ঢাকা: ঐশী
রহমান, অপরাধী এক কিশোরীর নাম। এক সময়ের আলোচিত ও
সমালোচিত এক নাম ঐশী রহমান। বাবা-মাকে খুনের দায় নিয়ে ঐশী এখন অপরাধের শাস্তিভোগ
করছে। বর্তমান কাশিমপুর মহিলা কারাগারে দিন যাপন করছে এই কিশোরী অপরাধী।
যদি একটু মুক্তচিন্তায় ভাবা
যায় তাহলে কি দাড়ায়?
বাবা-মায়ের আদরের সন্তান ‘ঐশী’। বাবা পুলিশের
বিশেষ শাখার পরিদর্শক ছিলেন। বাবা-মায়ের সাথে বেশ আনন্দেই কাটছিলো তার জীবন।
কিন্তু কথায় আছে,
‘সৎ সঙ্গে সর্গ বাস
আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। ঠিক এমনটায় ঘটেছে ঐশীর জীবনে।
ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা ঐশী এক সময়
মিশে যায় খারাপ বন্ধুদের মাঝে। শুরু হয় তার জীবনের আরেক নতুন সময়। বেপরোয়া
জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত প্রেম ও মাদক সেবনে ডুবে যায় সে। এতে বাধা দেয় বাবা-মা।
আর তাতেই ক্ষেপে যায় ঐশী। হত্যা করেন বাবা-মা কে।
ঐশীর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে। স্কুলের কথা বলে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে কখনও রাত ১০টা, কখনও
১১টায় ফিরতো। স্কুল ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দিতো ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে। যোগ দিতো ইয়াবা
ও গাঁজার আসরে।
ঐশী ছিল বাবা-মায়ের বড়
মেয়ে। তাই তার সকল আবদার পূরণের চেষ্টা করতেন বাবা-মা। যা চাইতেন তা-ই দেয়ার
চেষ্টা করতেন। ২০১১ সালে ঐশীকে ধানমন্ডির অক্সফোর্ড স্কুলে ভর্তি করে দেন বাবা-মা।
ভর্তির পর স্কুলের গাড়িতেই যাতায়াত করতো ঐশী। মাঝে-মধ্যে রিকশা নিয়ে যেতো।
সেখানে ভর্তির পরই ঐশীর আচরণ ও জীবন-যাপনে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
এক সময় ঐশী ডুবে যায় নেশায়
সমুদ্রে। এর দায়ভার কে নিবে? ঐশী যদি খুন করে অপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে একটা ঐশীকে অপরাধী বানিয়ে কি তারা অপরাধী না? কে প্রশ্নের উত্তর দিবে? হয়তো ফাঁসির দড়ি গলায়
পরবে ঐশী কিন্তু কাদের আমন্ত্রনে ঐশী যেতো নেশার আসরে? আজ
তারা কোথায়? সেই নেশার টেবিলের বন্ধু কি আজ কোন খবর নেয়
বন্ধু ঐশী’র?
কারাগার ও আত্মীয় সুত্রে
জানাগেছে, বর্তমানে ভালো আছে ঐশী। কারাগারে বন্দিদের সাথে ভালোভাবেই জীবন যাপন
করছেন ঐশী। খেলাধূলা ও অনুশোচনার মধ্যেই কাটাচ্ছেন নিজের সময় গুলো।
আড্ডার আসরেই ঐশীর পরিচয় হয়
পুরান ঢাকার ‘ডিজে জনি’ নামে এক
যুবকের সাথে। জনির সঙ্গে কিছুদিন মেলামেশার পর তারই বন্ধু রনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
বাড়ে ঐশীর। এই রনি ও জনির মাধ্যমেই মূলত নেশার জগতে প্রবেশ করে ঐশী। এদিকে তাদের
মাধ্যমে ঐশীর একজন প্রেমিকের খবর পাওয়া যায়, যার নাম
পারভেজ। কিন্তু পারভেজের আর কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের
১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার
পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন মেয়ে ঐশি
গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ওই বছরের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের
দায় স্বীকার করে ঐশি জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে
স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিলো বলে দাবি করে ৫ সেপ্টেম্বর ওই স্বীকারোক্তি
প্রত্যাহারের আবেদন করেন ঐশির আইনজীবীরা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঐশি একাই
মা বাবাকে হত্যা করেন। এর আগে ঐশি মা বাবাকে ৬০টি ঘুমের বড়ি মেশানো কফি
খাইয়েছিলেন। রাসায়নিক পরীক্ষায় ঘুমের ওষুধে নাইট্রাস, টেনিন
ও ট্রমাজিপাম-৩-এর উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া মা স্বপ্না রহমানের ব্রোঞ্জের
রক্তমাখা চুড়ি ও ঐশির রক্তমাখা কাপড়ের রক্তের সঙ্গে ঐশির রক্তের মিল পাওয়া গেছে।
Post A Comment:
0 comments: