রনি মোহাম্মদ : স্বপ্ন (জাগ্রত স্বপ্ন) রচিত হয়
কল্পনা দিয়ে মন গড়াও বলা যায় আর বাস্তব রচিত হয় চলমান উপলব্ধি দিয়ে। স্বপ্নের অধ্যায়
সহজ সুন্দর, সুখ শান্তি, এবং আনন্দ উল্লাসের অনুভূতিতে পূর্ণ। বাস্তব জীবনে, স্বপ্নের
অধ্যায়ের বিপরীত স্বাদও গ্রহন করতে হয়, যেমন- সহজের সাথে কঠিন,
সুন্দরের সাথে কুৎসিত,
সুখের সাথে দুঃখ ইত্যাদি ইত্যাদি। বাস্তব সাধ সাধ্য গণ্ডির বাহিরে যে স্বপ্ন তা দুঃস্বপ্ন
হওয়ার সম্ভবনাই বেশী। দুঃস্বপ্ন মানেই কি কষ্ট আর হতাশা''....??? শিরিন ফেরদাউসের রুপন্তীর
সেই গল্পের ৪র্থ পর্ব.......... _আরে বারেক তুই...!!!! আফা আমি আপনাকে দূর
থেকে দেখে চিনেছি। তোর বাবা কোথায় ? বাবা এখন আর বৈঠা হাতে নিতে পারে না তাই বাড়িতেই
থাকে। ও তাই..! এই শহরে রুপুন্তির বেড়ে উঠা। রুপুন্তির বাবা এই শহরের কলেজের অধ্যাপক।
বারেক রুপুন্তিদের বাড়ি কাজ করতো।বারেকের বাবা নৌকা চালাত। সেই সুযোগে ছোট বেলায়
রুপু আর তার বড় ভাই রিদন নৌকা করে কত ঘুরেছে। এর জন্য বাবা ভীষন রাগ করতো বারেককে
বহু বার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। হা হা হা।ছোটবেলাটা কত চমৎকার ছিল। তাদের এই
শহরটা ভীষণ সুন্দর । একদিকে যেমন গ্রামের পরিবেশ।অন্যদিকে শহুরে। অভিজাত রেস্তারাঁ,
শপিং মল সবি এখানে আছে। রুপুন্তি এক লাফে নৌকায় উঠে বসল।বারেক বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে
যাচ্ছে। রুপু চোখ বন্ধ করে অর্পনকে ভীষন মিস করছে তার এই একা নৌকা ভ্রমণ এ। অর্পনের
হাতটা খুব সুন্দর। পাশে থাকলে ওর হাতটা ধরে বসে থাকতো।কিন্তু অর্পন নেই ।কেন নেই ?
কেন? কেন সে এমন করে? কেন তাকে এত এড়িয়ে চলে? নাকি সব রুপুর মনের ভূল।হয়তো অর্পন
স্বাভাবিক ভাবেই চলছে রুপুন্তির চাওয়া পাওয়া গুলি খুব বেশী। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ।
রুপুন্তি খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে বাড়ি চলে এল। এখন গিয়েই অর্পনের জন্য রান্না বসাতে
হবে। বাসায় ফিরে রুপুন্তি তড়িঘড়ি করে রান্নার কাজ টা শেষ করে ঘরদোর গুছিয়ে সংসারের
দ্বায়িত্ব টা শেষ করে ফেলল। অর্পন বেশ গুছিয়ে থাকতে পছন্দ করে রান্নার দেরী মানে
অর্পনের হাতে দন্ডিত হওয়া ।আজ বিকেলের কিছু সময় রুপু নিজের জন্য রেখেছিল তাই অর্পনের
পছন্দ অপছন্দের আজ অবহেলা করা যাবে না। নয়তো অর্পন কোন কারনে মুখ, কালো করলে রুপুর
মনে অপরাধবোধ হবে। এটা পতি সেবা নয়, ভালোবাসার সেবা ভালোবাসাকে যত্ন করে আগলে রাখা।একথা
ভাবতে ভাবতে বেড রুমে হেঙ্গার হূকটার দিকে চোখ পড়ল রূপুর। অর্পনের কিছু শার্ট আর গেঞ্জি
ঝূলে আছে। কাছে গিয়ে রুপুন্তি একটা শার্ট হাতে নিয়ে অর্পনের পারফিউম আর ঘামে মিশে
যাওয়া গন্ধ শুঁকে মনের গহীনে ভালো লাগার এক পূলক অনুভব করলো। খুব ইচ্ছা করছে অর্পনকে
জড়িয়ে ধরতে, কথা বলতে, হাসতে কিন্তু অর্পন !!!! কেন যে প্রানের সাথে মিলে না প্রান,কথার
সাথে গায় না গান। কেন ? কেন? কেন ? তবুও.. তবুও... তবুও আমি তোমায় সাধনা করি। তবুও
অপেক্ষায় থাকি। যেদিন তুমি আসবে, বসবে, বলবে সেদিন আমি ও বলবো আমার হাজার হাজার আনন্দ,
সুখ আর অপেক্ষার কথা। আমি জানি অর্পন তুমি আসবেই আসবে। বারান্দায় বসে আছে রুপুন্তি
অপেক্ষায় আছে কখন কলিংবেলটা বেজে উঠবে। রাত ১২ টা এখনও অর্পন আসেনি,আসছেনা ওফ !! কি
যে করবে রুপুন্তি খুঁজে পাচ্ছে না নিরিবিলির এই অপেক্ষার যন্ত্রণা বড্ড অস্বস্তি। চেয়ারে
হেলান দিয়ে রুপুন্তি তাকিয়ে আছে রাস্তার পাশের শিমুল গাছটার ছায়ার দিকে। চেয়ারে বসে
রুপুন্তি যেমন দুলছে ছায়াগুলিও রুপুন্তির মতো দুলছে তবে কি ছায়াগুলিও রুপুন্তির মতো
কিছুর অপেক্ষায় আছে? রাত বাজে ১ টা। কলিংবেলটা বেজে উঠলো রুপুন্তি লাফিয়ে গিয়ে দরজা
খুলে দিল। অর্পণ আজ বাসায় ঢুকেই রুপুর দিকে তাকালো বলল এখনও জেগে আছো? রুপূ একটু চমকে
উঠলো অর্পনের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো আজ অর রূপুকে কিছুটা সময় দেবে। বুকের ভেতর
গহীন পুকূরে আজ টুপটুপ বৃষ্টি ঝরলো ক ফোঁটা। অদ্ভুত এক সুরেলা স্পর্শ রুপুন্তির কানের
কাছে ফিসফিস করে বলল রুপুন্তি তুমি কেমন আছো ? নিঃশ্বাসের নৃত্যন রুপুন্তিকে অর্পনের
প্রতি দ্বিগুন ভালোবাসায় বিহ্বল করে, বিমোহিত করে তুলল ঠোঁটে, চোখে, মুখে অর্পনকে
আলতো করে জড়িয়ে ধরে রুপুন্তি চোখ বন্ধ করে স্বামীর পাশে শুয়ে আছে অপেক্ষায়।আজ হাজার
গল্প ,অভিযোগ ,রাগ,অনুরাগ আর চাওয়া পাওয়ার জলসায় অবসান ঘটবে অপেক্ষার বিচার সভা।
কাল থেকে রুপুন্তি সুখী চিরসূখী। অর্পন আজ জানবে তার রুপন্তীর মনের যন্ত্রণা । বুঝবে
রুপুন্তিকে সে কতটা অবহেলা করে, সে আজ জানবে রুপুন্তি কতটা একা। কতটা, ব্যাথা অর্পনের
অপেক্ষায়। রুপুন্তি জানে, জানে সত্যি জানে অর্পন আজ তাকে প্রতিশ্রুতি দেবে ভালোবেসে
পাশে থাকার। রুপুন্তির মাথাটা অর্পন তার হাতের উপর রেখে বলল তারপর বলো তোমার কি অবস্থা
? কেমন যাচ্ছে? রুপু অভিমানের সুরে বলল আমার খবর তুমি রাখো? না তাকাও? অর্পন হো হো
হো করে হেসে উঠলো বলল তাই নাকি?আর বলো না বিজনেসটা গুছিয়ে নেব কিছুদিনের মাথায় তারপর
যতখুশি কথা বলো ঘুরাঘুরি কর। আজকে একটা বিরাট অর্ডার পেয়েছি বেশিদিন আর নেই আমার অবস্থা
কোথায় চলে যাবে দেখে নিও। আমার ফ্ল্যাট, জমির দলিল সব ঠিকঠাক করে ফেলেছি কে পায় আর
আমাকে এখন আর আমাকে কেউ ছুঁয়ে দেখতে পারবে না।কোথায় আমি আর কোথায় আমার চারপাশ। আজ
মিঃ সুশান্ত এসেছিল ইন্ডিয়া থেকে কথাবার্তা সব পাকা এখন মিঃ সুশান্তের কোম্পানি থেকে
আমরা সরাসরি প্রোডাক্ট পাবো।জানো আমি ভাবছি আগামী কালই একটা ফ্ল্যাট বুকিং দেব কত স্কোয়ার
ফিট ফ্ল্যাট কিনবে ভেবে আমাকে জানাও। রুপুন্তি বলল অর্পন আমি তোমাকে শুধু পাশে চাই।
অর্পন বলল আরেএএ দূর তোমার আছে যত ভগিযগি কথা।পাশেতো আছি এইতো শুয়ে আছি। আর শোন কাল
গোল্ড দোকান গিয়ে দুটো সোনার চুড়ি অর্ডার করে আসবে। রুপুন্তি আবার কিছু একটা বলার
জন্য মুখ খুলতে চাইল অর্পণ বলল এই তোমাকে না বলেছি ফালতু কথা আমার সাথে বলবে না যাও
লাইট টা অফ করে আসো। আরেকটু কাছে আসো বলেই রুপুন্তিকে জড়িয়ে ধরলো অর্পন। অন্ধকারে
রুপুন্তির চোখে ভরে উঠলো জলের ঢেউ। সেই ঢেউয়ে অর্পন স্নান করল। রুপুন্তির বুকে জেগে
উঠলো ভাঙনের খেলা। জমে পাথর হল কথার মেলা। রাতের অন্ধকারে আরেকটা ইচ্ছা, স্বপ্নের,
আনন্দের সমাপন হল। কাফনের জয় পতাকা উড়ে গেল সাদা বকের ডানায়। আর ভেঙ্গে যাওয়াকে নতুন
করে সৃষ্টি করা রুপুর আচরনগত অভ্যাস। তাই হয়তো আজকের ভোরটা( চলবে )।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন