অনলাইন ডেস্ক : তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে চায় বিশ্বের বৃহত্তম তেল
উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব। আর এ লক্ষ্যে এখন বিকল্প অর্থনীতির খোঁজে দেশটি। লক্ষ্য
বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সোমবার ‘সৌদি ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
এই রূপকল্প বাস্তবায়নে একটি পরিকল্পনাও অনুমোদন দিয়েছেন সৌদি বাদশা সালমান। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল কোম্পানি আরামকো’র শেয়ার বিক্রি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল গঠন এবং তেল
ছাড়া অন্য খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধিসহ আরো কয়েকটি পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন ব্লুমবার্গকে দেয়া দুটি সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনার কিছু অংশ
তুলে ধরেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
শেয়ার বাজারে
আরামকো
এখন পর্যন্ত যদিও আরামকোর মোট মূল্যমান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা
করা হয়, কোম্পানিটির মূল্য দুই ট্রিলিয়ন ডলারের
বেশি হবে। কোম্পানিটিকে প্রাথমিক পুঁজি বাজারে আনতে চাচ্ছে সৌদি আরব। মোহাম্মদ বিন
সালমান বলেন, ‘আরামকোর বেশকিছু লাভজনক দিক থাকবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে
স্বচ্ছতা। প্রতি তিন মাস অন্তর জানানো হবে আরামকোর আয়।’ তিনি আরো জানান, সৌদি আরবের বিভিন্ন ব্যাংক, অর্থনৈতিক
বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক ব্যাংক এবং থিংক ট্যাঙ্কগুলো
পর্যবেক্ষণ করবে আরামকোর কার্যক্রম।
বিনিয়োগ তহবিল গঠন
আরামকো এবং সৌদি রিয়েল এস্টেটসহ দেশটির সব রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে তারা গঠন
করতে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিনিয়োগ তহবিল। এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা
করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শহর ‘কিং আবদুল্লাহ
ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট’ হবে বিনিয়োগ তহবিলটির সদর দপ্তর।
সামরিক কারখানা
বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সামরিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও
স্বাবলম্বী হতে চাইছে সৌদি আরব। প্রয়োজনীয় অস্ত্র দেশেই তৈরির লক্ষ্যে আগামী বছরের
শেষ নাগাদ থেকে একটি সামরিক অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানি গঠন করবে দেশটি। সামরিক বিষয়ে
আগের চুক্তিগুলো পুনরায় পর্যালোচনা এবং এ খাতে অপচয় রোধেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মোহাম্মদ জানান, সামরিক খরচের ৫০ শতাংশই
দেশে করা হবে। এজন্য কাজও শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সামরিক ব্যয়ের
ক্ষেত্রে সৌদি আরবের কিছু সমস্যা আছে। সৌদি ঘাঁটিগুলোতে প্রবেশ করলে দেখা যায়
সেখানকার মেঝেগুলো মার্বেল পাথর খচিত। দেয়ালগুলো খুবই সুসজ্জিত। অথচ আমি মার্কিন
ঘাঁটিতে গিয়ে দেখেছি, সেখানকার উপরিভাগ পাইপ
নির্মিত, মেঝেতে কোনো মার্বেল পাথর এমনকি গালিচাও নেই।
পুরোটাই সিমেন্ট।’
তেলের বিকল্প
অর্থনীতি
সৌদি আরবের নতুন পরিকল্পনা অনুসারে, দেশটির
তার মোট অর্থনীতির ৩৫ ভাগ উৎপাদন করতে চাচ্ছে মধ্যম ও ছোট আকারের শিল্প থেকে।
বর্তমানে এ খাত থেকে আয় হয় ২০ শতাংশ। তেল বাদ দিয়ে অন্য খাত থেকে তারা আয় করতে
চাইছে অন্তত এক ট্রিলিয়ন ডলার। সৌদি নাগরিকদের বেকারত্বের হারও কমিয়ে আনতে চাইছে
তারা। এ হার ১১.৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা সৌদি আরবের।
সরকার ব্যবস্থায়
সংস্কার
অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে রাজনীতিতেও সংস্কার আনার পরিকল্পনা আছে সৌদি আরবের। সরকারি কার্যক্রমের পরিসর বাড়াতে
দেশটির রাজনৈতিক সংস্থা ‘সুপ্রিম কাউন্সিল’ বিলুপ্ত করে ‘কাউন্সিল অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স’ এবং ‘কাউন্সিল অব ইকনোমিক
অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ নামের দুটি সংস্থা গড়ে তুলবে সৌদি সরকার। তবে রাজনৈতিক সংস্কারের
কার্যক্রম ধীরে ধীরে করা হবে বলে জানান মোহাম্মদ।
Post A Comment:
0 comments: