জনপ্রিয়
অনলাইন : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের
সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন অনেকটা শত্রুতার।
দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে বাগযুদ্ধে
লিপ্ত। সীমান্তে সামরিক উত্তেজনাও কম নয়। এরই মধ্যে ভারতে আলোচনায় আসলো সিন্ধু
পানি চুক্তি। পাকিস্তানের সঙ্গে ছয়টি নদ-নদী নিয়ে ভারতের এই চুক্তি। গতকাল সোমবার
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক
করেছেন। বিবিসিসহ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, নদীর পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ভারত।
গতকালের
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, রক্ত এবং
পানি একসঙ্গে বইতে পারে না। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের
ক্রমাগত হিংসার পরিবর্তে ভারত বরাবরই তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে
চেয়েছে। কিন্তু সবসময় তা আর সম্ভব নয়। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পানি সম্পদ সচিব
শশী শেখর, পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকর প্রমুখ।
বৈঠকে
সিদ্ধান্ত হয়, সিন্ধু, ঝিলম
ও চেনাব – এই তিনটি নদীর পানিকে
কীভাবে ভারত আরও বেশি ব্যবহার করতে পারে সেই রাস্তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হবে।
বর্তমান চুক্তি অনুসারে পাকিস্তান এই তিনটি নদীর পানির সিংহভাগ পেয়ে থাকে। কিন্তু
ভারত বলছে, পারস্পরিক আস্থা না-থাকলে সেই চুক্তি বজায়
রাখা সম্ভব নয়।
১৯৬০
সালে বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু অববাহিকার ছ’টি নদ-নদীর জল ভাগাভাগি নিয়ে যে চুক্তিতে সই করেছিল, গত ছাপ্পান্ন বছরে দুদেশের মধ্যে অনেক যুদ্ধবিগ্রহ সত্ত্বেও তাতে কোনও
ছেদ পড়েনি। কিন্তু উরিতে জঙ্গি হামলার পর থেকেই ভারতে এই ভাবনা শুরু হয়েছে এই
চুক্তিকে কীভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সম্ভব। যদিও ভারত সরাসরি এই
চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে নি। বরং প্রধানমন্ত্রী মোদীর
সঙ্গে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এটাই ঠিক হয়েছে – চুক্তি থেকে বেরিয়ে না-এসেও ভারত এখন
থেকে পাকিস্তানের ভাগের নদীগুলোর পানি বেশি করে ব্যবহার করবে। এই ধরনের কোনও কড়া
পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ ছিল বিজেপির পক্ষ থেকেও।
সাবেক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা মনে করেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী ৮০ শতাংশ পানিই পাকিস্তান পায় – আর তার ফলে ভুগতে হয় জম্মু-কাশ্মিরকে।
ফলে দুনিয়ার কে কী বলল, সেসব নিয়ে না-ভেবে এখনই এই চুক্তি
পর্যালোচনা করা দরকার।’ সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ও বিজেপি এমপি আর পি সিং-ও বলেছিলেন, ‘দুটো সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি ততক্ষণই বহাল থাকে
যতক্ষণ তারা একে অন্যের সার্বভৌমত্বকে মর্যাদা দেয়। পাকিস্তান ভারতের
সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করছে না – সরকারও একই কথা মানে, তবে শেষ পর্যন্ত তারা
চুক্তি বাতিল করার কথা ঘোষণা করতে পারল না মূলত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কথা
ভেবেই। কিন্তু সিন্ধু-ঝিলম-চেনাবের পানি বেশি করে ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে ভারত
জম্মু-কাশ্মিরে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে বলেই মনে করেন সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক
বিবেক কাটজু। কাটজু বলেন, ‘এই চুক্তি কিন্তু জম্মু ও কাশ্মিরেই খুব অপ্রিয় – কারণ তারা মনে করে এই চুক্তির ফলে
তারা তাদের ন্যায্য পানির হিস্যা পায়নি। এখন এই বাড়তি পানি সেখানে ব্যবহার করে
ভারত যেমন সেই ক্ষোভ সামাল দিতে চাইছে, তেমনি
পাকিস্তানকেও চাপে রাখতে চাইছে। কারণ এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, এই চুক্তি তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে পারেনি, কারণ
পাকিস্তানের জন্য এটি বেশিই দরাজ।’
১৯৬০
সালের চুক্তি অনুযায়ী, পূর্ব দিকের নদী বিপাশা, ইরাবতী, শতদ্রুর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতে।
পশ্চিমের তিন নদী সিন্ধু, ঝিলম, চেনাবের
নিয়ন্ত্রণ থাকবে পাকিস্তানের হাতে। সিন্ধুর মাত্র ২০ শতাংশ পানি চাষ ও বিদ্যুৎ
উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারবে ভারত। সিন্ধুর উৎপত্তি চীনের ভূখণ্ডে। তবে এর
পানিবণ্টন নিয়ে চীন কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি করেনি। চীন থেকে ভারতের ওপর দিয়ে বয়ে
সিন্ধু পাকিস্তানে পড়েছে। ভারত এই পানি দেওয়া কমিয়ে দিলে বড় সমস্যায় পড়বে
পাকিস্তান। তাদের কৃষিখাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মির,
পাঞ্জাবে বন্যার ভয়ও থাকছে। তাছাড়া ভারতকে বিপাকে ফেলার জন্য
পাল্টা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে চীনও। সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্রের
গতিপথে বাধ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে পানি সংকট দেখা দেবে উত্তর-পশ্চিম এবং
উত্তর-পূর্ব ভারতে। বন্ধ হয়ে যাবে বেশ কিছু কেন্দ্রের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। এদিকে
সিন্ধু চুক্তিকে অসাংবিধানিক জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন আইনজীবী এম এল
শর্মা। সেই মামলা জরুরি ভিত্তিতে শোনার আবেদন খারিজ করেছেন প্রধান বিচারপতি টি এস
ঠাকুর এবং বিচারপতি এ এম খানউইলকারের বেঞ্চ। আবেদনে বলা হয়েছিল, ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের হয়ে চুক্তিটি করেছিলেন তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী নেহেরু। রাষ্ট্রপতি করেননি। তাই এই চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা নেই।
সুত্র
: বাংলানিউজ,ইত্তেফাক,সংগ্রাম
Post A Comment:
0 comments: