জনপ্রিয় অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মানুষের নিরাপত্তা, অধিকার এবং
গণতন্ত্র এখন লাশবাহী গাড়ীতে। রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকতা জুলহাস মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী
তনয়কে হত্যার নিন্দা জানিয়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা
বলেন। বিবৃতিতে তিনি কাশিমপুর কারাগারের সামনে সাবেক কারারক্ষী
রুস্তম আলীকে গুলি করে হত্যার ঘটনারও নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান।খালেদা জিয়া বলেন, ‘মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের অধিকার, ভোটাধিকার,
নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি-স্বস্তি এখন লাশবাহী গাড়ীতে।’
তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের সহিংস রক্তপাত ঘটানো ছাড়া তাদের টিকে
থাকার অন্য কোনো পথ খোলা নেই। দেশ পরিচালনায় যেহেতু জনগণের সমর্থন নেই সেহেতু
খুন-জখম টিকিয়ে রাখাকেই তারা পরিত্রাণের পথ মনে করছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে যেকোনো হত্যাকাণ্ডকে নিজেদের স্বার্থে অতি অবিশ্বাস্য
কল্পকাহিনী রচনা করা আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্ম। কিছুদিন ধরে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্ম
সম্প্রদায় ও বিদেশি হত্যার ঘটনাগুলোতেও তারা একের পর অপপ্রচার চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার হত্যাকাণ্ডের দোষ বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা
করেছে। ভোটারবিহীন সরকারের এই সমস্ত অপকৌশল মূলত প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া ও
আসল অপরাধীদের আড়াল করা।’
খালেদা বলেন, সরকার প্রধান যতই উচ্চস্বরে
বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করুন না কেন তাভেল্লা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে
জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বি তনয় এবং রুস্তম আলী পর্যন্ত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের
দায় এই সরকারকেই নিতে হবে।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘তিনি যতই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা করুন না
কেন, জাতীয় অর্থনীতির হরিলুট, রাজকোষ চুরির ঘটনা এড়াতে তিনি যতই অপকৌশল করুন না কেন জনগণের দৃষ্টিকে
ঝাঁপসা করতে পারবেন না। তার অপকৌশল বাস্তবায়ন করতে তিনি যতই দূষিত পরিকল্পনা করুন
না কেন ভোটারবিহীন সরকারকে এর জন্য জনগণের নিকট একদিন জবাবদিহি করতেই হবে।’
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরো বিপজ্জনক উল্লেখ
করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আতঙ্কে দিন যাপন করছে। ব্যাংকার, শিক্ষক, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ছাত্র, নারী,
শিশুসহ অনেককেই রাষ্ট্রযন্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে জীবন
দিতে হয়েছে।’
খালেদা বলেন, ‘সরকার সর্বক্ষেত্রে একচেটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে
গণতন্ত্রের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক
ভারসাম্যকেও চরমভাবে ভেঙ্গে ফেলেছে। সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রের সকল
অঙ্গ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। সুতরাং চারিদিকে অরাজকতারই জয়জয়কার। দেশে হত্যা,
হানাহানি, রক্তপাত, অপহরণ, গুম, মুক্তিপণ
আদায়, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রচন্ড আধিপত্য বিস্তার
করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, মানুষের মুখে টু শব্দ শুনলেই সেই মানুষের টুটি টিপে
ধরার জন্য ধেয়ে আসে রাষ্ট্রযন্ত্র। মনে হয় আমরা যেন একটি পিশাচ দ্বীপে বসবাস করছি।
সুস্থ পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা এখন কেবলমাত্র কবরেই সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণেই
ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা উৎসাহিত হয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে, ব্যালট পেপারে বেপরোয়া সীল মারে এবং অস্ত্রের মুখে
ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়; খুন-জখমসহ নানাবিধ
অনাচারে লিপ্ত থেকে দেশকে অতল গহব্বরের দিকে ঠেলে দেয়। তাই দেশে শান্তি প্রিয়
সাধারণ মানুষ এখন আর স্বাভাবিক মৃত্যুর আশা করে না।’
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু
সাংবাদিক মাহবুব রাব্বী তনয় এবং কারারক্ষী রুস্তম আলীকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার
করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
এছাড়াও তিনি নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের
প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
Post A Comment:
0 comments: