সুফিয়ান আহমদ, বিয়ানীবাজার প্রতিনিধিঃ
রুকনুজ্জামান রুকন যে কিনা মাত্র কয়েকমাস আগেও কারো কাছে কোন পরিচিত ব্যক্তি ছিলো না।
ছিলো সাধারণ একজন ছাত্র। মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকার সবাই তাকে চিনতেন। নম্র-ভদ্র ও শান্ত শিষ্ট স্বভাবের রুকন আজ মরণব্যাধী
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরতে বসেছে। ছেলের এমন অবস্থায় জায়গা-জমি বিক্রি করে
সন্তানের চিকিৎসা করতে করতে অসহায় হয়ে পড়েছেন রুকনের বাবা।
তাই উপায়ান্তর না পেয়ে সন্তানের
জীবন বাঁচাতে ছেলের জন্য সহযোগীতার হাঁত বাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতার
আহবান জানান রুকনের বাবা হাফিজ শামসুল ইসলাম। রুকনের বন্ধুরাও এসময় এলাকা থেকে ও বিভিন্নভাবে
তাঁর চিকিৎসার জন্য মানুষের ধারে ধারে ঘুরেছেন।
কিছু অর্থও পেয়েছেন কিন্তু তা রুকনের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না। যার জন্য
রুকনকে নিয়ে একধরণের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন রুকনের পিতা। বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের
সারপার গ্রামের বাসিন্দা ও এম.সি কলেজের শিক্ষার্থী রুকন দীর্ঘদিন থেকে মরণব্যাধী ব্লাড
ক্যান্সারে আক্রান্ত। বিগত ৩ মাস থেকে সে ঢাকা পি.জি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু
তাঁর এ চিকিৎসা পর্যাপ্ত নয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ যত দ্রুত সম্ভব রুকনকে ভারতে নিয়ে
যেতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রুকনকে ভারতে চিকিৎসা করাতে হলে প্রয়োজন প্রায়
৫০ লক্ষ টাকা। যা রুকনদের পরিবারের কাছে কাল্পনিক ব্যাপার। ঠিক এমনই সময় আশার আলো নিয়ে
রুকনদের পরিবারের কাছে বার্তা নিয়ে আসে যুক্তরাজ্যস্থ বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট
ইউ.কে। তারা রুকনুজ্জামান রুকনকে সুস্থ করে তুলতে এবং তাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার
ব্যয় বহন করবে বলে জানালে আনন্দে ফেঁটে পরে রুকনের পরিবার। এরপরই রুকনকে নিয়ে আশার
আলো দেখতে থাকে তাঁর পরিবার। রুকনও নিজের নবজীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সহায় থাকলে রুকন আবার তাঁর নবজীবন ফিরে পাবে, এমন প্রত্যাশা সকলের।
এদিকে, রুকনুজ্জামান রুকনের চিকিৎসার
জন্য সোমবার রাতে যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সীতে এক ফান্ড রাইজিং ডিনারের
আয়োজন করে বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট ইউ. কে।
ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট আয়োজিত এ ফান্ড
রাইজিং ডিনারে যুক্তরাজ্যস্থ বিয়ানীবাজারের সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিয়ানীবাজারের
সর্বস্তরের প্রবাসীরা উপস্থিত হয়ে রুকনের সাহায্যর্থে স্বতস্ফুর্তভাবে সহযোগীতার হাঁত
বাড়িয়ে দেন। এব্যাপারে বিয়ানীবাজার ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট ইউ.কে’র সভাপতি মোঃ মুহিবুর রহমান মুহিব জানিয়েছেন,
ভারতের ভিসা প্রাপ্তির পর ভারতে নিয়ে গিয়ে আমি নিজে সেখানে উপস্থিত থেকে রুকনের চিকিৎসা
নিশ্চিত করবো। রুকন যাতে সুস্থ হয়ে আবার সবার মাঝে ফিরে আসে, সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা
অব্যাহত থাকবে। এজন্য সকলের প্রয়োজন রুকনের মঙ্গল কামনার সাথে সাথে আমাদের জন্য দোয়া
করা। যাতে করে আমরা রুকনকে সুস্থ করে সবার মাঝে নিয়ে আসতে পারি। অসুস্থ রুকনও নিজের
সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সকলের দোয়া চেয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি কি বলবো আমার যে
বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। বিয়ানীবাজার ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট ইউ.কে আমাকে সুস্থ করে তোলার
জন্য তাদের মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করে আমার জন্য যে ভালোবাসা ও সহযোগীতার হাঁত বাড়িয়ে
দিয়েছেন তাঁর জন্য আমি ও আমার পরিবার তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমরা কখনো তাদের এই সহযোগীতা
ভুলতে পারবো না।
অপরদিকে, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার
হাসপাতাল মরণব্যাধী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রুকনুজ্জামান রুকন সম্পর্কে অবগত হয়েও
তাঁর চিকিৎসা সম্পর্কে কোন ধরণের খোঁজ-খবর নেয়া কিংবা সহযোগীতা না করার সংবাদে বিয়ানীবাজারের
সর্বমহলে নিন্দার ঝড় বইছে। ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলার সচেতন মহলও।
Post A Comment:
0 comments: