বাহার উদ্দিন বকুল,জেদ্দা,সৌদি আরব: জীবন জীবিকার তাগিদে
হাজারো বাঙালির পদচারণায় মুখর আজ সৌদি আরব। মরুদেশে খরতাপে উঁচা টনমন,সময় সুযোগ পেলেই ছুটেযায় সাগর
সৈকতে বা পাহাড়ের ঢালে। কখনো বা মরুদ্যানে সবুজের আহ্বানে।
এমনি এক আয়োজনে জেদ্দায়‘ ফ্যামিলি বনভোজন। প্রিয়াহীন মরুদেশে এক ঘেয়ে মিকাটাতে বনভোজনের আয়োজনে
জাগে আনন্দের জোয়ার, পড়ে সাজ সাজরব।
আমন্ত্রিত হয়ে ওদের সাথে আমিও অস্থির। সবার মাঝে সুর আর ছন্দ; ‘চলোনা ঘুরে আসি যেখানে
নদী আছে।
গত ২০ জানুয়ারি শুক্রবার‘জেদ্দায় অর্ধশতাধিক পরিবার
পরিজনদের নিয়ে জেদ্দা-জিজান মহাসড়ক সংলঙ্গ এলাকায় আয়োজন করে ফ্যামিলি বনভোজন , গাড়ি বোঝাই হয়ে জেদ্দার উপকন্ঠে এক পেট্রোল পাম্পে জড়ো হই আমরা সকলে। গাড়িতে
পেট্রোল
বোঝাই করে, সেখান থেকে গাড়ি ছাড়ে সবাই
এক সঙ্গে। গাড়ির বহর ছুটে চলে জেদ্দা-জিজান মহাসড়ক ধরে।
ত্রিশ-চল্লিশ কিলো পাড়ি দিয়ে মহাসড়ক ছেড়ে গাড়ি ছোটে রাস্তাধরে।
ততক্ষণে দূরের
পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্য উঁকি দেয় পূব আকাশে। পাহাড়ের গায়ে পাহাড় হেলান দিয়ে তখনো ঘুমুচ্ছে অলস আমেজে।
সকালের
মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়া শীতল পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেহমনে। আরো বিশ-
পচিঁশ কিলো পাড়ি দিয়ে পীচ ঢালা পথ ছেড়ে গাড়ি নামে মরুপথে। ধু-ধুমরুর বুক
চিড়ে একে
বেঁকে এগিয়ে গেছে গাড়ি চলাপথ। গাড়ি চলতে চলতেই তৈরি হয়েছে এই
গাড়ি চলাপথ। কোথাও ঢালুতে নামছে, কোথাও মাড়িয়ে
যাচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশ, কখনো বা উঠে যাচ্ছে পাহাড়ে।
ঘন্টা দুই উঁচু- নিচু পথ পাড়িদিয়ে, নরম রোদ গরম হওয়ার আগেই গাড়ি বহর পৌঁছে নির্ধারিত‘ আল- বাহারা’ বনভোজন-স্থান মরুদ্যানে। দীগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির মাঝখানে এক খানি জলাশয়।
তবে হ্রদ বলা
চলেনা। কাছেই বেশ কিছু গাছ গাছালি, লতাগুল্ম,
সবুজের সমারোহ। অদূরে মাঝারি উচ্চতার একটি পাহাড়।
দূরে দৃষ্টি সীমায় এক পাশে পাহাড়ের সারি,
বাকিতি নদিকেধু- ধুমরুভূমি, বালি আর বালিয়াড়ি।
মন জুড়িয়ে যায় মরুর বুকের জলাশয়ের কিনারে দাঁড়িয়ে। স্বচ্ছ পানি টল টল করছে, মাছের রূপালী ঝিলিক নজর কেড়ে নিচ্ছে আচমকায়।
নাস্তা অবশ্য সারা হয়ে গেছে গাড়িতে আসার পথেই।
গাড়ি থেকে নামানো হয় ত্রিপাল, খুঁটি,
দড়াদঁড়ি। সামিয়ানার মতো টাঙিয়ে, কার্পেট
পেতে চলে বসার আয়োজ। রান্নার আয়োজনে লেগে যায় কতক। কার ও গিটারে
টুং টাং সূরের মুর্ছনা। জমে যায় আড্ডা, হৈ-
হুল্লুর, বাচ্চারা নেমে যায় পানিতে, নাচা নাচি করতে থাকে তাদের মন ভরে, বড়রা
ও নেমে পরে বল নিয়ে পানিতে ,
কেও বা আবার বরসি নিয়ে যায় মাছ ধরতে, গাছগাছালির
বনে, পাহাড়ের ঢালে ছুটে যায় অনেকে। আনন্দে সবাই আটখানা, ‘আজ হারিয়ে যেতে
নেইমানা’। আচার-আচরণে সকলেই ফিরে তাকায়, হারিয়ে যায় শৈশবে।
খুঁজেফিরে, ‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি, কি করি আজ ভেবে না পাই,
পথ হারিয়ে কোন বনে যাই, অমন অনাবিল আনন্দের দিনগুলো। পাহাড়ে চড়ে, বন বাদারে
ঘুরে, ছোট্ট হ্রদের স্বচ্ছ জলে ডুব-সাঁতার খেলে ক্লান্ত-শ্রান্ত সবাই। তখন চলে ভোজন-আয়োজন।
কার্পেটে পলিথিনের ফরাশ পেতে বসি সবাই। ততক্ষণে রাজ্যের ক্ষুধায় অস্থির
আমরা। আর বেনা কেন, সেইব কখন থেকেই বাসমতি চালের পোলাও, খাসির রেজালা, মাছ ভাজি, শুঁটকির ভর্তা, কাট জ্বালিয়ে বেগুণ
পুঁইয়ে ভর্তা, মুরগির ঝাল- কারির ঘ্রাণ নাকে ঢুঁ-মেরে যাচ্ছে থেকে থেকে। সুজন- সখাদের রান্না,
ভোজন হয় অসাধারণ। পেট পুরে খেয়ে, মন ভরে পেপসি-
সেভেনআপ পান করে মহাতৃপ্ত আমরা সকলে। পরন্ত বিকেলে সুরের ভূবন, সাংস্কৃতিক
আয়োজন। কৌতুক বলে হাসায় কেহ, কেহ করেন একক অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি।
ভাবীরা বসে বালিশ খেলায়, অতঃপর চলে গান। সুরের মূর্ছনা ছিল, ছিল বেসুরো
কন্ঠের আবেগ ঘন পরিবেশনা। মোটের উপর সবার অংশগ্রহ ণই অনন্দময় করে তোলে‘বনভোজন। আনন্দঘন এ আয়োজনে নেতৃ স্থানীয়রা হচ্ছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা
দেলোয়ার হোসেন, আলমগির হোসেন, বাহার উদ্দিন বকুল,হানিস সরকার, আল মামুন শিপন, গাজী শাহেদ রতন, রঞ্জু আহমেদ, আনোয়ার জাহিদ, জাহাঙ্গীর সরকার, হারুন, আমির উদ্দিন আহমেদ, বোরহান সহ আরও অনেকে। সবমিলিয়ে তারুণ্যের
উদ্বীপনায় ভেসে, হেসে- খেলে, খেয়ে-
গেয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সময় হয় ফিরে যাবার, অসাধারণ
একটি বনভোজন! সবার ভাবনায়- ফিরে আসবো আবার, আসবো বার বার।
Post A Comment:
0 comments: