ঢাকা : বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন,
বিদেশিসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর
সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি করেছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ দাবি করে ইইউ। ইইউ’র রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুনসহ
বৈঠকে ইইউভুক্ত দেশগুলোর’র
রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গণতান্ত্রিক আচরণ নিশ্চিত ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।
রোববার বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, সাম্প্রতিক হত্যাকা-, আইএস এর উপস্থিতি আছে কি-না এবং বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৈঠকে সরকারের কাছে রাষ্ট্রদূতদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হলে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।বৈঠকে রাষ্ট্রদূতরা সাম্প্রতিক কয়েকটি হত্যাকা- ও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি-তা জানতে চান মন্ত্রীর কাছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বৈঠকে অংশ নেওয়া সকলের প্রশ্নের উত্তর দেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বৈঠকের বিষয়ে ইউরোপিয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলছে, এসব নজিরবিহীন হত্যাকা-গুলোকে দেশের মানুষের মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে ইইউ। এতে বিশ্বের দরবারে সহনশীল ও মুক্তচর্চার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে সুনাম আছে, তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুশীল সমাজের ক্ষমতায়নের বিশষে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
সুশীল সমাজের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মূল্যায়ন করা হয়।
রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকা-ের বিষয়ে আলাদা আলাদা করে বর্ণনা দেন রাষ্ট্রদূতদের। এসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের আরো বলেছেন, দেশীয় উগ্রপন্তীদের সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা তাদের নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে কি-না তা জানতে সজাগ রয়েছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গিয়েছে এই সকল হত্যাকা-ের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে জামায়াতুল মুজাহীদিন(জেএমবি), হিজবুত-তাহরীর, আনসা আল ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হারকাতুল জিহাদ আল ইসলাম(হুজি-বি), হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ এবং আল-মুজাহিদ এই হত্যাকা-গুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে বিএনপি এদলগুলোকে আশ্রয় (শেল্টার) ও সহযোগিতা করছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে আমরা বিএনপিকে এই দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু বিএনপি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।
বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরো মায়েদুনের নেতৃত্বে বৃটিশ, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, ইতালির রাষ্ট্রদূতগণ এবং অন্যন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
Post A Comment:
0 comments: