অনলাইন
ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার পর
ইউরোপের রাজনীতি ও ঐক্যে ফাটল ধরেছে। ইইউ নেতারা ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়াকে ইতিবাচক
দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন না। তারা ইইউ থেকে দ্রুত সরিয়ে যেতে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথম কোনো দেশ ইইউ ত্যাগ
করলো। তবে ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রস্থানের পর আরো আট দেশ বেরিয়ে যেতে পারে বলে
গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ তালিকায় সবার উপরে রয়েছে অস্ট্রিয়া। দেশটির নিম্নকক্ষের
তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ও ফ্রিডম পার্টির সাবেক সভাপতি প্রার্থী নর্বার্ট হোফার
ব্রেক্সিটের প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন এক টুইট বার্তায়।
শুধু তাই নয়; নর্বার্ট হোফার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে তার দেশ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। দেশটির জাতীয় পরিষদের
তৃতীয় এই প্রেসিডেন্টকে অনেকেই অস্ট্রিয়ার ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ হিসেবে
উল্লেখ করে থাকেন। এছাড়া অনেকেই হোফারকে নিও নাৎসিপন্থী হিসেবেও মনে করেন।
ব্রেক্সিটের কয়েক ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া
এক পোস্টে হোফার বলেন, ‘#
ব্রেক্সিট, উত্তেজনাপূর্ণ একটি রাত। ইইউ
যদি বাঁচতে চায়, তাহলে নতুন কিছু শুরু করতে হবে’। ব্রিটেনের
পথে হাঁটতে পারে বেলজিয়ামও। দেশটির ২৯ বছর বয়সী ডানপন্থী ফ্লেমিশ ন্যাশনালিস্ট
পার্টির কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান টম ভ্যান গ্রাইকেন অভিবাসনবিরোধী প্লাটফর্মে
প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তিনি এবং তার দল বলছে, ইইউ যদি
তাদের অভিবাসনবিরোধী বার্তা শুনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা
ফ্লেক্সিট অথবা ফ্লেমিস্ট এক্সিট চাইতে পারেন। ডেনমার্কের
ড্যানিস পিপলস পার্টির (ডিপিপি) নেতা ক্রিশ্চিয়ান থালেসেন দাহল সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে ইইউ থেকে সরে যাওয়ার জন্য ব্রিটেনকে স্বাগত
জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্রিটেনের কাছ থেকে ইইউ অনেক
ক্ষমতা গ্রহণ করেছে এবং এখন তার মূল্য দিচ্ছে। ডিপিপি ইইউর বিরোধিতা করছে উল্লেখ
করে তিনি লিখেছেন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ডেনমার্ক কখনো
আত্মসমর্পণ করবে না। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্টের
প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ম্যারিন লি পেন ব্রেক্সিটের প্রতি
নিজের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে ইইউতে ফ্রান্সের সদস্যপদের বিষয়ে ব্রিটেনের
ন্যায় গণভোটের আহ্বান জানিয়েছেন। মতামত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইইউর ওপর ব্রিটেনের চেয়ে ফ্রান্সের নাগরিকদের মাঝে বেশি অসন্তুষ্টি
রয়েছে। জার্মানির অলটারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টির
চেয়ারম্যান ফ্রক পেট্রি শুক্রবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, নতুন ইউরোপের জন্য উপযুক্ত সময়। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্ক
করে দিয়ে তিনি বলেন, পরিবর্তন না হলে সার্বভৌমত্ব
পুনরুদ্ধারে আরো অনেক দেশই ব্রিটেনের পথে হাঁটবে। আগামী বছর তার দল দেশটির
পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক ব্যাবধানে জয়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির ন্যাশনাল কনজারভেটিভ ফিডেসজ
পার্টির প্রধান ভিক্টর অরবান গত বছর শরণার্থীদের স্রোত ঠেকাতে সীমান্ত এলাকা বন্ধ
করে দিয়েছিলেন। অভিবাসন ইস্যুতেও ব্রিটেনে একই ধরনের প্রশ্ন ছিল।
অর্বান শুক্রবার
একটি রেডিও সাক্ষাতৎকারে বলেন, অভিবাসন ইস্যুতে ইইউ
শক্তিশালী নাকি দুর্বল শুধুমাত্র এর তাৎপর্যপূর্ণ জবাবের মাধ্যমে ইউরোপ শক্তিশালী
হতে পারে। ইতালির ফাইভ স্টার মুভমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও কমেডিয়ান থেকে রাজনৈতিক
তারকা পরিণত হওয়া বেপ্পে গ্রিল্লও চলতি মাসে রোমের প্রথম নারী মেয়র হিসেবে
নির্বাচিত হয়েছেন। পুরনো রাজনীতিকদের ধাক্কা দিয়েছেন কমেডিয়ান থেকে রাজনীতিক বনে
যাওয়া এই নেতা। তিনিও ইইউর প্রতি তার বিরক্তির কথা প্রকাশ করেছেন। নেদারল্যান্ডসের ডাচ পার্টি ফর ফ্রিডমের প্রতিষ্ঠাতা গিয়ার্ট উইল্ডার্স
ইইউ ত্যাগের জন্য ব্রিটেনের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শাবাশ ব্রিটিশ! এখন
আমাদের পালা। সময় এখন ডাচ গণভোটের’! উল্লেখ্য, ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে বৃহস্পতিবারের গণভোটে ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ
ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, বিপক্ষে ৪৮ শতাংশ। সূত্র
: ওয়াশিংটন পোস্ট।
Post A Comment:
0 comments: