মোঃ কামরুজ্জামান,ফ্রান্স প্রতিনিধি : ইউরোপে বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক আশ্রয়
লাভের ক্ষেত্রে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন সহ অন্যান্য দেশের মধ্যে ফ্রান্সে
তুলনামূলক সহজ । বিগত
সময়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশী বাংলাদেশী ফ্রান্সে
রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছেন।প্রবাসীদের মতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমস্যা বিদ্যমান থাকার
সুযোগে অনেক ভারতীয় বাংলা ভাষী নাগরিকও বাংলাদেশী পরিচয়ে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ
করেছেন এবং তা অদ্যবধি পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।ভারতীয়দের বাংলাদেশের পরিচয় দেওয়ার যুক্তিসংগত
কারণ OFPRA ভারতকে
৩০শে জুন ২০০৫ তারিখ হইতে
নিরাপদ দেশের তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত করেছেন। যদিও তার অনেক
আগে থেকেই ফ্রান্সে ভারতীয়রা সংখ্যালঘু হিসেবে বাংলাদেশী সেজে আশ্রয় আবেদন করতো, আশ্রয় লাভ করার জন্য। কিন্ত তারা ভারতীয় সংখ্যাগুরু,
বাংলাদেশী সংখ্যালঘু নয়, তারা ভুয়া বাংলাদেশী।
সাধারণত নিরাপদ দেশের তালিকায় থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে OFPRA তাদের
ফাইল নিষ্পত্তি করে দেয় এবং এই তালিকার অন্তুর্ভুক্ত দেশসমুহের আশ্রয়প্রার্থীগণ
সাধারণত ভাতা বা CADA এর বাসস্হান সুবিধা পায় না। তাই
ভারতের সংখ্যাগুরু লোকজন বাংলাদেশের নাগরিক সেজে সংখালঘূ হিসাবে আবেদন করে এবং তারা
অনেক ক্ষেত্রে বৈধতাও পেয়ে যায় । এখানে উল্লেখ্য
যে অফেরাতে ইন্টার্ভিউতে আবেদনকারী সংখালঘু কিনা তা যাচাইয়ের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে
ধর্মীয় বিষয় সঙ্ক্রান্ত প্রশ্ন করে থাকেন। ভারতীয়রা যেহেতু হিন্দু প্রধান দেশের নাগরিক,
তাই এই ক্ষেত্রে তারা সহজেই প্রমাণ করতে পারে যে সে সংখালঘূ সম্প্রদায়ের । তাই এভাবেই ফ্রান্সে
ভুয়া বাংলাদেশীরূপী অধিকাংশ ভারতীয়রা মিথ্যা পরিচয়ে বৈধ হয়ে
যায়। আবার এদের বৈধতা পেয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে
কিছু অসৎ প্রবাসী বাংলাদেশী, এমনটি অভিযোগ অনেক প্রবাসীর। তাদের অভিযোগ এই অসাধু চক্র
শুধু কাগজ পত্রই সরবরাহ করে না, ভারতীয়দের বাংলাদেশের
জন্ম সনদ পর্যন্তও এইসব কুলাংগাররা সরবরাহ করে থাকে এবং তা বাংলাদেশের সরকারী ওয়েব
সাইটেও পাওয়া যায়। তাই একজনের জন্ম সনদ বাংলাদেশ সরকারের ওয়েব সাইটে দেওয়া তথ্যের সাথে
মিললে, সেই ক্ষেত্রে ফ্রান্স কতৃপক্ষের কিছুই করার থাকেনা। তাই প্রবাসীদের উচিত হবে
এই সব দুর্নীতিবাজদের আইনে সোপর্দ করা, যারা ভারতীয়দের বাংলাদেশের বিভিন্ন কাগজ পত্র
সরবরাহ করছেন। একই সাথে ফ্রান্স প্র্রবাসীদের দাবী বাংলাদেশী হিসেবে
যেসকল ভারতীয়রা ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ এবং বর্তমানে আবেদন করেছে, তাদের খুঁজে বের করা এবং ফ্রান্স
তথা সংশ্লিষ্ট দেশের কতৃপক্ষকে তা অবগত করা ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হিসাব মতে প্রায়
৮০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ।যদিও এর সঠিক পরিসংখান
নিয়ে প্রবাসীদের দ্বিমত রয়েছে।কিন্তু এর মধ্যে বের করা প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে কত শতাংশ
বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন। ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশীরা ক্ষোভের সহিত বলেন কিছু অসাধু
ও অসৎ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অর্থের বিনিময়ে ভারতীয়দের সেবা করে যাচ্ছেন। আর ভারতীয়রা
বাংলাদেশী পরিচয়ে ফ্রান্সে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গুলো লাভ করা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন
অপকর্ম করছেন , আর এ দায় পড়ছে বাংলাদেশীদের
উপর এবং এই ভাবে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, আর এই জন্য প্রয়োজন
সরাসরি প্রবাসীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন। মূলত দূতাবাস কর্মকর্তারা সরকারী কোন প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কোন প্রোগ্রামের আয়োজন করেন না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তারা ফ্রান্সে বাংলাদেশীদের অর্থশালিদের কিছু সংগঠন বা তারা যেসব প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন, সেই সব প্রোগ্রামে
অংশ গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এই সব সংগঠনের
সাথে বেশীর ভাগ প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা নাই। দূতাবাসের
কর্মকর্তাদের কাছে প্র্রবাসীদের অনুরোধ তাদেরকে যেন ঐ সব সংগঠনের নেতাদের কাছে তাদেরকে
পণ্য না বানানো হয় । কারণ বেশীর ভাগ সংগঠনের নেতারা দাবী করে থাকে যে, তাদের কল্যাণে
দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসেছেন ।তাই প্রবাসীদের
দাবী শুধু প্যারিস নয় , অন্যান্য শহরে যেখানে
বাংলাদেশীরা বসবাস করেন, সেখানে দূতাবাসের নিজ উদ্যোগে যেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রোগ্রামের
আয়োজন করা হয়।আবার অনেকে মনে করেন, দূতাবাস কোন সংগঠনের সহযোগিতা ছাড়া প্রোগ্রাম করলে সেই প্রোগ্রামে প্রবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করবেন। অনেকে ক্ষোভের
সহিত বলেন কিছু কিছু সংগঠনের নেতারা তাদের সংগঠনের অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আনাকে তাদের নিজস্ব ক্ষমতা
বলে দাবী করে।তাই অনুষ্ঠানের পরও প্রবাসীরা এই সকল কথা শুনে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উপর বিরক্তি ভাব প্রকাশ করে
থাকেন। তাই প্রবাসীদের কল্যাণে দূতাবাসের উচিত
হবে বিভিন্ন শহরে বছরে এক বারের জন্য হলেও দূতাবাসের সেবা
সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। দূতাবাসের সাথে
সরাসরি প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা এবং সু-সম্পর্ক গড়ে উঠলে এরই মাধ্যমে অনেকটা সহজ হবে
সত্যিকার অর্থে কতজন বৈধ এবং কতজন অবৈধ বাংলাদেশী আছেন ।এই ভাবে মিলেমিশে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করলে বাংলাদেশী পরিচয়ে কতজন
ভারতীয় নাগরিক আছেন, এরও একটা ধারণা লাভ করা সম্ভব হবে, এর ফলে ভারতসেবীদের অনেকটা
টনক নড়বে, সাথে সাথে তাদেরকেও শনাক্ত করতে সহজ থেকে সহজতর হবে।
Post A Comment:
0 comments: