে। প্রমাণ সরূপ ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী
অফিসারের কার্যালয় থেকে ২৬/০১/২০১৭ তারিখে স্মারক নং ০৫৪৫৩৯২৯০০০১৪০০৫১৭৭৩ একটি চিঠি
মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম এর নামে ইস্যু করা হয়। চিঠি অনুযায়ী দেখা যায় পিতার নাম,
গ্রাম ও ডাকঘর বিহীন ইসলামপুর উপজেলার এ কে এম জহিরুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে
মৃত আবুল কাসেম একজন মুক্তিযোদ্ধা নন।
অথচ আবুল কাসেম ইসলামপুরের একজন সুপরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত।তিনি
দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ইসলামপুর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচিত
সাংগঠনিক ও দপ্তর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পূর্বে ইসলামপুর উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলে দুইটি গ্রুপ
বিদ্যমান ছিল, একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন আবুল কাসেম, এই কারণে অপর গ্রুপ তার কার্যক্রম
হিংসাত্মক চোখে দেখত ।মূলত এই সকল কারনে কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা তাকে নাজেহল ও হয়রানির
করার চেষ্টায় সব সময় লিপ্ত থাকত, এমনকি এরা তার নামে মিথ্যা মামলা দিতেও কার্পণ্য করে
নাই। পূর্বের শত্রুতার জের ধরেই এ কে এম জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আবুল কাসেম এর অবর্তমানে
তার নামে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে।
আবুল কাসেম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেসব সনদ পেয়েছেন এবং তার নাম যেখানে লিপিবদ্ধ
আছে, সেগুলোর বিবরণ :
১। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের দেশরক্ষা বিভাগ হতে ১১নং সেক্টর প্রধান মোহাম্মদ হামিদুল্লাহ খান এবং মুক্তিযুদ্ধের
সর্বাধিনায়ক আতাউল গনী ওসমানীর যৌথ স্বাক্ষরিত সনদ, যার ক্রমিক
নং ২৬৩৯৫।
২। ১৯৯৬-২০০১ সালে
প্রকাশিত মুক্তিবার্তার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা অনুযায়ী
তার নাম ছিল ০১১৩০৬০১২৩ নম্বরে।
৩। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ের চেয়ারম্যান জাকির খান চৌধুরী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এডজুটেণ্ট জেনারেল যৌথ স্বাক্ষরে ১৬/৯/১৯৮৪ তারিখে মুক্তি/ সুপা/ জামালপুর/৫০০৩/৮৪ নং স্মারকে সনদ প্রদান করেন।
৪। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ের মহাসচিব (প্রশাসন) মোঃ সালাহ উদ্দিন ও ভাইস চেয়ারম্যান (প্রশাসন) কবির আহমেদ খান যৌথ স্বাক্ষরে ১১/০৩/২০০১ তারিখে মুক্তি/ সুপা/৬৩২৮/০০১ নং স্মারকে সনদ প্রদান করেন। এই সনদে তাকে একজন যুদ্ধাহত
মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ প্রদান করেন।
৫। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কার্যালয়ের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ সরকারের মাননীয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ স্বাক্ষরে
১৮ই জুন ২০০১ তারিখে ৪৪৫৪১ ক্রমিক নং সনদ প্রদান করেন।
৬। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ২৩শে মে ২০০৫
তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন (৪ই সেপ্টেম্বর ২০০৩) নং মুবিম/প্র:৩/মুক্তিযোদ্ধা/গেজেট/২০০৩ /৪৭৯ নং গেজেটে
নির্ভুল ও চূড়ান্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার জামালপুর জেলার ২৩২১ নং এ তার নাম রয়েছে।
ফ্রান্স প্রবাসী আবুল কাসেমের ছেলে মোঃ কামরুজ্জামান জানান,
আমার পিতাকে জীবদ্দশায় মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে আমাদের জমিজমা গ্রাস করার জন্য কতিপয়
মুক্তিযোদ্ধা বেশ হয়রানী করেছে, এদের মধ্যে একটি চক্র স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে একত্বতা
প্রকাশ করে আমাদের হয়রানী অব্যাহত রেখেছে। আমার পিতার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল
করেছে, আমি তার দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই, এই মিথ্যা অভিযোগকারীর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি
হলে বাংলাদেশে কেউ এইভাবে বাংলাদেশের স্বর্ণ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা
অভিযোগ দাখিল করতে সাহস পাবে না। একই সাথে তিনি মুক্তিযোদ্ধার নামে যাচাই বাছাই কমিটি
বা অন্য কোথাও মিথ্যা অভিযোগ করলে তার নিশ্চিত শাস্তির বিধান রেখে আইন করার দাবী জানান।
তিনি আরও বলেন,বাংলাদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র হারিয়ে যেতে পারে, অনেকে
সনদ নাও সংগ্রহ করে থাকতে পারে, অনেকের বয়স্ক হয়ে যাওয়ায় স্মৃতি শক্তি লোপ পেতে পারে,
আবার অনেকে মারা গেছেন তার উত্তরাধিকারী নাও থাকতে পারে,
কেউ শত্রুতার জন্য প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করতে পারে, এই সবগুলো বিষয়
যাচাই বাছাই কমিটিকে গুরুত্বের সহিত দেখতে হবে।
Post A Comment:
0 comments: