‘আল্লাহ ছাড়া
আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ এমনটাই বলেছেন ফাঁসি দড়ি থেকে আর একধাপ দূরে
থাকা জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী।
সোমবার একাত্তরে বুদ্ধিজীবী
হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিজামীর রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি সুপ্রিম
কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে প্রকাশের পর এখন শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে
প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি। তবে তাঁর মন্তব্য থেকে ধারণা করা যায় তিনি প্রাণভিক্ষা
চাইবেন না। তাহলে ফাঁসি কার্যকরে আর কোন বাধা নেই।
এ ব্যাপারে নিজামীর আইনজীবী
তাজুল ইসলাম বলেছেন,
মতিউর রহমান নিজামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম
বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাইলে সরকার যেকোনো সময় নিজামীর রায় কার্যকর
করতে পারবে।
তবে যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে
প্রাণভিক্ষা চান এবং রাষ্ট্রপতি তাঁর আবেদন নাকচ করলে আসামির দণ্ড কার্যকরে আর
কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে এখন শুধু এই একটি ধাপ অনুসরণ
করতে হবে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, নিজামীর
রিভিউ খারিজের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে
কপি যাবে কারাগারে। ইতোমধ্যে র্যাব, পুলিশ ও
কারারক্ষীদের সমন্বয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের বাইরে দুই স্তরের
নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
গত ৬ মে বাংলাদেশ জামায়াতে
ইসলামী গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায়। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের নেতা এম আলম
স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতি বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডের আদেশে নিজামী মোটেই বিচলিত নন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ মে
পরিবারের সদস্যরা নিজামীর সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে, তিনি তাদের বলেন, ‘জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মহান
আল্লাহ আমার মৃত্যুর জন্য যে সময় ও স্থান নির্ধারণ করে রেখেছেন ঠিক সে সময় এবং সে
স্থানেই আমার মৃত্যু হবে।’
নিজামী বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায়
ঘোষণা করছি, প্রাণের মালিক আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়ার
প্রশ্নই আসে না।’
৫ মে নিজামীর রিভিউ খারিজ করে
দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার
সদস্যের আপিল বেঞ্চ এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে
প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন,
‘ডিসমিসড’।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কেরানীগঞ্জে
নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া
হয়েছে। নিজামীর রায় কার্যকরই হতে পারে নতুন কারাগারের প্রথম ফাঁসি।
তবে কোনো কারণে সেখানে ফাঁসির
মঞ্চের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন না হলে বেছে নেয়া হতে পারে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো
কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ। তবে কাশিমপুর কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জে না নিয়ে ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ায় সেখানেই ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা বেশি।
নিজামীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া
মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি চূড়ান্ত রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল
বিভাগ। ১৫ মার্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করেন দেশের এই সর্বোচ্চ আদালত।
ওইদিনই আপিল বিভাগের এই রায়ের কপি পেয়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আর্ন্তজাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমান পরিস্থিতি দেখে অনেকেই
মনে করছেন আজ-কালকের মধ্যেই হয়তো নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। পূর্বে ৪
যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সময়ও এমন পরিস্থিতিই দেখা গিয়েছিলো।
এরআগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বলেছিলেন, সকল প্রক্রিয়ার পরই নিজামীর রায় কার্যকর করা হয়ে। মন্ত্রীর কথা মোতাবেক
সকল প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্ত হয়েছে।
Post A Comment:
0 comments: