নাম আবুল আজাদ। বয়স ৩১ বছর।
পরিবারের ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড় তিনি। বড় হওয়াতে তার উপর সংসারের বাড়তি দায়িত্ব।
ছেলে এবং স্ত্রীকে দেখার পাশাপাশি বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে মা-বাবকেও দেখতে হয় তার।
ঢাকায় তার ছোট একটি খাবারের দোকার ছিল। সেখানে সব খাবার তিনি নিজেই তৈরি করতেন।
তবে পরিবারকে একটু স্বচ্ছল জীবন দেয়ার জন্য এবং আরো একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার
জন্য বিদেশে যাওয়ার মনোভাব তৈরি হয় তার। তার বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তার এই
ইচ্ছেতে উৎসাহ দিতো তারই পরিচিত একজন বড় ভাই আরেফিন(৪১)। এই দেশে একজন শেফের যতটা
মূল্য বাইরের দেশে এই পেশায় রয়েছে দ্বিগুন চাহিদা। বিধায় এই দেশে ব্যর্থ চেষ্টা না
করে লন্ডনে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাকে।
ভাই সুলভ আরেফিনের কথায় একটু
হলেও ভরসা পায় আজাদ এবং তার স্ত্রী। লন্ডনে যাওয়ার জন্য কেমন কি লাগবে জানার জন্য
আরেফিনের বাসায় যান আজাদ ও তার স্ত্রী। আরেফিন তাদের ভরসা যোগায় লন্ডনে যাওয়ার
জন্য স্পনসার থেকে শুরু করে সব রকমের সহায়তা দেবেন আরেফিন নিজেই। এরপরও কোন
সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না আজাদ। শেষমেষ নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেতে
রাজি হয়ে যান তিনি। লন্ডনে পারি দেয়ার জন্য পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বউয়ের অলঙ্কার সহ
কিছুই বাকি রাখেনি বিক্রি করতে। অনেক প্রতীক্ষার পরে আসলো সেই দিন যে দিন আরেফিন
প্রবাসে যাওয়ার জন্য রওয়না হলো। দেশ ছেড়ে প্রবাসে নিজেকে যে জায়গায় আবিস্কার করলেন
তিনি তা হলো পশ্চিম স্কটল্যান্ডের পর্বতের উপর একটি হোটেল নাম স্টুয়ার্ট। টানা তিন
থেকে চার মাস তাকে এই হোটেলের মেঝে থেকে শুরু করে খাবার পরিবেশন করা, হোটেলের
আশেপাশে পরিষ্কার রাখার কাজ করতে হতো। এত কাজ বিনিময়ে মিলতো না পারিশ্রমিক।
ভাইসুলভ বন্ধু আরেফিনের দেখা পেত অমবস্যার চাঁদের মতো। বেতন নেয়ার সময় আরেফিনকে
হোটেলে আসতে দেখা যেত। প্রবাসে এনে তাকে দিয়ে এমন কাজ করানো কেন হচ্ছে জানতে চাইলে
সহসাই রেগে উঠতো আরেফিন। কাজ না করতে চাইলে স্পনসারশিপ বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে
দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। বেতন কবে নাগাদ পাবে জানতে চাইলে বলা হতো যেদিন ভিসার টাকা
পুরোপুরি চুকিয়ে যাবে তখনই বেতনের মুখ দেখবে। সবকিছু গুটিয়ে দেশে
ফিরে আসার ইচ্ছে প্রায়ই জেগে ওঠে আজাদের মনে। কিন্তু চাইলেই আসতে পারেন না তিনি।
দেশে গিয়ে বাবা মাকে কি করে মুখ দেখাবেন তিনি। নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে যার উপর ভরসা
করে বাবা মা বসে আছে তাকে সবকিছু হারিয়ে দেশে দেখলে কিভাবে সহ্য করবেন তারা। যে
হোটেলে আজাদ কাজ করতো সেখানে নেই কোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা, ফোন থাকলে
ক্রীতদাসদের সেই ফোন ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি হোটেলে যেসব পর্যটক আসতো
তাদের সঙ্গেও কথা বলা ছিল একদম নিষেধ। বিধায় প্রায় কয়েকমাস পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ
করতে পারেননি আজাদ। মনে মনে ভাবতো কিছু একটা গরমিল
আছে । আরেফিন তাকে ফাঁদে ফেলেছে। তা না হলে যেখানে তার লন্ডন যাওয়ার কথা সেখানে
তিনি স্কটল্যান্ডে কেন। আর কেনই বা টাকা ছাড়া দিন রাত গাধার খাটুনি খাটছেন। দিন
যেতে লাগলো সেই হোটেলে আজাদের সঙ্গে দেখা হলো আর একজন বাংলাদেশী নাগরিকের। বাড়ি
চট্টগ্রাম। তার কাছ থেকে আরেফিন সম্পর্কে পরিষ্কার হয় আজাদ। এরপর দুজন মিলে
পালানোর চেষ্টা করেন এখান থেকে। কিন্তু পালাবে কি করে তাদের পাসপোর্ট ও
স্পনসারশিপ সবকিছুইতো আরেফিনের কাছে। একদিন হঠাৎ করে হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ।
আটক হয় আরেফিন। সেই সুযোগে আরেফিনের নামে মামলা করে আজাদ। কিন্তু এতে করে সে নিজেও
ফেঁসে যায়। কারণ তিনি ছিলেন অবৈধ পথে আসা একজন বাংলাদেশী শ্রমিক। তাকেও আটক করে
পুলিশ। তবে আরেফিনের শেষ না দেখে ছাড়বে না এমনটাই ব্রত ছিল তার।এরই মধ্যে আর একটি
কেসে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আনা একজন নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে জেল হয় তার।
ওদিকে আজাদকে একজন অসহায় এবং প্রতারণার শিকার স্বাব্যস্ত করে ছেড়ে দেয় দেশটির
আদালত। আরেফিনের জেল হওয়ার পর মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আজাদ
স্কটল্যান্ডের একটি রেষ্টুরেণ্টে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু স্পনসারশিপ বাবদ
দশ হাজার ডলার জমা দিতে হবে। কিন্তু তার কাছে কোন টাকা নেই বললেই চলে। পরে তিনি ও
তার মতো আরো তিনজন মিলে দেশটির প্রবাসী সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে টাকা ঋণ নেয়।
শেষ পর্যন্ত চাকরিটি পেয় যায় আজাদ তবে এখন পর্যন্ত দেখতে পারেনি সুখের মুখ। প্রতিমাসের বেতন থেকে এখনও তাকে একটি অংশ ঋণ পরিশোধের জন্য দিয়ে দিতে হয়। নিজের দেশে বাবা-মায়ের সর্বস্ব হারিয়ে এমন একজন আজাদ নয় আরো হাজারো আজ কঠোর পরিশ্রম করে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়ে দেশে বাবা মাকে টাকা পাঠায়। তারা সবাই একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্ধ বিশ্বাস করে মানুষকে। একজন আজাদ না হয় এত প্রতিকূলতার পর ঘুরে দাড়িয়েছেন কিন্তু এমন অনেক আজাদ আছে যারা উপায়ন্তর না দেখে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
শেষ পর্যন্ত চাকরিটি পেয় যায় আজাদ তবে এখন পর্যন্ত দেখতে পারেনি সুখের মুখ। প্রতিমাসের বেতন থেকে এখনও তাকে একটি অংশ ঋণ পরিশোধের জন্য দিয়ে দিতে হয়। নিজের দেশে বাবা-মায়ের সর্বস্ব হারিয়ে এমন একজন আজাদ নয় আরো হাজারো আজ কঠোর পরিশ্রম করে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখিন হয়ে দেশে বাবা মাকে টাকা পাঠায়। তারা সবাই একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্ধ বিশ্বাস করে মানুষকে। একজন আজাদ না হয় এত প্রতিকূলতার পর ঘুরে দাড়িয়েছেন কিন্তু এমন অনেক আজাদ আছে যারা উপায়ন্তর না দেখে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
সুত্র:
বাংলা মেইল ।
Post A Comment:
0 comments: