ঢাকা: বাংলাদেশ
আইসিসি’র টেস্ট মর্যাদা
পেয়েছে ১৬ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০০০ সালের ২৬ জুন টেস্ট খেলুড়ে একটি দেশ হিসেবে
স্বীকৃতি পাবার পর নানা ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে বর্তমানে একটি
শক্ত ভিতের ওপর
দাঁড়িয়েছে জাতীয় ক্রিকেট দল।এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর শক্তিশালী টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর
চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখেছে। মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ নামে ছোট্ট ব-দ্বীপের
টাইগারদের সমীহ করেই মাঠে নামতে হয় ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিদের। টাইগারদের
ব্যাটিং-বোলিং শুধু নিজেদের মাঠেই নয়, বিশ্বের যে কোনো
মাঠেই প্রতিপক্ষের ওপর চোখ রাঙায়।বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল আজ যখন এমন একটি
উচ্চতায় পৌঁছে গেছে, ঠিক তখন এদেশের নারী ক্রিকেট দল এই
উচ্চতায় উঠতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। যেন স্বাভাবিক ছন্দে নেই, স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারছেন না নারী ক্রিকেটার। ২০০৭ সালে ক্রিকেটের
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখা বাঘিনীরা আজও যেন সাফল্যের সিঁড়ি হাতরে বেড়াচ্ছেন।অবহেলা
আর সতর্ক দৃষ্টির অভাবেই টাইগ্রেসরা প্রত্যাশানুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না,
সাফল্য খুঁজে পেতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ
নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি শেষ হওয়া ম্যানেজার শফিকুল হক হীরা।
এদেশের নারী ক্রিকেট বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো মাঠ নেই, নেই কোনো
নিজস্ব জিমনেশিয়াম ও ইনডোর। ছেলেদের সঙ্গে ওরা ইনডোর ভাগাভাগি করে। আর যাই হোক
একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের নারী ক্রিকেট দল এভাবে চলতে পারে না। একটি ছোট ইনডোর হলেও
তাদের জন্য সেটি আলাদাভাবে থাকা দরকার। তাছাড়া মেয়েদের বেতনও খুব কম। তাদের কোনো
ব্যাটিং, বোলিং বা কোনো ফিল্ডিং কোচ নেই, নেই কোনো কম্পিউটার বিশ্লেষণ কক্ষ!’সদ্য শেষ হওয়া
আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশ নারী দলের পারফরমেন্স ছিল
খুবই হতাশাজনক। গ্রুপ ‘বি’ তে থাকা
সালমা-জাহানারা’রা গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের একটিতেও জয় পাননি। বেঙ্গালুরুর
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ১৫ মার্চ প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে হারের পর, বাকি তিনটি
ম্যাচেও পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে
হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে।বিশ্বকাপে নারী দলের এমন হতাশাজনক ফলাফলের কারণ
হিসেবে সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক
ম্যানেজার ও বর্তমান টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য হীরা এই বিষয়গুলোকেই দায়ী করলেন। আর
এখন থেকেই যদি বিষয়গুলোর দিকে সতর্ক নজর দেওয়া যায়, তাহলে
ভবিষ্যতে দলটি এমন হারের বৃত্তে আর আটকে থাকবে না বলেও মত তার।এখানেই থেমে থাকেননি
শফিকুল হক হীরা। নিজের পর্যবেক্ষণ ব্যক্ত করেছেন বর্তমান কোচকে নিয়েও। চম্পিকা
গামাগের (লঙ্কান কোচ) অধীনে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ততটা স্বাচ্ছন্দে নেই বলে
জানান তিনি। তার মতে একজন দেশি কোচের অধীনেই টাইগ্রেসরা বেশি স্বাচ্ছন্দে থাকবে।
শুধু তাই নয়, নারী ক্রিকেট দলের জন্য বিদেশি কোচ নাকি
পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই বলে জানান হীরা। তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই
মেয়ে ক্রিকেটারদের জন্য বিদেশি কোচ নেই। আমাদের মেয়েদের জন্য নিজস্ব কোচ থাকলে
দলটি আরও স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবে।’‘শুধু কী তাই? নারী ক্রিকেট দলের নিজম্ব অফিস বলতে
আছে মাত্র দু’টি ছোট কক্ষ। এর একটিতে বসেন নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান ও অন্যটিতে বাদ
বাকি সব দাফতরিক কাজ সম্পন্ন হয়। ক্রিকেটে স্বনামধন্য দেশটির নারী দলের একজন
স্থায়ী ম্যানেজারও নেই!
ক্রিকেট দলের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি অফিস লাগবে। কেননা
বর্তমান অফিসটি ছোট। একজন স্থায়ী ম্যানেজারও তাদের জন্য আবশ্যক। কেননা, বর্তমান চেয়ারম্যানের অধীনে যারা ম্যানেজার হচ্ছেন সবাই ট্যুর বাই
ট্যুর অর্থাৎ একটি দ্বিপাক্ষিক সফর বা টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে তারা দলের জন্য
অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন। দলকে দিয়ে ভালো ফলাফলের স্বপ্ন দেখতে হলে অবশ্যই
একজন স্থায়ী ম্যানেজার লাগবে’- যোগ করেন হীরা।পাশাপাশি বলতে
ভুলেননি মেয়েদের আবাসিক ব্যবস্থার ও ম্যাচ বোনাসের কথাও। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয়
স্টেডিয়াম সংলগ্ন ক্রীড়াপল্লী নামে তাদের আবাসস্থলটি আছে, তা যথেষ্ট মানসম্পন্ন নয় এবং দলটি ম্যাচ জিতলে কোনো ম্যাচ বোনাসও পান
না। হীরা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মেয়েরা যে ক্রীড়াপল্লীতে থাকে তার মান
স্ট্যান্ডার্ড না। ওখানে তাদের খাবারের মান খুবই নিম্ন। এটা আরও উন্নত হতে হবে।
আমাদের মেয়েরা ম্যাচ জিতলে কোনো বোনাস পায় না। এটা ঠিক নয়। ম্যাচ জিতলে ম্যাচ
বোনাস দিতে হবে, যা তাদের পরের ম্যাচগুলো জিততে অনুপ্রেরণা যোগাবে।’ সবশেষে হীরা
জানান, দলটির পেশাদারিত্ব এই মুহূর্তে একবারেই নেই। নেই
কোনো ওয়ার্কিং কমিটিও! যে কমিটি নারী ক্রিকেট দলের লিগ থেকে শুরু করে ট্রেনিং ও
অন্য বিষয়গুলো দেখবে। এসব নারী ক্রিকেটের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায়
বলে বিশ্বাস করেন হীরা। তার মতে, নারী ক্রিকেট দলকে হতে
হবে পেশাদার। তা না হলে তাদের অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। তাছাড়া দলের জন্য একটি
ওয়ার্কিং কমিটি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা গঠিত হবে সাবেক ক্রিকেটারদের সমন্বয়ে।
তারা নারী দলের লিগ, টুর্নামেন্ট থেকে শুরু করে ট্রেনিং ও
খাওয়া দাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখবে। বর্তমান ক্রিকেটায়নের যুগে
বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী দেশের নারী ক্রিকেটের এই দুর্দশা এদেশের ক্রিকেটের জন্য
ভীষণ অবমাননাকর। যে ক্রিকেট দিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বদরবারে নাম উজ্জ্বল করছে,
সেই দেশের নারী ক্রিকেট দলের এমন বেহাল দশা সত্যিই লজ্জার। আর এই
লজ্জা নিবারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অচিরেই যত্নবান হবে বলে বিশ্বাস করেন
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের সদ্য বিদায়ী এই ম্যানেজার।
Post A Comment:
0 comments: