জনপ্রিয়
অনলাইন ডেস্ক : বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার অন্যতম পথিকৃত কবি শহীদ কাদরী আর
নেই। তিনি আজ আমেরিকার নিউইয়র্কে একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে কবির বয়স হয়েছিল ৭৪।
তিনি স্ত্রী নীরা কাদরী, এক ছেলেসহ
অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব রেখে যান। নিউইয়র্ক থেকে আজ রোববার বাংলাদেশ সময়
সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় কবি শহীদ কাদরীর সহধর্মিনী নীরা কাদরী এসএমএস’এর মাধ্যমে ঢাকায়
সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব,
বিশিষ্ট প্রকাশক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হককে
কবির মৃত্যুর সংবাদ জানান। মফিদুল হক আজ রাতে সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেন,
নিউইয়র্ক সময় আজ সকালে কবি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
ইন্তেকাল করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভোগছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে কবি
সেখানে কিডনির চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। তিনি জানান, গত
কয়েকদিন ধরে নিউইয়র্কের হাসপাতালে তার কিডিনির চিকিৎসা চলছিল। এ অবস্থায় আজ তিনি
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মফিদুল হক জানান, কবির স্ত্রী
নীরা কাদরী প্রেরিত সংবাদে তিনি বলেছেন কবির লাশ দেশে নিয়ে আসা হবে। তিনি কবির
মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেন, আশির দশকের প্রথম দিক থেকে কবি
প্রবাস জীবন কাটাচ্ছিলেন। প্রথমে জার্মান, পরে লন্ডন এবং
বেশ কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছিলেন। কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট
ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা কবিতায় এক অসাধারণ প্রতিভাশীল কবি ও লেখক তিনি। তিনি
১৯৪৭ সাল পরবর্তীকালের বাংলা সংস্কৃতির বিখ্যাত কবিদের একজন, যিনি নাগরিক-জীবন-সম্পর্কিত শব্দ চয়ন করে নাগরিকতা ও আধুনিকতাবোধের
সূচনা করে বাংলা কবিতায় সজীব বাতাস বইয়ে দিয়েছেন। তিনি আধুনিক নাগরিক জীবনের
প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন। ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের তীক্ষ্ম শাণিত রূপ তার কবিতাকে বৈশিষ্ট্য দান করেছে।
শহর এবং তার সভ্যতার বিকারকে শহীদ কাদরী ব্যবহার করেছেন তার কাব্যে। তার কবিতায়
অনুভূতির গভীরতা, চিন্তার সুক্ষ্মতা ও রূপগত পরিচর্যার
পরিচয় সুস্পষ্ট। চল্লিশের দশকের শেষভাগ থেকে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। তার
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো, উত্তরাধিকার (১৯৬৭),
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪), কোথাও
কোনো ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দিও (২০০৯),
প্রেম বিরহ ভালোবসার কবিতা। শহীদ কাদরী বাংলা একাডেমী সাহিত্য
পুরস্কার, একুশে পদক (২০১১)সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি রবিউল হোসাইন বাজানান, শহীদ কাদরীর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতার আরেকজন শ্রেষ্ঠতম
কবিকে আমরা হারালাম। তিনি বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। আজ রাতে জাতীয়
কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কবির লাশ দেশে আনার
পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর দাফন করা হবে। পরিষদের সভাপতি কবি
মুহম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত কবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ
করেন।
Post A Comment:
0 comments: