সুফিয়ান আহমদ,বিয়ানীবাজার প্রতিনিধিঃ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের
ষষ্ট ধাপে আজ বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে
আওয়ামীলীগের ১০ জন, বিএনপি’র ৯ জন, জাতীয় পার্টি ২ জন, জামায়াতে ইসলামীর (স্বতন্ত্র)
৫ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ২ জন, জাসদের ১জন, আন্জুমানে আল ইসলাহ’র
১ জনসহ মোট ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বৎসর পর অনুষ্টিত এই নির্বাচনে সব ইউনিয়নের
আনন্দ ও উৎসব মূখর পরিবেশের আমেজ সৃষ্টি হলেও কিছু এলাকায় সংঘাতের আশংকা করা হচ্ছে।
এরপরও নির্বাচন সফল ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।
কেন্দ্রগুলোতে প্রিজাইডিং অফিসারগণ শুক্রবার দিনে পৌছে বুথ তৈরীসহ সকল কার্য সম্পন্ন
করেছেন। ১০টি ইউনিয়নের ৯৩ টি কেন্দ্রে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯শ’৮০
জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, এখানে ৯৩ টি কেন্দ্রের
মধ্যে ৫৯টি কেন্দ্র ঝুকিপূর্র্ণ। এসব কেন্দ্রগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর
কড়া নজরধারী রয়েছে। অপর দিকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীরা
রয়েছেন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখী। খুব সহজেই তারা নির্বাচনে পাড় পাচ্ছেন না। যার কারণে
অনেক হেভিয়েট প্রার্থীও ধরাশায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এরপরও সরকারের উন্নয়ন
কাজকে সামনে এনে বিজয়ের মালা গলায় পরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে তাদের এই পথ
তেমন সুগম হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, উপজেলার ১ নং আলীনগর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত
বর্তমান চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলামের
মধ্যে ভোট যুদ্ধ হলেও এই যুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মামুন। ২ নং চারখাই
ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমদ আলী, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মাও. আমির হোসেন চৌধুরী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী
হোসেন মুরাদ চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের এই ত্রিমূখী লড়াইয়ে এগিয়ে
রয়েছেন মাওঃ আমির হোসেন। ৩ নং দুবাগ ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪জন। আওয়ামী লীগ
মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
পদপ্রার্থী (সাবেক চেয়ারম্যান) নাজিম উদ্দিন, বিএনপি মনোনীত নুরুল কিবরীয়া, জমিয়তে
উলামায়ে ইসলাম মনোনীত মাও নুরুল ইসলাম। এই ৪ প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে আব্দুস সালাম
ও নাজিম উদ্দিনের মধ্যে। তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আবাস পাওয়া গেছে। একই দলীয়
এই দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের মধ্যে বিএনপি’র নুরুল কিবরিয়া হঠাৎ চমক দেখাতে পারেন বলে
মনে করছেন অনেকে। ৪ নং শেওলা ইউনিয়নের বিএনপি মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান আখতার হোসেন
খান জাহেদ, আওয়ামী লীগ মনোনীত জহুর উদ্দিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত মাও. আব্দুল
হামিদ খান, জাসদ মনোনীত ইব্রাহীম আলী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাকিল হোসেন
রাজন। এ ইউনিয়নের ৫ প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে আকতার খাঁন জাহেদ, জহুর উদ্দিন ও
মাওঃ আব্দুল হামিদের মধ্যে। ৫ নং কুড়ারবাজার ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান
আলকাছ আলী, আওয়ামী লীগ মনোনীত হাজী মাহমদ আলী, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী তুতিউর রহমান
তোতা, বিএনপি মনোনীত আবু তাহের, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মাও. আজিুজুল
ইসলাম ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আসলমি আহমদ ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন। এদের মধ্যে মূল লড়াই হবে বিএনপি’র আবু তাহের ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহমদ আলীর মধ্যে। ৭ নং মাথিউরা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ
মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সিহাব উদ্দিন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
পদপ্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি কছির আলী (আব্দুর রব), বিএনপি মনোনীত জাকির হোসেন
সুমন, স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল ফাত্তাহ বকশী ও আমিনুল ইসলাম শাহেদ।
এদের মধ্যে মূল লড়াই হবে কছির আলী আব্দুর রব ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিহাব উদ্দিনের মধ্যে।
তবে এইউনিয়নে কছির আলী আব্দুর রব নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
৮ নং তিলপাড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর
রহমান, আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইসলাম উদ্দিন ও আব্দুল্লাহ সুফিয়ান (তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে
সমর্থন জানিয়েছেন), বিএনপি মনোনীত হাজী মো. আব্দুছ সাত্তার, আন্জুমানে আল ইসলাহ মনোনীত
হাফেজ আব্দুল বাছিত জবলু, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
এড.আজিম উদ্দিন । এদের মধ্যে মুল লড়াই হবে বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান,বিএনপি
সমর্থিত আব্দুস সাত্তার ও আনজুমানে আল ইসলাহ’র হাফেজ আব্দুল বাছিত জবলু’র মধ্যে। ৯
নং মোল্লাপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা আওয়ামী লীগ ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল
ইসলাম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম
এ কাদির ও জাকারিয়া হোসেন জাকার, বিএনপি মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতলিব, বিএনপি’র
বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল মান্নান, জাতীয় পার্টি মনোনীত গিয়াস
উদ্দিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এখানে বিএনপি মনোনীত আব্দুল মতলিব, বিদ্রোহী
আব্দুল মান্নান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত আশরাফুল ইসলামের মধ্যে ত্রিমূখী লড়াই হলেও বিভিন্ন
জরিপে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতলিব। তবে তাকে টপকিয়ে চমক দেখাতে পারেন
আব্দুল মান্নানও । ১০ নং মুড়িয়া ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী । জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র
প্রার্থী আবুল খায়ের, আওয়ামী লীগ মনোনীত সামছুদ্দিন মাখন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অহিদুর রেজা মাছুম, বিএনপি মনোনীত ছাদ উদ্দিন সোনা, স্বতন্ত্র
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আব্দুল হাসিব। তবে এই ইউনিয়নে মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ সমর্থিত
শামসুদ্দিন মাখন ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের মধ্যে।
তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। ১১ নং লাউতা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ
মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ জলিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
পদপ্রার্থী যুবলীগ নেতা গৌছ উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান
প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টি মনোনীত উপজেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক
আজিজুল ইসলাম লুকু ও বিএনপি মনোনীত ছাত্রদল নেতা আব্দুল হক আখতার । এই ৫ প্রার্থীর
মধ্যে মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর
মধ্যে। তবে আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের মধ্যকার এই লড়াইয়ে চমক দেখিয়ে বিজয়ের
মালা গলায় পরতে পারেন জামায়াত সমর্থিত দেলোয়ার হোসেন। এদিকে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে
সম্পন্ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৬ স্থরের পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি
আরো কয়েক স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত রাত থেকে নির্বাচনের দায়িত্বে
থাকা স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ শুরু করেছেন। ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর দিকে প্রশাসন ও গোয়েন্দা
সংস্থার প্রতিনিধিরা কড়া নজরাধারী শুরু করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ.আসাদুজ্জামান
জানিয়েছেন, যে কোন ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার
জন্য প্রস্তুুত রয়েছে প্রশাসন। আমরা আশা করি, কোন ধরণের সংঘাত ছাড়াই উৎসব মুখর পরিবেশে
বিয়ানীবাজারের ১০টি ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
Post A Comment:
0 comments: