রুদ্র মিজান: রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়ি। পাঁচ তলা বাড়ির তৃতীয় তলার উত্তরের ফ্ল্যাট। সেখানে কথা হয় গৃহকত্রী শিউলি আক্তারের সঙ্গে। তিনি বললেন পশ্চিমের রুমে থাকতেন শাওন ও নায়িকা মাহী। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন এখানে সংসার করেছেন তারা। শিউলি আক্তার শাওনের মা। এই পরিবারের সদস্য, স্বজন থেকে শুরু করে আশ-পাশের সবাই জানান এরকম নানা তথ্য। নায়িকা মাহিয়া মাহী। এখন দেশের আলোচিত একটি নাম। নায়িকাদের বিয়ে হয়, বিরহ আসে, ভাঙ্গনের শব্দ হয়। সবই জানেন দর্শকরা। তাই নায়িকার একাধিক বিয়ে নিয়ে আলোচনা হওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না। তবু কেন আলোচনা!
হঠাৎ করেই মাহীর বিয়ে। বর সিলেটের এক বিত্তশালীর পুত্র। ভালো খবর। কিন্তু খবরের আড়ালে যখন অন্য খবর প্রকাশ পায় তখই শুরু হয় কৌতূহল।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়- তার আগেও বিয়ে হয়েছিলো মাহীর। ওই বিয়ের ও ঘনিষ্ট মুর্হূতের আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ার ইসলাম শাওন। যিনি নিজেকে মাহীর স্বামী দাবি করে বিয়ের কাবিননামা দাখিল করেছেন আদালতে।
পেশাগত কারণেই যেতে হলো আরও গভীরে। ১লা জুন দুপুরে। উপস্থিত হই দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়িতে। নায়িকা মাহীর শ্বশুরবাড়ি হিসেবেই পরিচিত বাড়িটি। এটি শাওনদের বাড়ি। বাড়ির আশপাশের লোকজন জানেন মাহী ওই এলাকার পুত্রবধূ। ওই বাড়িতে শাওন-মাহীকে একসঙ্গে আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন আশপাশের লোকজন। বিয়ের ছবি দেখিয়ে শাওনের স্বজনরা জানিয়েছেন শাওন-মাহীর বন্ধুতা থেকে বিয়ে পর্যন্ত নানা ঘটনা। হঠাৎ করেই শাওনকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করায় অবাক হয়েছেন তারা। অন্যদিকে এ ঘটনায় বিব্রত মাহীর বর্তমান স্বামীর পরিবার।
দক্ষিণ বাড্ডার ওই বাড়িতে গেলে কথা হয় শাওনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। শাওনের মা শিউলি আক্তার জানান, উত্তরা হাইস্কুল থেকে উত্তরা মডেল কলেজে একসঙ্গে লেখাপড়া করতে গিয়েই শাওন-মাহীর মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের আগেও শাওনদের বাসায় আসা-যাওযা করতো মাহী। গত বছরের শুরুর দিকে ঢাকা পদাদিকের একটি নাটক দেখতে গিয়েছিলো মাহী ও শাওন। ফিরে এসে শাওনের মাকে মাহী জানিয়েছিলেন, শাওনকে তিনি ভালোবাসেন। তাকে বিয়ে করতে চান। বিষয়টি মজা হিসেবেমেই মনে করেছিলেন শাওনের মা শিউলি আক্তার। পরবর্তীতে একইভাবে মাহীকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন শাওন। কিন্তু বয়স কম হওয়ার কারণে বিষয়টি এড়িয়ে যান তার মা।
পরে ৩রা মার্চ ফোনে উত্তরার বাসায় দাওয়াত দেন মাহীর মা-বাবা। পরদিন সপরিবারে ওই বাসায় গেলে সেখানেই শাওনের মা-বাবাকে মাহী-শাওনের বিয়ের প্রস্তাব দেন মাহীর বাবা আবু বকর সিদ্দিকী খোকন। তবে নায়িকার ক্যারিয়ারের বিষয় মাথায় রেখে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে বারণ করেন মাহীর মা-বাবা। শাওনদের বাড়িতেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ৩রা মে শাওনের চাচা মোফাজ্জল হোসেন রহিম মারা যাওয়ায় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মধ্য বাড্ডায় শাওনদের আত্মীয় সোলেমান রহমানের বাসায়। ওই বিয়ের একটি ছবি দেখিয়ে শিউলি আক্তার জানান, বিয়ের সাজে মাহী। মাহীর পেছনে তার বাবা, এক পাশে ফুফু, কালো ব্লেজার ও প্যান্ট পড়নে শাওন ও পাশে তার মা শিউলি আক্তার। এতে শাওনের এক চাচীও রয়েছেন।
এরকম অনেক ছবি ও একটি ভিডিও ফুটেজ ছিলো শাওনের কম্পিউটারে। তাকে গ্রেপ্তারের পর ওই কম্পিউটার, মোবাইলফোন ও ক্যামেরা নিয়ে গেছে ডিবি। বিয়ের দুই পক্ষের ঘনিষ্ট আত্মীয় ও বর-কনের ঘনিষ্ট বন্ধুরা ছিল। তার মধ্যে বিয়ের একটি ছবিতে মাহীর বান্ধবী প্রভা রয়েছেন। মাহীর বিয়ের স্বাক্ষী ছিলেন হারুন অর রশীদ। একটি ছবি দেখিয়ে তিনি জানান, বিয়ের পর তার মেরুল বাড্ডার বাসায় গিয়েছিলেন শাওন-মাহী। ওই সময়ে তার ছেলে-মেয়ে ও বোন ফাতেমার সঙ্গে একটি ছবি তোলেন। বিয়ের সম্পর্কে তিনি জানান, চার লাখ টাকা দেনমোহরে ওই বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি বাইরে প্রচার করতে আপত্তি ছিল মাহীর পরিবারের। এতে তার ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে বলে তারা জানিয়েছিলেন।
শাওন-মাহীর কক্ষ দেখিয়ে তার মা শিউলি জানান, ফ্ল্যাটের পশ্চিমের কক্ষেই থাকতেন শাওন-মাহী। সেখানে এখনও মাহীর কয়েকটি জামা-কাপড় রয়েছে। বিয়ের কয়েক কাপড়রও রয়েছে। বিয়ের পর শাওনের খালার বাড়িতে ডেমরার চঞ্চলপাড়ায় গিয়েছিলেন মাহীসহ পরিবারের সদস্যরা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-২০১৪ গ্রহণের অনুষ্ঠানেও শাওনের মাকে নিয়ে যান মাহী। এ বিষয়ে শাওনের মা শিউলি বলেন, বিয়ের আগে অনেক অনুরোধ করে মাহী ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সঙ্গে মাহীর মা দিলারা ইয়াসমিনও ছিলেন। লালগালিচা দিয়ে তাকে নিয়ে যান মাহী।
শাওনের বোন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নাফিসা জানান, ভারতে ফিল্ম করবে বলে ভাবী জানিয়েছিলো- বিয়ের বিষয়টি বাইরে প্রচার করা যাবে না। তবে বিয়ের আগে অগ্নি-২ স্যুটিং শেষ হয়েছিলো মাহীর। বিয়ের পর ফিল্মের কাজে বাইরে গেলেও তাদের বাসাতেই থাকতো মাহী। শাওনদের বাড়ির পঞ্চম তলার বাসিন্দা রোকসানা পারভিন জানান, বিয়ের পর  তারা সবাই শাওনদের বাসায় আসেন। মাহী সেদিন তাদের শরবত তৈরি করে খাওয়ান। একইভাবে দক্ষিণ বাড্ডার প-১৩ নম্বর বাড়ির গলির সততা লন্ড্রির আব্দুস সাত্তার বলেন, সবাই জানে মাহী ওই বাড়ির পুত্রবধূ। শাওন-মাহী প্রায়ই ওই বাসা থেকে একসঙ্গে আসা-যাওয়া করতেন।
শাওনের মা শিউলি বলেন, কথা ছিলো পরে আনুষ্ঠানিকতা হবে। এরমধ্যেই গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে মাহী এই বাসায় আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফোন দিলে বলে স্যুটিংয়ে, মিটিংয়ে আছি। আস্তে আস্তে এভাবেই দূরত্ব র্সষ্টি হয়। কিন্তু দূরত্ব কেন সৃষ্টি হয় এ সম্পর্কে শাওনও কিছু বলেননি তাদের। শাওনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেটের বিত্তশালী বর পেয়ে বিয়ে গোপন করে আবার বিয়ে করেছে মাহী। এটিইতো অনেক বড় অপরাধ। বিয়ের সকল প্রমাণ. শত শত স্বাক্ষী রয়েছে। আদলতে তা জানিয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর ছবি তার বন্ধুরা আপরোড করেছে। এতে আমার ছেলের কি অপরাধ আমি বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে মাহীর বক্তব্য জানতে বারবার তার ফোনে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। মাহীর বর্তমান শ্বশুড় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান জানান, তার ছেলে অপু ও মাহী দেশের বাইরে রয়েছে। মাহীর প্রথম বিয়ে সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমরা খুব বিব্রত। আগে জানলে এ বিয়ে হতো না।
সবকিছু মিলিয়ে অজানা আতঙ্কে আছেন শাওনের পরিবার। নায়িকা বলে কথা। প্রভাবশালী সকল শ্রেণীর সঙ্গেই সাধারণত ঘনিষ্টতা থাকে তাদের। এ কারণেই হয়তো তথ্য-প্রযুক্তি আইনি দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছিলেন ডিবির চৌকস কর্মকর্তারা! যাই হোক, বিয়ে ভাঙতেই পারে। নতুন করে বিয়ে হতেই পারে। কিন্তু একটা বিয়ে না ভেঙ্গে আরেকটা হতে পারে না। আইনে তা ফৌজদারি অপরাধ। একইভাবে অনুমতি ছাড়া কারও মানহানি হয় এরকম ছবি প্রচার-প্রকাশ কারও অপরাধ। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সমাধান হয়তো সেখানেই হবে। তবে এরকম ঘটনা কাঙ্খিত না কখনও।

[লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক মানবজমিন।]
Axact

Jonoprio

জনপ্রিয়২৪ একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। বিশ্বজুড়ে রেমিডেন্স যোদ্ধাদের প্রবাস জীবন নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে। স্পেনে বাংলাভাষী প্রবাসীদের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল।.

Post A Comment:

0 comments: