ঢাকা: আতিক রহমান। বাবা
অবসর প্রাপ্ত আর্মি অফিসার,
মা গৃহিনী। বড়ভাই একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি করেন, ছোট বোন এবার অনার্সে পড়ছে। সেও পড়াশোনা শেষ করেছে সম্প্রতি। কী
করবে-আর কী করবে না তা নিয়েই দোটানায় সে। তবে করে না এমন কোন কাজ নেই! একটি
নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি করে আবৃত্তি আর পত্রিকায় টুকটাক লেখালেখি।
অনেক রাত তারপরও
ঘুম আসসে না। এরই মধ্যে ফেসবুকে হঠাৎ করেই নীলাঞ্জনা নামে একটি আইডিতে তার চোখ
আটকায়। দেখতে সুন্দর! হাসিটাই যেন মন কেড়ে নিল তার। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতেই
গ্রহণ। তারপর প্রতিদিনই টুকটাক কথাবার্তা। সখ্যতা গড়ে উঠলো খুব তাড়াতাড়িই। মেয়েটা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কথাবার্তায় দুজন-দুজনার খুব চেনা-জানা হয়ে যায়।
আতিকের সব কিছুই তার পছন্দের। ফেসবুকের পাশাপাশি ফোনেও কথা হয়, হয় কবিতা শোনা। নিজের অজান্তেই আতিক ভালোবাসতে শুরু করে নীলাঞ্জনাকে।
একদিন দুজনই চাইল
দেখা করতে। কথা ছিল বিকেলে শিল্পকলা প্রাঙ্গণে দেখা করবে। নাটক দেখবে একসঙ্গে।
আতিক একটু দ্বিধান্বিত ছিল নীলাঞ্জনা আসবে তো!! হঠাৎ করেই
তার সামনে এসে হাজির নীলা মানে নীলাঞ্জনা। ফর্সা শরীরে কালো একটা শাড়িতে অসম্ভব
সুন্দর লাগছিল তাকে। আতিক এতটাই আশ্চর্য হয়েছিল যে কিছু বলার ভাষাটাও যেন সে
হারিয়েছে। নাটক দেখার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তাকে নিয়ে রিক্সায় করে ঘুরার পরিকল্পনার
কথা জানালো। নীলাও বাক্য ব্যবহার ছাড়াই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। রিক্সা ঠিক হলো
ঘণ্টা হিসেবে। যতদূর চোখ যায় ঘুরবে একসঙ্গে। কিন্তু কোথায় যাবে? কথার ফাঁকে কখন যে, নীলা তাঁর হাতটি বুকের
কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতেই পারেনি আতিক। কাউকে কাছে পাওয়ায় যে এক অব্যক্ত
ভালোলাগা ছুঁয়ে যাচ্ছিল তাদের দুজনের হৃদয়কে!
তবুও অজানা এক
আশঙ্কা, নীলার পরিচিত কেউ যদি দেখে ফেলে! নীলার বাবা পুলিশ কর্মকর্তা। তাছাড়া
তার বাবাও সাক্ষাত জল্লাদ! কেউ দেখলে কী হবে, ভেবেই
অস্থির আতিক। নীলা এই ইতস্ততা দেখে বলেই বসলো, ‘তুমি কী
আমার সঙ্গে ঘুরতে আসতে চাওনি? না বলে দিলেইতো হতো।’
কিন্তু আতিক কিছুতেই তার দুর্বলতার কথা বলতে পারছিলো না। যাক
সন্ধ্যা আসন্ন। কোন অঘটন ছাড়াই দুজন বিদায় নিল! আতিক বাসায় চলে আসল।
এদিকে বাবা আজ কেন
জানি রেখে আগুন হয়ে আছেন! ফ্রেস হয়েই কী করবে চিন্তা করছিল আতিক। এমন সময় দরজায়
কড়া নাড়ার শব্দ! বুকটা ধপ করে উঠল। বাবা নয়তো! চাকরির কোন চেষ্টা না করায়
প্রতিদিনই তাকে কিছু না কিছু শুনতে হয়, তাহলে আজও কী সে রকম কিছু!
ভয়ে-ভয়ে দরজা
খুলতেই তার চোখ যেন কপালে উঠল! এ-কী, তার সামনে যে নীলাঞ্জনা! ভেতর থেকে
বাবা জানতে চাইলো কে এসেছে? তাড়াতাড়ি নীলাকে ঘরে ঢুকিয়ে
দরজা বন্ধ করে দিলো, আর বাবাকে উত্তর দিল ‘কেউনা বাবা’। তাকে কোথায় বসতে দিবে, বা কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না আতিক। এদিকে ঘরে সে একা তারপর আবার
একটি মেয়েও আছে সঙ্গে। যদি কেউ দেখে ফেলে! বাবা দেখলে তো কথাই নেই। আজই ঘর ছাড়া
করবে তাকে।
ঘরে নীলার
উপস্থিতির সময় যতই বাড়ছে ততই যেন কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না আতিক। এই অবস্থা দেখে
নীলা যেন হেসেই খুন! আতিকের উদভ্রান্তের মতো আচরণ নীলার হাসির মাত্রাটা যেন আরো
বাড়িয়ে দিচ্ছিল। নতুন এক ভয় যুক্ত হলো, হাসির শব্দ যদি বাবার কানে যায়?
এ অবস্থায় আতিকের প্রাণ উষ্ঠাগত হওয়ার দশা। হঠাৎ যেন বাবার কন্ঠ
শুনতে পেল সে, মনে হলো যেন তার ঘরের দিকেই আসছেন তিনি।
কোন উপায় না পেয়ে নীলাকে লুকালো ঘরে পর্দার আড়ালে। দরজা খুলতেই বাবার জিজ্ঞাসা,
‘তোর ঘর থেকে মনে হয় মেয়ের হাসির শব্দ শুনলাম?’ তারেকের উত্তর- ‘কই বাবা, না তো।’ বাবা পর্দাটা সরাতে গেলে সে সজোরে
শক্ত করে ধরে থাকলো, যে না সরাতে পারে। ধস্তাধস্তির এক
পর্যায়ে আতিক গালে শক্ত কিছুর স্পর্শ অনুভব করলো, হু তার
বাবা-ই তাকে থাপ্পর মেরেছে। চোখ খুলতেই দেখে, বাবা তার
গায়ের চাঁদরটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতক্ষণে আতিক বুঝতে পারলো- রাতে কোন ফাঁকে যে
ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরই পায়নি সে। তবে এতক্ষণ যা হলো! নীলা, নীলাঞ্জলা!!
পাশে বোনের রুম থেকে ভেসে আসছিল গানের সুর- ভালোবেসে সখি নিভৃতে….। আতিকের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না।
Post A Comment:
0 comments: