এখলাছ
মিয়া : ইস্তানবুল
আতার্তুক
আন্তর্জাতিক
বিমান বন্দর ৷তার্কিশ এয়ার লাইন্সের বিমানটি ল্যান্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অার 'বাবু'র
ভিতরে ভিতরেও অজানা শংকা এসে ভর করছে ৷ নতুন দেশ, অপরিচিত সব, ভাষাটাও অন্যরকম তার
ওপরে সব চেয়ে ভয়ের যে কারণ তা হল 'ভিসা' ৷ তার ভিসাটাও নকল, বডি পাস কন্ট্রাক্ট করেই
বাংলাদেশ থেকে আসা ৷ বিমান ল্যান্ড হলে হাতে থাকা লাগেজ টেনে টেনে পাঁ পাঁ করে যখন ডিপার্চার
গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, ভয়ে তখন বারা বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল ৷ যদি ধরা পড়ে যায়
? ভাগ্যিস, ইমিগ্রেশন অফিসার নাম জিগ্যেস করেই পাসপোর্টে ডিপার্চার সিল দিয়েই পাস দিয়ে
দিলেন ৷ কোন মতে গেট ক্রস করেই লম্বা করে একটা নিশ্বাস নিল বাবু, আপাদত: দুঃশ্চিন্তামুক্ত
হলেও এখন আবার
নতুন চিন্তা, তাকে রিসিভ করতে আসা দালাল পক্ষের লোকজনদের নিয়ে ৷ চুক্তি অনুযায়ী
দালাল পক্ষের লোকজন তাকে রিসিভ করে নির্দিষ্ঠ জায়গায় নিয়ে যাবে আর ওখান থেকে
ক্লিয়ারেন্স পেলে বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষের নিকট রাখা জমা টাকা পরিশোধ হবে ৷ অন্যথায়,
বাবু'র জীবন হুমকীর মুখে পড়বে ৷ চারিদিকে লোকে লোকারণ্য, কত মানুষ, কত গাড়ী অাসে যায়
আর
সে দাঁড়িয়ে থাকে অপলক ৷ এমন সময় কাল গ্লাসওয়ালা বক্স ওয়াগনের একটি গাড়ী থেকে একজন লোককে
নেমে তার দিকে অাসতে দেখে ৷ লোকটি কাছে এসে জিজ্ঞেস করে: বাবু? হ্যাঁ বলে মাথা নাড়াতেই
লোকটি ইশারায় তাকে গাড়ীতে উঠতে বলে ৷ ধূরূ ধূরূ মনে এগুতে তাকে গাড়ীর দিকে, বুঝতে পারে
এই লোক গুলোই দালাল পক্ষের লোক ৷ এয়ারপোর্ট থেকে টানা দু ঘন্টা গাড়ী চালিয়ে একটা ভূতোড়ে
বাড়ির ভিতরে গাড়ীটি ডুকে পড়ে ৷ তাকে আবারও ইশারায় নামতে বলা হয় ৷ নামার পর একটা ঘরে নিয়ে
যাওয়া হলে অসংখ্য বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, আরাবিয়ান ও অন্যান্য জাতির অনেক
লোক সে দেখতে পায় ৷ সবাই কেমন জানি অবাক চোখে তার দিকে তাকাতে থাকে ! পরের দিন সকাল
হতে না হতেই তাকে সুযোগ করে দেওয়া হয় দেশে কথা বলার ৷ উদ্যেশ্য, টাকা পরিশোধ ৷ মার
সাথে কথা হয় তার ৷ এরই মাঝে রোমের ভিতর দু একজন বাংগালীর সাথে কথা হয় ৷ যাদের সাথে
কথা হয় তাদের প্রায় দশ জনের একটা গ্রূপ দু দিন পর রওয়ানা দেবার কথা গ্রীসের উদ্যেশে
৷ সব শর্ত জানার ও বুঝার পর সেও তাদের সাথে চলে যাবে বলে সম্মতি দেয় ৷ ইতিমধ্যে বিকেলে
অারও তিনজন বাংলাদেশী ইরান থেকে পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করে, দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসে
পৌঁছে ইস্তাবুলের এ বাড়িটায় ৷ ওদের কন্ট্রাক্ট টা ছিল সরাসরি ইরান-তুর্কী-গ্রীস ৷ তাই
ওরাও এসে যোগ দেয় এদের দলে ৷ মোট ১৫ জন ৷ গন্তব্য গ্রীস ৷ অাজ ইস্তানবুলের আকাশটা বেশ আলো ঝল মলে ৷
দালালদের কাছে খবর অাসে অাদম গুলোকে আজই নৌকায় ওঠানোর উপযুক্ত সময় ৷ কারণ, এরকম অাবহাওয়াতে
সাগর উত্তাল থাকেনা, নৌকা চালিয়ে অনেকটা সহজে মানুষ সাগর পাড়ি দিতে পারে ৷ দ্রুত জানিয়ে
দেওয়া হয় সবাই যেন তৈরী হয় ৷ আধা ঘন্টার মধ্যেই তাদেরকে নিতে একটা বড় গাড়ী আসবে ৷ ঠিক আধা ঘন্টা পর
বাবু একটি গাড়ী দেখতে পেল, এর ফাঁকে মা-বাবা ও বোনের সাথে এক মিনিট করে কথা বলে নিল
৷ সবাইকে গাড়ীতে উঠার নির্দেশ দেওয়া হলে সুবোধ বালকের মত চুপচাপ সবাই গাড়ীতে উঠে পড়ে
৷ শুধু এত টুকুই জানানো হল: তোমাদেরকে নিয়ে অামরা বদরূম (BODRUM) যাচ্ছি ৷ ওখান থেকেই তোমাদেরকে
নৌকায় করে গ্রীসে পৌঁছানো হবে ৷ বদরুম (Bodrum), তুর্কীর সীমান্ত দ্ধীপ শহরও বলা
চলে ৷ চতুর্দিকে উঁচু উঁচু পাহাড় আর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভূ মধ্যসাগর ৷ ইস্তানবুল থেকে
যার দূরত্ব প্রায় আট
শ কিলো মিটার , গাড়ীতে আসতে প্রায় দশ ঘন্টা সময় লেগে যায় ৷ এপার থেকে ভাল করে তাকালে
ওপারে গ্রীসের অন্যান্য দ্বীপের আলো চোখে পড়ে ৷ তবে যতটা অনুমান করা যায়, আসলে ঠিক ততটা
নয় ৷ দুই দেশের এ দুই দ্ধীপের মাঝ খানের দূরত্ব যেমন অনেক , সাগর পাড়ি দেওয়াটাও খুবই
বিপদজ্জনক ! বাবু,দের গাড়ী পুরো দশ ঘন্টা পর এসে পৌঁছে বদরুনে সবাই তখন ক্লান্তও ক্ষুধার্ত
কারণ: পথিমধ্যে এক মূহুর্তের জন্যও গাড়ী তামানো হয়নি ৷ সবাই ধরা পড়ে যাবে এই ভয়ে ৷
রাতের অন্ধকারে গাড়িটি একটা ছোট গলির ভিতর ডুকে পড়ে ৷ গাড়ী তামার সাথে সাথে দুজন লোক
এসে সবাইকে একটা অন্ধকার ঘরে ডুকিয়ে দেয় ৷ সতর্ক করা হয় কোন আওয়াজ যেন না বের হয় , নইলে গুলি
করে মেরে ফেলবে ৷ এরি মাঝে সাথে থাকা একজনের মোবাইল ফোনে খবর আসে ইস্তানবুল
থেকে দালালরা এই ১৫ জনের সবাই কে কুর্দিশ দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে ৷ তালা
বদ্ধ অন্ধকার রোমে ক্ষুধার যন্রনায় কাতরাতে থাকে লোকগুলো ৷ দুঃশ্চিন্তার সাগরে ডুবে
যায় সবাই ৷ অপেক্ষায় তাকে এই বুঝি কেউ এসে দরজা খোলে নৌকায় তুলে গ্রীসে নিয়ে যাচ্ছে
৷ (চলবে...)
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments: