সুফিয়ান আহমদ,বিয়ানীবাজার
প্রতিনিধিঃ সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলায় বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনায়
ছিলো উপজেলার জনপ্রিয় নির্বাহী কর্মকর্তা
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের বদলীর বিষয়টি। অনেকে প্রাণচঞ্চল ও স্পষ্টভাষী এই কর্মকর্তার বদলীতে ব্যতিত
হয়েছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও তাঁর নতুন কর্মস্থল সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে
যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন।
নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানও যোগদানের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
কিন্তু শেষমেষ এর কোনটাই হলো না। অবশেষে বাতিল হলো তাঁর বদলী। আজ রোববার তাঁর এই বদলী আদেশ বাতিল হয়। নিজ
কর্ম দক্ষতার গুণে জনপ্রিয় হয়ে উঠা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে থাকতে হচ্ছে তাঁর
প্রিয় বিয়ানীবাজারেই। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলী বাতিলের খবরে আনন্দিত
উপজেলার সচেতন মহলসহ জনসাধারণ।
জানা যায়, প্রায় ১৬
মাস পূর্বে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস
থেকে মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে বিয়ানীবাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে
বিয়ানীবাজারে নিয়োগ দেয়া হয়। বিয়ানীবাজারে নিয়োগ পেয়ে তিনি সিলেটের বর্তমান এডিসি
(সার্বিক) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হন। শহিদুল ইসলামও উপজেলার
সর্বমহলে জনপ্রিয় ও জনসম্পৃক্ত একজন দক্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
কিন্তু শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পদোন্নতি হওয়ায় অনেকেই এউপজেলার পরবর্তি নির্বাহী
কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের মত জনসম্পৃক্ত হতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
যদিও বিয়ানীবাজার উপজেলায় নির্বাহী
কর্মকর্তা হিসেবে শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পূর্বের অনেকের অবস্থান সুখকর ছিলো না। যার
কারণে তাদের অনেককেই খুব কম সময়েই এখান থেকে চলে যেতে হয়েছিলো। কিন্তু শহিদুল
ইসলাম চৌধুরী এ উপজেলায় আসার পর তাঁর কর্মদক্ষতা, সাধারণ
মানুষের সাথে আন্তুরিকতা ও জনসম্পৃক্ততা তাকে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলো এই
উপজেলাসহ সর্বমহলে। যার জন্য তাঁর বিদায় বেলায় অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁর
সহকর্মীসহ শুভাকাংখী অনেকেই। এরপরও অনেকের আশা ছিলো এউপজেলায় অন্তত দক্ষ ও
জনসম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা নিয়োগ পাবেন। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। সিলেটের অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে মোঃ শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পদোন্নতি হওয়ায় এখানে
নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। গত বছরের ৩১শে
মে তিনি এখানে যোগদানের পর উপজেলার সাধারণ মানুষের সাথে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে,
আন্তরিকতা, সততা ও দক্ষ কর্মগুণে
সহকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মনে স্থান করে নেন। যার ফলে খুব কম দিনেই তিনি এ উপজেলায়
জনপ্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান। নির্ভীক ও নির্লোভ অমায়িক ব্যক্তিত্ব
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের দৃঢ়তা, সততা ও দক্ষতার ফলে বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে স্বচ্ছ ও
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা বিরোধীদলও
স্বীকার করে। কিন্তু দায়িত্ব পালনের মাত্র ১৬ মাসের মাথায় হহঠাৎ করে তাঁর এই বদলী
অনেককেই ব্যতিত করে তুলেছিলো। আকস্মিক এই বদলীর বিষয়টি উপজেলার সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিদের কাছে বোধ্যগম্য হয়ে ছিল
না। সকলেরই প্রত্যাশা ছিল তিনি আরো কিছু দিন বিয়ানীবাজারে দায়িত্ব পালন করবেন।
এরপরও অপ্রত্যাশীত বদলীর আদেশ হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ
তাঁর সহকর্মীরা তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়। মঙ্গলবার কর্মস্থল থেকে চলে যাওয়ার জন্য
প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষমেষ তারঁ চলে যাওয়া আর হলো না। এখানেই
থাকতে হচ্ছে তাকে। রোববার তাঁর এই বদলীর আদেশ বাতিল হয়ে যায়। আর এমন খবরে আন্দোলিত
হয়ে পড়েন তাঁর সহকর্মীসহ অনেকেই। মোবাইল ফোনে এবং অফিসে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান
অনেকেই। এসময় উৎফুল্ল অনেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় সেই উক্তির প্রথম লাইনটি
মনের আনন্দে বলে উঠেন, “ যেতে নাহি দেব হাঁয়” । আর শেষ পর্যন্ত এই উক্তিটিই
বাস্তবে পরিণত হলো তাঁর এই বদলীর আদেশটি বাতিল হওয়ায়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আপনাদের ভালোবাসাই আমাকে এখান থেকে
যেতে দিলো না। নিজ থেকে চলে যেতে
চেয়েছিলাম, কিন্তু এই উপজেলার মানুষের আন্তরিতা ও ভালবাসা
বিদায় বেলায় আমাকেও আবেগাপ্লুত করে তুলেছিল। অবশেষে আমার যাওয়া আর হলো না। তিনি
বলেন, আমি কৃতজ্ঞ এই উপজেলার মানুষদের কাছে-তারা যেভাবে
আমাকে তাদের কাছে টেঁনেছেন। আমি কখনো তাদের এ ভালোবাসা ও আন্তরিকতা ভুলতে পারবো
না। তাঁর দায়িত্ব পালনে তিনি আবারো সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
Post A Comment:
0 comments: