সুফিয়ান আহমদ ,বিয়ানীবাজার : মাস তিনেক আগের কথা। বিয়ানীবাজারের
মুড়িয়া ইউনিয়নের ছোটদেশ গ্রামের বাসিন্দা বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের মেধাবী ছাত্র জিবান
কিডনী রোগে
আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। বিকল হয়ে যায় তাঁর দু’টি
কিডনী। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর শরীরে কিডনী পুনঃস্থাপনের কথা বলা হলেও আর্থিক
অস্বচ্ছলতার কারণে তাঁকে নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তাঁর অসহায় পরিবার। যার জন্য জিবানও বেঁচে
থাঁকার আকুতি থেকে নিজেকে সরে নিয়ে গুনতে থাকে মৃত্যুর প্রহর। এমনতাবস্থায় জিবানের
পরিবার নিরূপায় হয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছে জিবানের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের
আকুল আবেদন জানায়। তাঁর পরিবারের এই আকুল আবেদন ও মেধাবী ছাত্র জিবানকে সুস্থ করে তোলার
জন্য এগিয়ে আসেন জিবানের গ্রামবাসী,সহপাঠীসহ সমাজের বিত্তবানরা। জিবানের জীবন বাঁচাতে
এগিয়ে আসে অনেক সামাজিক সংগঠনও। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আশার আলো ফুটে জিবানের পরিবারে।
জিবানও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে থাকে। একপর্যায়ে জিবানকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী ঢাকায়।
সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু কিডনী না পাওয়ায় তাঁর মমতাময়ী মা তাঁর নিজের
একটি কিডনী ছেলেকে দেয়ার কথা জানালে চিকিৎসকরাও সে অনুযায়ী কাজ করেন এবং মায়ের দেয়া
কিডনীই এখন জিবানের জীবনকে করে তুলেছে স্বপ্নময়। মৃত্যুঞ্জয়ী জিবান নবজীবন পেয়ে নিজেকে
নিয়ে আশার আলো বুনলেও তাঁরই মতো আরেক মেধাবী ছাত্র গুণছে মৃত্যুর প্রহর। আর্থিক অনটন
আর চিকিৎসার বিশাল খরচের বোঁঝা নিয়ে সে পড়ে আছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
মেডিকেল হাসপাতালে। মরণাপন্ন ওই মেধাবী ছাত্র সিলেট এম.সি কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের
ছাত্র রুকনুজ্জামান। ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ট ও সদাহাস্যজ্জল্য হিসেবে এলাকায়
পরিচিত মেধাবী ছাত্র রুকন বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের সারপার গ্রামের হাফিজ
শামছুল হক ও হালিমা খানমের পুত্র। তাঁেদর পাঁচ সন্তানের মধ্যে রুকন সবার ছোট। ছোট বলে
তাঁর প্রতি সবার আদরের মাত্রাটাও একটু বেশি। বন্ধুদের কাছেও রুকন একজন প্রাণবন্ত ও
বন্ধুবৎসল হিসেবে পরিচিত। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকার সবার কাছেও অত্যন্ত আদরের
সে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় পূর্ব মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে এস.এস.সি ও সিলেটস্থ জালালাবাদ কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি উত্তীর্ণ হওয়ার
পর এম,সি কলেজে বিএসসিতে (অনার্স) ভর্তি হয় রুকনুজ্জামান। একে একে তিনটি বৎসর পাড়ি
দিয়ে রুকন শেষ বর্ষে পদার্পণ করেছে। এখন কেবল ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার বাকী। এরই মধ্যে
হঠাৎ একদিন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে রুকন। যদিও মাঝেমধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হত সে কিন্তু
ওষুধ খাওয়ার পর তাঁ সেঁরে যাওয়ায় এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘাঁমাত না। মাস দুয়েক পূর্বে
জ্বরে আক্রান্ত হলে রুকনকে পরিবারের সদস্যরা জেলা শহর সিলেটের একজন চিকিৎসকের কাছে
নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার করা হলে তাঁতে রুকনের শরীরে ক্যান্সারের
লক্ষণ ধরা পড়ে। এমতাবস্থায় রুকনকে নিয়ে চিন্তিত
হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। চিকিৎসক পরামর্শ দেন ভালো চিকিৎসার। এরপরই রুকনকে নিয়ে তাঁর পরিবার
চলে যায় রাজধানীর পিজি হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দু’মাস থেকে তাঁর চিকিৎসা চললেও চিকিৎসক জানিয়েছেন,
ভারতে নিয়ে গিয়ে রুকনের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। আর এতে খরচ হবে প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ
টাকা। কিন্তু রুকনের বাবার পক্ষে এত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় তারা তাকে
নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে রুকনের চিকিৎসায় তারা সহায় সম্ভল সবই প্রায় বিক্রি
করে দিয়েছেন। যার কারণে আর কোন উপায়ান্তর না পেয়ে প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের
এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন রুকনের মমতাময়ী বাবা হাফিজ শামছুল হক। তিনি জানান, চিকিৎসকরা
পরীক্ষা করে জানিয়েছেন সে ব্লাড ক্যান্সারে
আক্রান্ত। তার শরীরের রক্ত কণিকা উৎপন্নকারী প্রত্যঙ্গটি(বোর্ণ মেরু) নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর থেকে ঢাকা পি.জি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মাথার চুল,
মুখের দাড়ি ও ভ্রু পড়ে গেছে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের চোঁেখর সামনে প্রিয়
এই সন্তানটা মরে যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায় তাঁ আমি বাবা হয়ে কিভাবে সহ্য করি। তিনি সমাজের
বিত্তবানদের তাঁর সন্তানের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাঁত বাড়িয়ে দেয়ার আকুল আবেদন জানান।
এদিকে রুকনকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর
এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা। নিজ এলাকার মেধাবী সন্তানকে এভাবে হারাতে চায় না তাঁর প্রিয়
গ্রামবাসী ও সারপার যুব সংঘ। পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নিয়ে ইতোমধ্যে সংঘের সদস্যরা
নেমে পড়েছেন রুকনকে বাঁচানোর লড়াইয়ে। সমাজের সহৃদয়, বিত্ত ও চিত্তবানদের সহায়তা প্রত্যাশা
করছেন সংঘের সদস্যরা। তারা রোকনের ছবি ও রোগের বিবরণ সম্বলিত পোস্টার ছেঁপে বিয়ানীবাজারের
সর্বস্তরের মানুষের কাছে বিলি করছেন। যদিও এখনো তাতে তেমন একটি সাঁড়া পড়েনি। এরপরও
তারা তাতে একটুখানিও আশাহত হচ্ছেন না। তাদের প্রত্যাশা বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের আরেক
মেধাবী ছাত্র মৃত্যুঞ্জয়ী জিবানের জীবন যেভাবে বাঁচাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে
এসেছেন, তেমনি রুকনের জীবন বাঁচাতেও এগিয়ে আসবেন সবাই। সাহায্যের হাঁত বাঁড়িয়ে দেবেন
রুকনের চিকিৎসায়। যার ফলে রুকনও জীবানের মতো ফিরে পাবে নবজীবন। আর নিজেকে নিয়োজিত করবে
দেশ ও দশের কল্যাণে।
রুকনুজ্জামানকে
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানাঃ
১) যৌথ একাউন্ট- হালিমা খানম- শাহিন আহমদ, সঞ্চয়ী হিসাব
নং- ০০০৭০৩১০০৫৩৯০৫, যমুনা ব্যাংক লিঃ, বিয়ানীবাজার, সিলেট।
২) বিকাশ নং- ০১৭২৪-৯৬৮৩১৩ (শাহরিয়ার হোসাইন নাজমুল)।
৩) প্রয়োজনে যোগাযোগঃ মারুফ-০১৭৬০৯১০৯১৫, শাহিন-০১৮৬২৯৭৫৬৫৮,
সাহেদ-০১৭৮১৬০৬৫৮৪।
Post A Comment:
0 comments: