এখলাছ মিয়া : ক্ষুধার যন্রনা, ভীষন্ন দেহ-মন,বৈরী
আবহাওয়া,
অনিশ্চিত গন্তব্য সব মিলিয়ে বাবু'দের শারিরীক ও মানষিক অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে
যে, নৌকা থেকে উঠে ভূমিতে যে পা রাখবে, সে সামর্থটুকু কারও কাছে নেই ৷ কুর্দিশ লোকগুলোর
বেদম লাঠির প্রহারে একে একে নৌকা থেকে উঠে আসলে কুর্দিশরা তাদের অনুসরন করতে
বলে ৷ হাত দিয়ে ইশারা করা হয় , আপাদত ঐ উঁচু পাহাড়টায় আশ্রয় নিতে হবে ৷ আবহাওয়া ভাল হলে
সন্ধ্যার দিকে আবার
নৌকায় উঠানো হবে ৷
বাবু' মানষিক শক্তি সঞ্চয় করে একবার পাহাড়ের দিকে তাকায়
৷ নীচ থেকে উপরে তাকাতেই চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসে ৷ হঠাৎ বুঝতে পারে কেউ একজন
কিছু একটা দিয়ে আঘাত
করে সামনে চলার নির্দেশ করছে ৷ তাকিয়ে দেখে সে সবার পিছনে আর বাকী সবাই তার সামনে লাইন ধরে
হাঁটছে ৷ গভীর অরণ্যের মাঝখান দিয়ে হেঁটে পাহাড়ের কাছে আসতেই মনে হল, এ যেন সম্পূর্ণ পাথরের
তৈরী পাহার ৷ কিছুটা উপরে ওঠার পর ছোট ছোট ল্যান্ড স্কেপ, আবার গাছ-পালা, বড় বড় পাথরের টুকরো
ও গাছের শেকড় ধরে বেঁয়ে বেঁয়ে কিছুটা উপরে ওঠার পর আর কেউ সামনে এগুতে পারছিল না ৷
হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে একটি হেলিকপ্টার উড়ে গেল ৷ নির্দেশ আসল সবাই যেন পাহাড়ের গায়ে হেলান
দিয়ে যার যার জায়গায় বসে পড়ে, না হয় ধরা পড়ে যাবে ৷
হেলিকপ্টার চলে গেলে আবার শুরু হয় পাহাড় বেঁয়ে উপরে উঠা
৷ শরীরের সমস্থ শক্তি প্রয়োগ করে একেক জন উপরে উঠছে ৷ উপরে উঠতেই হবে, না উঠতে পারলে
-হয় কুর্দিশরা গুলি করে মেরে ফেলবে আর না হয় নীচে নেমে পড়লে গভীর অরণ্যে এমনিতেই মারা
যাবে ৷
টানা এক ঘন্টা পাহাড় বেঁয়ে উপরে উঠার পর মনে হল: মাথার খুব
কাছে খোলা আসমান
৷ জায়গাটা একটু সমতল, স্যাঁত স্যাঁতে ৷ কারও শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই , ক্ষুধার
যন্রনা, পিপাসায় সবাই যে যার মত করে মাঠিতেই শুঁয়ে পড়ে ৷এর ফাঁকে কুর্দিশ রা নির্দেশ
দেয়-যার যার কাছে ডলার/ইউরো আছে সব যেন বের করে তাদেরকে দেওয়া হয় ৷যদি না দেওয়া
হয় তাহলে সবাই কে গুলি করে মেরে ফেলা হবে ৷ জীবন বাঁচানোর তাগিদে একে অন্যের মুখের
দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে একে একে সবাই পরম যত্ন করে আগলিয়ে রাখা বিপদের বন্ধু ডলার/ইউরো
গুলো বাহির করতে থাকে ৷
সব ডলার/ইউরোগুলো জমা দিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে- বাবু' খুব মিনতি
করে বলে: আমাদের
কাছে যা ছিল আমরা
সব দিয়ে দিয়েছি, এখন দয়া করে আমাদেরকে কিছু খেতে দিন, না হয় সবাই মারা যাব ৷ বাবু'র
কথা শেষ হতে না হতেই সবাই হাউ-মাউ করে কান্নায় ভেংগে পড়ে ৷ সবাই বলতে থাকে-আমরা যাবনা গ্রীস,
আমাদেরকে
ইস্তানবুলে পাঠিয়ে দাও বলে, আবারও সবাই বুক ফাঁটিয়ে কাঁদতে থাকে ৷এক পর্যায়ে কুর্দিশদের
একজন তার ব্যাগ থেকে এক টুকরো খবুজ( এক প্রকার রুটি) ও এক বোতল(৫০০ মি:লি:) পানি বের
করে দেয় খাওয়ার জন্য ৷ সবাই অবাক চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে রয় ৷ ছোট ছোট টুকরো করে
একটা রুটিকে পনের জনে ভাগ করে অনেকটা কাড়া-কাড়ির মত এক সেকেন্ডেই খেয়ে ফেলে ৷ এক ডুক
করে পানি যেন গলা দিয়ে নামতে চাচ্ছিলনা ৷ ক' দিনের ক্ষুধার্ত পেটে রুটির এই ছোট্ট
টুকরোটি যেন আগুন
ধরিয়ে দিল ৷ সবাই আরও
খাবার ও পানির জন্য ছট-ফট করতে লাগল ৷ (চলবে.)
Post A Comment:
0 comments: