জনপ্রিয়
অনলাইন : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের সাধারণ সম্পাদক পদে
ওবায়দুল কাদেরকে ঠেকাতে শেষ চেষ্টা করেও পারেননি।
জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতার
অন্যতম শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের পুত্র সোহেল তাজকে নিয়ে শেষ ট্রাম কার্ড ছুড়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরে আসা সোহেল তাজের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে তিনি
গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের মতো করে বোঝানোর
চেষ্টা করেছেন। এমনকি দলীয় আবেগ জড়ানো আওয়ামী লীগ পরিবারের আরো দু’একজনকে নিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক না করে
সোহেল তাজকে সাধারণ সম্পাদক করলে তিনি সার্বক্ষণিক সংগঠনকে সময় দিতে পারবেন। এমনকি
সোহেল তাজের দলের ভেতরে বাইরে যে ইমেজ রয়েছে তাও তুলে ধরেন। শুক্রবার রাতেই হোটেল
সোনারগাঁয়ে দলীয় সম্মেলনে আসা বিদেশী মেহমানদের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে সাংবাদিকদের
বলেন, সকল জল্পনা কল্পনা ভুয়া পরিণত হবে। কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। কোন
স্লোগানে কাজ হবে না। চমক নেত্রী আর তিনিই শুধু জানেন। এরপর থেকেই কাউন্সিলে একাংশ
ছড়িয়ে দিতে থাকেন সৈয়দ আশরাফই বহাল থাকছেন না হয় সোহেল তাজ সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন।
শনিবার
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সৈয়দ আশরাফ আবেগঘন বক্তৃতা করেন। কিছুদিন আগেও তিনি
নেতাকর্মীদের যেখানে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন খাই খাই স্বভাব ছাড়তে। পঁচাত্তরেও দল
ক্ষমতায় ছিল। সংগঠন ছিল। সকল বাহিনী ছিল। তবুও বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করা যায়নি। সেখানে
সম্মেলনে বলেছেন,
আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী
এবং পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ দল। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের সন্তানই নয়, তার
পিতাকে যে হত্যা করা হয়েছে অশ্রুসজল নয়নে আবেগআপ্লুত কণ্ঠে তাও তুলে ধরেন। তিনি
বলেছেন, তিনি দু’বার সাধারণ সম্পাদক থাকা কালে শেখ হাসিনার পরামর্শেই দল চালিয়েছেন। দলে কোন
ভাঙন ধরেনি। কোন ইজম তৈরি হয়নি। তার এই বক্তব্য কাউন্সিলর, ডেলিগেটদেরই
নয় শেখ হাসিনাকেও অশ্রুসজল করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকে বলছেন, সৈয়দ
আশরাফ দলের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত হলেও তার দুই মেয়াদে সংগঠনকে
সময় দেননি। দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া দূরে থাক মাঠের নেতাকর্মীরাও তাকে পাননি।
সম্মেলন ছাড়া সংগঠনের জন্য জেলা সফরও করেননি। এমনকি ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ও বর্ণীল
এবারের উৎসবমুখর জাতীয় সম্মেলন আয়োজনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যারা কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার
সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ওবায়দুল কাদের তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ছাত্রলীগের সভাপতি
থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতিতে দীর্ঘ পথ হাঁটা ওবায়দুল কাদের তৃণমূল থেকে নিরন্তর কাজ
ও সংগ্রামের ভেতর দিয়ে দল ও তার নেত্রীর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হয়েই সরকার ও দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। জেল নির্যাতন বারবার ভোগ
করেছেন। অনেক আগেই শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে আনতে
চেয়েছেন। কিন্তু ১/১১এর পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সংগঠন ও মন্ত্রণালয়য়ে সময় না
দেওয়ার পরও তিন দফা মন্ত্রী ও দুই দফা দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন। কারণ
তার পিতার আত্মত্যাগ এবং সৈয়দ আশরাফের প্রতি স্নেহশীল হৃদয়েরই উপহার ছিল এটি।
সোহেল
তাজের জন্য অতীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দীর্ঘদিন খালি রেখেছিলেন। শেখ হাসিনা
তার মন্ত্রিত্বের জায়গাও খালি করেননি। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বিব্রত করে
সোহেল তাজ মন্ত্রিত্ব,
সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেও বারবার
তাকে মাতৃস্নেহ দিয়ে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। এমনকি সোহেল তাজ না আসায় শেখ হাসিনা
ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সৈয়দা জহুরা তাজউদ্দিনের কাছে গেছেন এবং তাজউদ্দিন কন্যা
সিমিন হোসেন রিমিনকে সংসদ ও দলে ঠাই দিয়েছেন। শহীদ তাজউদ্দিনের আত্মত্যাগের প্রতি
শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা থেকে এবারও তিনি সোহেল তাজকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ
সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে আগামী দিনের রাজনীতির জন্য অভিজ্ঞ করে গড়ে তুলতে চান।
কিন্তু এবার সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি
গ্রহণ করেছেন সেটি থেকে নড়বেন না। দলের মাঠকর্মীদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের যে
যোগাযোগ, তার প্রতি যে নিঃশর্ত আনুগত্য এবং সাংগঠনিক দক্ষতা তিনের সমন্বয়ে আগামী দিনের
রাজনীতি ও নির্বাচনের উপযোগী শক্তিশালী সংগঠন দিতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী
ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তৃতায় জেলা
নেতাদের বলেছেন ঘরহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা দিতে। সংগঠনকে দারিদ্রমুক্তির সংগ্রামে
যুক্ত করতে সক্রিয় সাধারণ সম্পাদকের প্রয়োজন। সেখানে ওবায়দুল কাদেরকেই দায়িত্বশীল
মনে করছেন। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের বরাবরই বলে এসেছেন, তিনি
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নন। সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনা যাকে
দায়িত্ব দেন তাকেই দল মেনে নেব। শেখ হাসিনা কাউন্সিলরদের রোববারের কাউন্সিল
অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। রোববার সাড়ে নয়টা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে
দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে। মধ্যাহ্ন ভোজের পর শেষ অধিবেশনে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত
ও নতুন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ আর
উত্তেজনার প্রহর যাচ্ছে। এবারের কাউন্সিলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের নায়ক সজীব
ওয়াজেদ জয়ের অভিষেক ঘটছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আগামী দিনের নেতৃত্ব হিসেবে
তাকে কাউন্সিলদের সামনে পরিচয়ও করিয়ে দেন। মুহুর্মুহু করতালিতে দল তাকে অভিনন্দিত
করে। এবারের নবগঠিত কমিটিতে সজীব ওয়াজেদ জয় থাকছেন ওয়ার্কিং কমিটির এক নম্বর
সদস্য। শেখ হাসিনার রানিং মেট হিসেবে সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের।
প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হবেন সোহেল তাজ। জেল হত্যাকাণ্ডে শহীদ বঙ্গবন্ধুর
কনিষ্ঠ চার নেতার সন্তানদেরকে শেখ হাসিনা দলীয় রাজনীতিতেই মর্যাদা ও সম্মান দেননি, রাষ্ট্রপরিচালনায়
তাদের যুক্ত করেছেন। তাদের পিতাদের দেশ ও দলের জন্য আত্মত্যাগের ঋণ শোধ করতে তিনি
কার্পণ্য করেননি।
Post A Comment:
0 comments: