মোঃ কামরুজ্জামান, ফ্রান্স প্রতিনিধি : ভবিষ্যত জীবনে পরিবার পরিজন
নিয়ে সুখে থাকার আশায় যারা অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে
চান ,তাদের জন্য বর্তমান সময়টি অত্যন্ত দুঃসময়ের। সম্প্রতি
অভিবাসী ঠেকাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও তুরস্কের মধ্যে ১৯শে মার্চ ২০১৬ তারিখের চুক্তি
অনুযায়ী ২০শে মার্চ ২০১৬ তারিখ হইতে বাংলাদেশী সহ যে সকল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীগণ
বা অবৈধ অভিবাসীগণ গ্রীসের দ্বীপ সমূহে আসবে, তাদেরকে তুরস্কে
ফেরত পাঠানো হবে। শুধু মাত্র যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ান নাগরিকদের জন্য আলাদা নিয়ম চালু
করেছে ।একজন সিরিয়ানকে ইউরোপ থেকে তুরস্কে ফেরৎ পাঠানোর বিনিময়ে, তুরস্ক থেকে অপর একজন সিরিয়ান অভিবাসীকে ইউরোপ ঢুকতে দেওয়া হবে এবং সর্বোচ্চ
৭২,০০০ সিরিয়ান পর্যন্ত এই নিয়ম বলবৎ থাকবে। তাই বাংলাদেশী
অভিবাসীরা দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্রীসে প্র্রবেশ করলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তুরস্ক
থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভবনা খুবই বেশী। চুক্তি অনুযায়ী গ্রীসের দ্বীপসমুহ
থেকেই শুধুমাত্র তুর্কী ফেরৎ পাঠানো হবে, গোটা ইউরোপ থেকে
না। ইউরোপ প্রবেশের আরেক দ্বার বলকানের রাস্তাও মার্চের প্রথম থেকে বন্ধ রয়েছে। তাই
বর্তমান সময়ে অবৈধ ভাবে ইউরোপে প্রবেশ করাটা অনেক দুরহ হয়ে পড়ছে।
গ্রীস কতৃপক্ষ ইতিমধ্যে চুক্তি অনুযায়ী তিন দফায় গ্রীসের কস,
লেসবোস এবং চিয়স দ্বীপে পাওয়া ৩২৬ অভিবাসীকে তুরস্কে ফেরত পাঠিয়েছে।
তুরস্ক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী এই সকল অভিবাসীদের ব্যাপারে পরবর্তী
পদক্ষেপ নিবেন।
Ø ফরাসী পত্রিকা www.leparisien.fr এর সূত্রে, প্রথম
দফায় দুইটা জাহাজ/ফেরী করে ১৩১ জন অভিবাসীকে নিয়ে গ্রীসের লেসবোস দ্বীপ ত্যাগ করেছে
তুর্কীর উদ্দেশ্যে, এর মধ্যে বেশির ভাগ বাংলাদেশী এবং পাকিস্তানী।
এরা কেউ গ্রীসে রাজনৈতিক আশ্রয় এর আবেদন করে নাই (আবেদন প্রত্যাখ্যান হলেও তুরস্কে
ফেরৎ পাঠানো হবে)।
Ø ফরাসী পত্রিকা www.liberation.fr এর সূত্রে, দ্বিতীয়
দফায় ০৮/০৪/২০১৬ তারিখে গ্রীস লেসবোস এবং চিয়স থেকে ১২৪ জনকে তুর্কী প্রেরণ,
২ বাংলাদেশী, ১১১ জন পাকিস্তানী,
৪ জন ইরাকী, ৪ জন ভারতীয়, ১ জন মরক্কান, ১ জন মিসরীয়, ১ জন প্যালেষ্টাইনী পরিচয় দানকারী, কোন সিরিয়ান
নাই। অজ্ঞাত কারণবশত একজন পাকিস্তানীকে তুরস্ক সরকার গ্রহণ না করে তাকে পুনরায় গ্রীস
এর লেসবোস ফেরৎ পাঠিয়েছে।
Ø ফরাসী পত্রিকা www.liberation.fr এর সূত্রে, তৃতীয়
দফায় ৪৯ জনের মধ্যে ১৮ বাংলাদেশী, ৯ জন বার্মীজ, ৪ পাকিস্তানীকে গ্রীস থেকে তুরস্কে পাঠিয়েছে।
(তথ্যসুত্রঃ সৈয়দ আবুল হাসান (সবুজ)
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও তুরস্কের চুক্তি অনুসারে ফ্রান্সের পুলিশ/CRS
গ্রীস এবং তুর্কী সীমানাতে কাজ করছে। যে সকল বাংলাদেশী অভিবাসীদেরকে
গ্রীস থেকে তুরস্ক পাঠানো হয়েছে, তাদেরকে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশে
ফেরৎ পাঠানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। অবৈধভাবে এসকল বাংলাদেশী ইউরোপে ক্ষণিকের জন্য
পাড়ি জমালেও, বর্তমানে এরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে, আর অবৈধভাবে এলে তাদের জন্য তেমন
কিছু করার সুযোগও থাকে না । তাই প্র্রবাসীরা দালালদের চাকচিক্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ
না হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।
ফ্রান্সের তুলুজে বসবাসরত প্র্রবাসীদের অকৃত্রিম বন্ধু ও মানবাধিকার
কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেনের মতে স্বপ্ন পূরণে ও অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় বাড়িঘর
ও পরিবার পরিজন ত্যাগ করে গ্রীস হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোটা এই সময়ে অনেকটা বিপদজনক,
অনেকটা নিজের পায়ে কূড়াল মারার সমান। কারণ বর্তমান সময়ের ইউরোপিয়ান
ইউনিয়ন ও তুর্কির মধ্যে চুক্তির দরুন উদ্ভব এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশীরা গ্রীসের দ্বীপে
অবৈধভাবে প্রবেশ করলে গোটা ইউরোপে থাকা অধিক পরিমাণে অধিবাসীদের সমস্যার দরুন,
তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভবনা খুবই বেশী।অপরদিকে ইউরোপের বিভিন্ন
দেশের বর্ডার ক্রসিং এর নিয়ম অনুযায়ী যারা অবৈধ ভাবে প্রবেশ করবে, তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট বা আজ্ঞুলের ছাপ নিবে গ্রীস কতৃপক্ষ, তাই তিনি যদি ভবিষ্যতে বৈধভাবেও ইউরোপের যে কোন দেশে প্রবেশ করতে চান,
সেই ক্ষেত্রে তা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করবে। তাই তিনি বাংলাদেশের
আদম পাচারকারী দালালদের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে মোটা অংকের টাকা খরচ না করার ও পরিবারকে
নিঃস্ব না করার জন্য আহ্বান এবং একই সাথে জন সচেতনায় প্র্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়কে
এই ব্যপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্র্রবাসীদের পক্ষ থেকে দাবী জানান ।
Post A Comment:
0 comments: