সিরাজুল ইসলাম,তেহরান : ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হামেদান শহরের নোজেহ বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়ার কয়েকটি টিইউ-২২এম৩ দূর পাল্লার বোমারু বিমান এবং এসইউ-৩৪ ফ্রন্টলাইনার বোমারু বিমান সিরিয়ায় সহিংসতায় লিপ্ত উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস এবং জাবহাত ফাতেহ আশ-শাম বা নুসরা ফ্রন্টের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার সর্বপ্রথম এক বিবৃতিতে এ খবর দেয়া হয়।

রুশ মন্ত্রণালয় ওই বিবৃতিতে বলেছে, ১৬ আগস্ট টিইউ-২২এম৩ এবং এসইউ-৩৪ বোমারু বিমান ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হামেদান বিমানঘাঁটি থেকে বোমা ভর্তি করে নিয়ে সিরিয়ার দেইর-আজ জোর ও ইদলিব প্রদেশে আইএস এবং জাবহাত ফাতেহ আশ-শামের কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
বিবৃতি অনুসারে, রুশ বিমান হামলায় কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কমান্ড সেন্টার এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও জ্বালানি ডিপো ধ্বংস হয়েছে। বিমান অভিযানের সময় বহুসংখ্যক সন্ত্রাসীও নিহত হয়
রাশিয়ার এই বিবৃতির পর প্রায় পুরো বিশ্ব নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় নানা ধরনের খবর প্রচার। কেউ বলছেন- রাশিয়াকে ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে ইরান। কেউ বলছেন, ইরানে রাশিয়ার স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে। কেউ বলছেন, এর মাধ্যমে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব লঙ্ঘন হয়েছে। আবার কেউ কেউ ইরানের সংবিধান লঙ্ঘনের দোহাই দিচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে- আসলে কী হয়েছে?
রুশ বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, ইরান ও রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতায় জড়িত। এছাড়া, দু দেশ সিরিয়ায় সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ের সক্ষমতা ও সম্ভাবনা বিনিময় করছে। আলী শামখানি জোর দিয়ে বলেন- ইরান, রাশিয়া ও সিরিয়ার মধ্যকার সামরিক সহযোগিতা সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে; এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ইরানের আরো প্রতিক্রিয়া: ইরানের ঘাঁটি ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক সম্পর্কে দেশটির জাতীয় সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানি। তিনি বলেছেন, তার দেশে রাশিয়ার বা অন্য কোনো দেশের স্থায়ী ঘাঁটি নেই; দেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনো বিদেশি শক্তিকে ইরান বিমানঘাঁটি দিয়েও দেয় নি।
বুধবার সকালে ইরানের জাতীয় সংসদের উন্মুক্ত অধিবেশনে মস্কোর সঙ্গে তেহরানের কৌশলগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের যে সম্পর্ক রয়েছে তার অর্থ এই নয় যে, ইরান একটি সামরিক ঘাঁটি রাশিয়ার কাছে দিয়ে দেবে। ইরানের ঘাঁটি ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বের হওয়া অতিরঞ্জিত খবরকেও নাকচ করে দেন স্পিকার লারিজানি।
রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের কৌশলগত সম্পর্ক ও গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঞ্চলিক কয়েকটি দেশ ও আমেরিকার সমর্থনে এ অঞ্চলে যে সংকট তৈরি হয়েছে সে কারণে ইরান অনেকটা বাধ্য হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। ড. লারিজানি সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের সংবিধানের ১৪৬ নং ধারা অনুযায়ী দেশের ভেতরে কোনো বিদেশি শক্তির উপস্থিতি নিষিদ্ধ এবং এটি বলা নিষ্প্রয়োজন যে, ইরান কোনো বিমানঘাঁটি কোনো দেশকে দিয়েও দেয় নি।
অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান আলাউদ্দিন বোরেুজেরদি জানিয়েছেন, ইরানের অনুমতি নিয়েই হামেদানের নোজেহ বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছে রাশিয়া। তিনি জানান, রিফুয়েলিংয়ের জন্য হামেদানের নোজেহ বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছে রুশ বিমান এবং ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এ বিষয়ে রুশ কর্তৃপক্ষকে অনুমোদন দিয়েছিল। আলাউদ্দিন বোরুজেরদি বলেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের ক্ষেত্রে রাশিয়া, ইরাক ও সিরিয়ার সঙ্গে ইরান যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে তার অংশ হিসেবে রাশিয়াকে বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের এ সিদ্ধান্ত মোটেই দেশের সংবিধান পরিপন্থি নয়, কারণ রাশিয়ার কোনো বিমান ইরানের কোনো ঘাঁটিতে মোতায়েন করতে দেয়া হয় নি।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া: সিরিয়ায় তৎপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলার জন্য রুশ বিমানের ইরানি ঘাঁটি ব্যবহার করাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে আমেরিকা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার মঙ্গলবার বলেছেন, এ ঘটনা দুঃখজনক হলেও বিস্ময়কর নয়। ইরানি বিমানঘাঁটি ব্যবহারের ঘটনা এবং সিরিয়া সহিংসতায় ইরান ও রাশিয়ার সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা এখনো পর্যালোচনা করছে বলে জানান তিনি।
রাশিয়া বলেছে, সিরিয়ার সহিংসতা নিয়ে মস্কো ও তেহরানের মধ্যে যে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে তারই আওতায় ইরানি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মার্ক টোনার বলেন, উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে যে চুক্তি হতে যাচ্ছে, রুশ বিমানের ইরানি ঘাঁটি ব্যবহার সে পথে বাধা সৃষ্টি করবে না।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অবস্থান: ইরানের বিমানঘাঁটি ব্যবহারের পক্ষে সমর্থন দিয়ে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বুধবার বলেছেন, রাশিয়ার এ পদক্ষেপের কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব লঙ্ঘন করা হয় নি। নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ সংস্থার অনুমোদন ছাড়া ইরানের কাছে যুদ্ধবিমান সরবরাহ, বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করা যাবে না।
ল্যাভরভ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমরা ইরানের কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রি, সরবরাহ কিংবা হস্তান্তর নিয়ে কথা বলছি না। আমরা কথা বলছি ইরানের বিমানঘাঁটি ব্যবহার নিয়ে। সিরিয়ার সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য ইরানের অনুমতি নিয়েই দেশটির বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছে রুশ বিমান।
সিরিয়ায় তৎপর উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দামেস্ক সরকারকে সহযোগিতা করছে ইরান ও রাশিয়া। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিমান অভিযান শুরু করেছে। অন্যদিকে, সিরিয়া সংকটের শুরু থেকে বাশার আল-আসাদের সরকারকে সামরিক পরামর্শ দিয়ে আসছে ইরান। এ পর্যায়ে রাশিয়ার বিমানকে ইরানের ঘাঁটি ব্যবহার করতে দেয়ার মাধ্যমে এ লড়াই নতুন মোড় নিল বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানি বিমান ঘাঁটি ব্যবহারের খবর বের হওয়ার পরপরই চীন বলেছে, সিরিয়ার সেনাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেবে তারা। এছাড়া, ইরাকের আকাশসীমা রাশিয়াকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে বলে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-এবাদি ঘোষণা দিয়েছেন।
সুত্র : পূর্ব পশ্চিম ।
Axact

Jonoprio

জনপ্রিয়২৪ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বিশ্বজুড়ে রেমিডেন্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। স্পেনে বাংলাভাষী প্রবাসীদের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল।.

Post A Comment:

0 comments: