অনলাইন ডেস্ক : খুনিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চট্টগ্রাম ব্যুরো : পুলিশ
সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মিশনের মূলহোতা আবু মুছাকে নিয়ে
রহস্যের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে রহস্যময় আচরণ করছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, মিতুকে
হত্যা করতে ৮ সদস্যের যে কিলিং মিশন হয় তার নেতৃত্বে ছিল কামরুল শিকদার ওরফে আবু মুছা।
হত্যাকা-ের আগের দিন রাতে মুছার বাসায় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে হত্যার ছক তৈরী হয়। সেখানে
হত্যাকান্ডে অস্ত্র সরবরাহকারী হানিফুল
হক ওরফে ভোলাইয়াও উপস্থিত ছিল। কিলিং মিশনের সদস্য ওয়াসিম ও আনোয়ারও আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দিতে মূলহোতা হিসাবে মুছাকে চিহ্নিত করেছে। ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে তারা
স্পষ্ট উল্লেখ করেছে টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করা হয়েছে। মুছার নেতৃত্বে তারা হত্যাকা-ে
অংশ নিয়েছে। তাদের জবানবন্দির সূত্র ধরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার
মো. ইকবাল বাহার বলেছেন হত্যা মিশনের প্রধান মুছা। সে বাকিদের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে।
মুছাকে ধরতে পারলে হত্যাকা-ের সকল রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, মুছাকে ধরা গেলে কার নির্দেশে সে ভাড়াটে খুনি নিয়ে মিতুকে হত্যা করেছে তা
নিশ্চিত হওয়া যাবে। অর্থাৎ মিতু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের পথে এখন একমাত্র সূত্র
আবু মুছা। অথচ সেই মুছাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এক সপ্তাহ আগে পুলিশের পক্ষ থেকে
দাবি করা হয়েছিল মুছাসহ হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সবাই তাদের হাতে। নাম প্রকাশ না করার
শর্তে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তখন স্বীকার কলেছিলেন, তাদের আটক করে দামপাড়া পুলিশ লাইনে
রাখা হয়েছে। এমন শোনা গেছে যে মুছাসহ আরও দুইজন আসামিকে ঢাকায় নিয়ে বাবুল আক্তারের
মুখোমুখি করা হয়েছে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন ‘কয়েকজন আসামীকে’ মুখোমুখি করতে বাবুল আক্তারকে ঢাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা
হয়েছে। তবে সিএমপির পক্ষ থেকে ওই আসামী কারা তা স্পষ্ট করা হয়নি। এবিষয়ে পুলিশ কমিশনারের
দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান। রোববার সকালে পুলিশ এই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার
অভিযোগে ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে দুইজনকে গ্রেফতার করার দাবি করে। ওই দিনই তাদের আদালতে
পাঠিয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সোমবার রাতে আটক করা হয় হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র
সরবরাহকারী ভোলাইয়া ও তার সহযোগী মরিনকে। তাহলে আবু মুছা কোথায়, সেকি এখনও পুলিশের
হাতে আটক আছে নাকি, তাকে আড়াল করা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন এখন সবত্রই। এদিকে মামলার তদন্তকারি
কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার মো. কামরুজ্জামান গতকাল বলেন, চাঞ্চল্যকর
মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকা-ের পলাতক খুনিদের গ্রেফতার করতে জোরদার অভিযান চালানোর পাশাপাশি
তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেজন্য মূলহোতা কামরুল সিকদার ওরফে আবু
মুছাসহ অন্যদের ছবিসহ সকল তথ্য দেশের সকল বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে পাঠিয়েছে সিএমপি।
তবে কখন থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। তিনি বলেন,
মিতু হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে জোর অভিযান চলছে। এরপরও তারা যাতে দেশ
ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য ছবিসহ সকল তথ্য দেশের সকল বিমান, নৌ ও স্থল বন্দরে পাঠানো
হয়েছে। নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এসপি বাবুল আক্তারের দায়ের করা মিতু হত্যা মামলায় আসামি
অজ্ঞাত তিনজন হলেও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া গ্রেফতার দুই আসামির জবানবন্দিতে উঠে আসে মোট
আটজনের নাম। এরা হলো, মূলহোতা কামরুল সিকদার ওরফে আবু মুছা, কিলিং মিশনে থাকা ওয়াসিম
ও নবী। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ভোলা, ঘটনাস্থলে হত্যাকারীদের সহযোগী
হিসাবে থাকা রাশেদ, কালু, শাহজাহান ও আনোয়ার। এদের মধ্যে ভোলা, ওয়াসিম, আনোয়ারকে গ্রেফতার
করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোলার সহযোগী মনির হোসেনকেও অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা
হয়েছে। আর গ্রেফতারের জন্য দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ঘটনার মূলহোতা কামরুল
সিকদার ওরফে আবু মুছা এবং সহযোগী রাশেদ, কালু, শাহজাহানের। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে
ওয়াসিম জানিয়েছেন, আবু মুছার নির্দেশে জিইসি মোড় এলাকার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে খুনের
জন্য তারা গত ৫ জুন ভোরে জড়ো হয়। এই হত্যা মিশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব
ছিল মুছার ওপরই। তার নির্দেশনা মতে টাকার বিনিময়ে মোট সাতজন এই হত্যাকা-ে জড়িত ছিল।
ওয়াসিম জানান, জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে সাতজনের একটি দল মিতু হত্যার মিশনে
অবস্থান নেয়। মূল হত্যা মিশনে অংশ নেন ওয়াসিম ছাড়াও মুছা ও নবী। এর মধ্যে মিতুকে অনুসরণ
করেন ওয়াসিম। পুলিশের উদ্ধার করা ভিডিও ফুটেজে যাকে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার
হতে দেখা গেছে সে হচ্ছে ওয়াসিম। যে মোটর সাইকেল চালিয়েছে সে মুছা। মিতু ছেলে মাহিরের
হাত ধরে মূল রাস্তায় বের হলে নিরিবিলি হোটেলের সামনে থাকা মুছা বিপরীত দিক থেকে মোটরসাইকেলে
এসে মিতুকে ধাক্কা দেয়। আর মোটরসাইকেল থেকে নেমে সামনে পেছনে ছুরিকাঘাত করেন নবী। এরপর
মিতুর পিছনে যাওয়া ওয়াসিম একটি মিস ফায়ার করেন। সেটি মিস ফায়ার হওয়ায় তার কাছ থেকে
পিস্তল নিজ হাতে নিয়ে মিতুর মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করেন মোটরসাইকেলের চালকের আসনে থাকা
আবু মুছা নিজেই। ঘটনাস্থলেই মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মুুছার মোটরসাইকেলে করে
নবী ও ওয়াসিম নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর আগে কালামিয়া বাজারে মুসা সিএনজি ভাড়া বাবদ
৫০০ টাকা দেয় ওয়াসিম ও অন্যদের। হত্যাকা- শেষে মুছার কালামিয়া বাজারের বাসায় চলে যায়
তারা। সেখানে হত্যাকা-ের ব্যাকআপ টিমের আনোয়ারসহ অন্য তিন সদস্য জিইসি মোড় থেকে সিএনজি
অটোরিকশা ভাড়া করে বহদ্দারহাট হয়ে কালামিয়া বাজারের বাসায় যোগ দেয়। এদের কাউকে তাৎক্ষণিক
২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে দেয় মুছা। এরপর সবাই নিজ নিজ বাসায় চলে যায়। রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর
ইউনিয়নের ঘাগড়া এলাকায় মামার বাড়িতে থাকতেন কামরুল সিকদার ওরফে আবু মুছা। বাড়ি পারুয়া
ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে। সাবেক বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আপন চাচা ফারুক সিকদারের
কন্যাকে বিয়ে করে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সোর্স হিসেবে
বিভিন্ন অপকর্ম, খুন রাহাজানি করে বেড়াতো সে। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় দুটি হত্যা
মামলা, একটি ডাকাতি মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশের সোর্সের দায়িত্ব পালন করতে
গিয়ে রাঙ্গুনিয়া ও আশপাশের উপজেলা রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির বিভিন্ন দুর্ধর্ষ ক্যাডার
এবং অপরাধীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। এরপর একের পর এক ঘটাতে থাকে অপরাধমূলক কর্মকা-।
কিন্তু মুছা পুলিশের সোর্স হওয়ায় পুলিশ কিংবা অন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে
সন্দেহ করত না।
Post A Comment:
0 comments: