জনপ্রিয় ডেস্ক: বিদেশি নেতারা যারা সৌদি বাদশার সঙ্গে দেখা
করেছেন তারা নিশ্চয়ই বাদশার সামনে রাখা বিশাল ফুলটি খেয়াল করেছেন। খুব কাছ থেকে
যারা এই ফুলটি খেয়াল করেছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবেন যে ওটা ফুলের আদলে আসলে একটি
কম্পিউটার। এই কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত আছে একটি টেলিপ্রোম্পটার। কোনো
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা উঠলে ওই টেলিপ্রোম্পটার থেকে বাদশার জন্য তথ্য সরবরাহ
করা হয়। শুধু তাই নয়, শোনা যায় বর্তমান বাদশা নাকি আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত। তাই
তাকে কিছুক্ষন আগেই ভুলে যাওয়া কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যও এই কম্পিউটারটি
ব্যবহার কার হয়।
কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন কূটনৈতিকরা বাদশাহ
সালমানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে দেখা যায়। অন্তত টেলিভিশণ
পর্দায় বিশ্ববাসী দেখতে সমর্থ্য হয়েছেন যে, কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন সৌদি
বাদশাহ। যে সমস্ত ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সামনে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে
সৌদিআরব, সেবিষয়গুলো বেশ কৌশলের সঙ্গেই আলোচনা করেন বাদশাহ। ওই সভায় দেখা যায়,
বাদশাহ কূটনৈতিক দলটির দিকে তাকিয়ে নেই, তিনি তাকিয়ে আছেন একটি বিশাল টেলিভিশন
পর্দার দিকে, যেখান থেকে তাকে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছিল।
পূর্বাঞ্চলীয় নীতি বিষয়ক ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের
বিশেষজ্ঞ সিমন হ্যান্ডারসন এবিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানান। তার ভাষ্য মতে, আলোচনা
অনুষ্ঠানের পাশের কক্ষে একদল দল মানুষ বাদশাহকে যা বলতে হবে তা অতিদ্রুত লিখে
যাচ্ছেন কম্পিউটারে এবং সেই কথা অবিকল পড়ে যাচ্ছেন বাদশাহ ফয়সাল। অবশ্য, বাদশাহ
ফয়সালই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক নন যার এধরণের সমস্যা রয়েছে। এমন কয়েকজন রাষ্ট্রনায়ক
ছিলেন যাদের মূলত চালাতেন তাদের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এপ্রিল মাসের বিশ তারিখে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দু্ই ঘণ্টার বৈঠকে দুই পক্ষই বেশ বুঝতে
পারেন যে, সৌদিআরব-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই। মিত্রতায় ধরেছে অদৃশ্য
এক ফাটল।এটা একটা প্রকাশ্য গোপন ব্যাপার যে সৌদিআরবের মূল কর্তৃপক্ষই হলো বর্তমানে
যুবরাজ মুহাম্মদ বিন নায়েফ এবং তার পুত্র যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু
ক্ষমতার এই শূণ্যস্থান খুব সহজেই আমাকে বুঝতে সাহায্য করে যে, বর্তমান সময়ে
সৌদিআরবের পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে আগামীতে তেল বাণিজ্য প্রভাব ফেলবে। যদিও পাশাপাশি
আরও উপায় খোলা রাখা হয়েছে সেনা মোতায়েন এবং পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্য সফল করা।
সৌদিআরবের অগ্রাধিকার যে পরিবর্তিত হয়েছে ব্যাপারটা তা নয়। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে
যে, অতীতের তুলনায় তারা অধিক ঝুঁকি নিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের আশা করছে।
বাদশাহ সালমান সৌদিআরবের সিংহাসনে বসার পর
থেকেই দেশটি সিরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় এবং ইয়েমেনের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে
নেমে যায়। আর এই দুই যুদ্ধক্ষেত্রেই সৌদিআরব কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট
বাশার আল আসাদের বিরোধী শিবিরকে অস্ত্র এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে ক্ষমতার অংশীদার
হবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধমঞ্চে রাশিয়ার আগমনের পর প্রেসিডেন্ট বাশার
আল আসাদকে উৎখাত করা অনেক কঠিন যায় সৌদিআরবের জন্য। অপরদিকে সৌদি বোমারু বিমান
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় উপর্যুপুরি বোমা হামলা চালিয়েও হুতি বিদ্রোহীদের দমন করতে
পারেনি। এছাড়াও আরব অঞ্চলে আলকায়েদা ইয়েমেনের দক্ষিণ উপকূলে একটি ছোটো স্বঘোষিত
রাজ্য কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে।
সৌদিআরবের নেতারা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে
অন্তত এটা বলার চেষ্টা করছেন যে তারা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় উন্নয়নের
জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষমতা ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এটা
সত্যি যে সাম্প্রতিক সময়ে হোয়াইট হাউসে সৌদিআরব বিরোধী শক্তির আনাগোনা বেশি। কারণ
যুক্তরাষ্ট্র নাইন ইলেভেনের ইস্যুতে যেভাবে গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে
অবস্থান নিয়েছে, সেখানে ওই হামলার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষও জড়িত ছিল এই তথ্য প্রকাশের
পর থেকেই সৌদিআরবকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। অন্তত আটলান্টিক
নিউজে জেফরি গোল্ডবার্গ ওবামা এবং বেশ কয়েকজন উর্দ্বতন কর্মকর্তার সাক্ষাতকার নেন।
সেখানে জেফরি জানান, ‘সমাপ্রতিক সময়ে হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা
কর্মকর্তারা এটা নিশ্চিত করতে পেরেছেন যে, হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে নাইন ইলেভেনে
হামলায় ব্যবহৃত বিমানগুলো ইরান নয় উল্টো সৌদিআরবের নাগরিকরাই ছিনতাই করেছিল।’
কিন্তু সৌদিআরব যদি ভেবে থাকে যে তারা ওবামার হোয়াইট হাউস ত্যাগের অপেক্ষা
করবেন এবং ওবামা চলে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে তাহলে ভুল ভাবছে। কারণ ইতোমধ্যেই
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত থেকে ২৮ পৃষ্ঠার অপ্রকাশিত একটি দলিল প্রকাশের চাপ
আসছে। নাইন ইলেভেনের হামলার পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওই দলিলটি তৈরি করা হয়েছিল। ওই
দলিলেই নাইন ইলেভেনের হামলায় সৌদি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে
জানা যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্পাদক নিকোলাস ক্রিশ্চভ লেখেন, ‘সৌদিআরব বিশ্বজুড়ে ইসলামী চরমপন্থা ও অসহিষ্ণুতার বৈধতা দিচ্ছে। যদি আপনি
ব্রাসেলসে অথবা সান বার্নাডিনোতে বোমা হামলা বন্ধ করতে চান তাহলে সৌদিআরব এবং
অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর ছিদ্রগুলো বন্ধ করুন।’ এটা পরিস্কার বোঝা
যাচ্ছে যে, শুধু হোয়াইট হাউসেই নয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সমাজেও সৌদিআরব বিরোধী
চেতনা বাড়ছে।
বাস্তবতা হলো, নাইন ইলেভেন সংক্রান্ত ওই ২৮
পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটিতে সৌদি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ত থাকার এমন কিছু প্রমাণ
রয়েছে যাতে সৌদি কর্তৃপক্ষের মসনদ টলে যেতে পারে। আর একারণেই দীর্ঘদিন ধরে এই
তদন্ত প্রতিবেদনটিকে লুকিয়ে রাখা হতে পারে। ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া
অনেক ঘটনাই এই প্রতিবেদনে আছে বলে জানা যায়। অন্তত দুইজন সৌদিযুবরাজ যে আক্রমনের
জন্য ওসামা বিন লাদেনকে শতাধিক মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল তার প্রমাণও আছে বলে মনে করা
হচ্ছে। কিন্তু ওই দুই যুবরাজ এখনও বিশ্বের যেখানে চাই সেখানেই ঘুরে বেড়াতে পারছেন।
Post A Comment:
0 comments: